বোমারু বিমানে ফেড কাপে ধ্বংস বাগান
এয়ার ইন্ডিয়া-২ (জুনিয়র, হেনরি)
মোহনবাগান-০
ফেড কাপে গতবার গ্রুপেই বিদায় নেওয়ার পরপরই স্টিভ ডার্বির চাকরি গিয়েছিল। শিলিগুড়িতে সেই টুর্নামেন্টেই সবুজ-মেরুনের ইতিহাসে দ্বিতীয়বার প্রাথমিক পর্ব থেকে বিদায় নেওয়ার পর সন্তোষ কাশ্যপের চাকরি থাকবে কি না তা নিয়েই প্রশ্ন উঠে গেল।
হতাশ কর্তারা উত্তর দেওয়ার অবস্থায় নেই। তবে তাঁর পুরনো দলের কাছে হেরে যাওয়ার পরও হাততালি দিতে দেখা গেল মোহন-কোচকে! নিজের দলের ক্ষুব্ধ কয়েকশো সমর্থকের ব্যারাকিংয়ের সামনেও ম্যাচের পর পড়তে হল সন্তোষকে। শুনতে হল কটূক্তি। হয়তো পরিস্থিতি আন্দাজ করেই সন্তোষ টিমবাসে ওঠার আগে বলে গেলেন, “আমি যদি থাকি তা হলে এই টিমের পারফরম্যান্স আরও ভাল হবে!” টিম পরিচালনার মতই এর পরে তাঁর অপেশাদার মন্তব্য, “আমাদের মাঝমাঠ ভাল খেলেছে। ফরোয়ার্ডরা গোল করতে না পারলে কী করব?” মূলত যাঁর দিকে কোচের তির, সেই ওডাফা ড্রেসিংরুমে ফিরে মাথা চাপড়ে হাউহাউ করে কাঁদছিলেন ফেড কাপ থেকে ছিটকে যাওয়ার যন্ত্রণায়।
চার কোটির দুই কোহিনুর ওডাফা, টোলগে। পনেরো কোটির টিম। বিদেশি ফিজিও-রিহ্যাব স্পেশ্যালিস্টকোনও কিছুরই খামতি রাখেননি কর্তারা। তা সত্ত্বেও দু’ম্যাচে একটিও গোল না করে একদা পয়া টুর্নামেন্ট থেকে লজ্জার বিদায় ঘটল গঙ্গাপারের ক্লাবের। মহালজ্জাকারণ, এয়ার ইন্ডিয়া তো ৭৯ মিনিট দশজনে খেলেও দু’গোলে জিতল।
ওডাফার কান্না। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস
কেন এমন হল? অনুবীক্ষণ যন্ত্রের নিচে ফেললে যা বেরিয়ে আসছেএক) বড় দলকে চালানোর অভিজ্ঞতাহীন কোচের হাতে এ রকম তারকা সমৃদ্ধ দল তুলে দেওয়া। দুই) গত দু’বছরের মতো এ বারও ভাগ্য সঙ্গ দিচ্ছে না বাগানকে। (আজ আটটা সুযোগ পেয়েও গোল এল না। বিপক্ষের বার বা পোস্টে বল লাগল তিনবার)। তিন) দল নির্বাচনে ভুল। সঠিক স্ট্র্যাটেজি তৈরিতে ব্যর্থতা। চার) ফিজিও-রিহ্যাব স্পেশ্যালিস্ট থাকা সত্ত্বেও মরসুমের শুরুতেই এত চোট।
এ দিন দুপুরে কাঞ্চনজঙ্ঘায় সুভাষ ভৌমিকের চার্চিল ৫-১ গোলে মহমেডানকে হারানোয় গ্রুপের পরিস্থিতি যা দাঁড়িয়েছে, তাতে শেষ ম্যাচে মোহনবাগান জিতলেও কোনও লাভ নেই। অঙ্কের হিসেবে ওডাফারা ছাড়া বাকি তিন দলচার্চিল ব্রাদার্স, এয়ার ইন্ডিয়া, মহমেডানের মধ্যে যে কেউ শেষ চারে যেতে পারে।
রহিম নবি-জুয়েল রাজাদের কিছুটা দুর্ভাগ্য, বিমানবাহিনীকে চেপে ধরা সত্ত্বেও কিছুটা খেলার গতির বিরুদ্ধেই প্রথম গোলটা হজম করে বাগান। হেনরির বাড়ানো বলে নিরীহ শট নেন জুনিয়র। সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ইচের গায়ে লেগে বল দিক পরিবর্তন করে গোলে ঢুকে যায়। তার আগেই রেফারি বিষ্ণু চৌহানকে ধাক্কা মেরে লালকার্ড দেখে বেরিয়ে গিয়েছেন এয়ার ইন্ডিয়ার জন ডায়াস। খেলোয়াড় জীবনে বারবার মোহনবাগানকে বিপদে ফেলেছেন গডফ্রে পেরিরা। এয়ার ইন্ডিয়ার কোচ হওয়ার পরেও সবুজ-মেরুন জার্সির বিরুদ্ধে গডফ্রের ‘রাগ’ কমেনি।
অনেক কম রসদ নিয়েও এয়ার ইন্ডিয়া কোচ দল সাজিয়েছিলেন বুদ্ধি করে। টোলগে নেই, গডফ্রে জানতেন ওডাফাকে আটকালেই কেল্লা ফতে। ফলে শুরু থেকেই চক্রব্যূহের মধ্যে বাগানের গোলমেশিনকে ফেলে দিয়েছিলেন তিনি। দেশের সবথেকে দামী স্ট্রাইকারের সঙ্গে সারাক্ষণ লেগে রইলেন একটা বাচ্চা ছেলে-- প্রতীক চৌধুরী। অপ্রত্যাশিত গোলে এগিয়ে যাওয়ার পর অবশ্য স্ট্র্যাটেজি বদলালেন গডফ্রে। হেনরিকে স্ট্রাইকারে রেখে বাকি ন’জনকে নিজেদের বক্সের সামনে এনে ভিড় করিয়ে দিলেন। ফলে ম্যাচের ওপর সত্তর শতাংশ প্রাধান্য রেখেও কাজের কাজ, মানে বিপক্ষের গোল-মুখ খুলতে পারল না বাগান। তার মধ্যেই আবার যাঁর মাধ্যমে আক্রমণ তৈরি হচ্ছিল সেই স্নেহাশিসকেই তুলে নিলেন মোহন-কোচ। সাহস দেখিয়ে ৪-৩-৩ ফর্মেশনে না গিয়ে সন্তোষ পড়ে রইলেন ৪-৪-২-তেই। ওডাফা-নবিরা নিজেদের উদ্যোগেই মরিয়া হলেন। আর সেই সুযোগে প্রতিআক্রমণ থেকে হেনরির গোল। বাগানে আজকের দ্বিতীয় বোমাবর্ষণ। আর তাতেই এ বারের ফেড কাপ থেকে সবুজ-মেরুনকে নিশ্চিহ্ন করে দিল বিমানবাহিনী।
ফেড কাপ চলে গেল। বড় ট্রফি বলতে আর থাকল আই লিগ। সন্তোষের একার হাতে কিন্তু বাগান মোটেই সুরক্ষিত নয়।

মোহনবাগান: অরিন্দম, নির্মল, ইচে, খেলেম্বা, ফেনাই, নবি (মণীশ), জুয়েল, ডেনসন, স্নেহাশিস (মণীশ), সাবিথ (অনিল), ওডাফা।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.