প্রয়াগ ইউনাইটেড-১ (কার্লোস)
পুণে এফসি-১ (আরাতা) |
বরুণদেব, ভূমিমা কিংবা ভাগ্যদেবী নন, প্রয়াগের ফেড কাপের অন্তিম যাত্রায় পরম ‘বন্ধু’ হল অক্ষমতা। কেন না বৃষ্টির আশঙ্কা, মাঠের সমস্যা আর গোলের সুযোগের হাতছানি—শনিবারের ম্যাচে কোনওটাই আসল বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি সুব্রত পাল-র্যান্টি-গৌরমাঙ্গী সিংহদের পথে। একই সময়ে শহরের অন্য মাঠে করিম বেঞ্চারিফার সালগাওকর ভাইচুংয়ের ইউনাইটেড সিকিমকে ৩-০ হারানোয় প্রয়াগের সটান ছুটি হয়ে গেল টুর্নামেন্ট থেকে। কিন্তু আসলে বাহাত্তর ঘণ্টার মধ্যে সতেরো কোটি টাকার একটা তারকাখচিত দল ফেড কাপ থেকে ছিটকে গেল শুধুমাত্র নামী-দামী দেশি-বিদেশি ফুটবলারদের বদান্যতায়। আর সেই চরম ব্যর্থতায় প্রয়াগে কোচ সঞ্জয় সেনের ভবিষ্যৎ ঘোর অন্ধকারে।
ম্যাচের শেষ বাঁশি পড়ার আনুষ্ঠানিক কাজটা রেফারি করতেই প্রয়াগের প্রধান স্পনসর-কর্তা বাসুদেব বাগচির বিস্ফোরক মন্তব্য, “হোটেলে ফিরেই গুগুল সার্চ শুরু করে দেব। আগেও বলেছি, এত বড় দলকে কোচিং করাতে সবাই পারে না। আমার কথাই সত্যি হল। এখনই আমাদের নতুন কোচ দরকার।” পরিষ্কার ইঙ্গিত, কলকাতায় ফিরেই সঞ্জয়ের বিকল্প খোঁজার কাজ শুরু হয়ে যাচ্ছে প্রয়াগের। এত দিন যে ক্লাব-কর্তারা কোচের সমর্থনে ছিলেন, এ দিন তাঁরাও হাল ছেড়ে দিচ্ছেন। মাঠে দাঁড়িয়েই প্রয়াগের অন্যতম শীর্ষ কর্তা নবাব ভট্টাচার্য বললেন, “স্পনসররা এত টাকা ঢেলেছে। দল পারফর্ম করতে না পারলে ওদের রাগ তো হবেই। আমি ওদের কোথাও দোষ দেখছি না।”
দল হারলে যাবতীয় দায় নিতে হয় কোচকে। মাদ্রিদ থেকে ময়দান বিশ্বের সর্বত্র একই নিয়ম। হয়তো সে জন্য নিজের কোচিং ভবিষ্যৎ নিয়ে ম্যাচ শেষে সঞ্জয়ের মন্তব্য, “যেটা আমার হাতে নেই, সেটা নিয়ে মন্তব্য করতে চাই না। তবে মাত্র পাঁচটা ম্যাচে কারও দক্ষতার বিচার হয় না।”
মাত্র চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে জেআরডি টাটা স্পোর্টস কমপ্লেক্সের খাটাল মাঠের অবস্থা বদলে যুবভারতীর কৃত্রিম টার্ফ হয়ে যায়নি। তবে সেই মাঠের ‘সৌজন্যে’ই প্রয়াগের প্রথম গোল। এবড়ো-খেবড়ো মাঠে ভিনিথের দুর্বল হেড মাটি স্পর্শ করতেই হঠাৎ আটকে গেল। আর সেই বল সাজিয়ে-গুছিয়ে বাঁ পায়ের শটে গোলের ঠিকানায় পাঠালেন কার্লোস। প্রয়াদের বাকিটা সুযোগ নষ্টের দৃশ্যে ভরা। র্যান্টি একাই তিনটে নষ্ট করলেন। একটা পোস্টে লাগল। একটা বিপক্ষ গোলকিপারের অনবদ্য সেভ। একটা সিটার। র্যান্টির মতো ফুটবলার ফাঁকা গোল পেয়েও গোলকিপারের গায়ে মারছেন বিশ্বাস করা কঠিন!
জীবনে ফেড কাপ না পাওয়া নাইজিরিয়ান গোলমেশিনকে দেখে মনে হচ্ছে, তাঁর ‘অপয়া’ টুর্নামেন্টে এসে গোল করার অভ্যাসটাই হারিয়ে ফেলেছেন। শনিবার প্রয়াগের মরণবাঁচন ম্যাচের টার্নিং পয়েন্টও হয়ে থাকল র্যান্টির সুযোগ নষ্ট। যে সময় মিস করলেন, তখনই গোলের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ছিল প্রয়াগের। কেন না, সেটাই ছিল পুণে এফসি-র ‘ভারতীয়’ আরাতার শেষ মুহূর্তে ১-১ করার অভিশাপ থেকে প্রয়াগের মুক্তি পাওয়ার আগাম উপায়। কিন্তু র্যান্টি তো উদ্ধার করতে পারলেনই না, উল্টে ফেড কাপের আকাশ থেকেই ভোকাট্টা হয়ে গেল তাঁর দল। |