আগামী সপ্তাহে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার রদবদল করতে পারেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। রেলমন্ত্রী মুকুল রায়-সহ তৃণমূল কংগ্রেসের ৬ জন মন্ত্রী গত কাল মন্ত্রিসভার থেকে ইস্তফা দেওয়ার পর আজ রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী। তার পর রেল মন্ত্রকের অতিরিক্ত দায়িত্ব আপাতত কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণ মন্ত্রী সি পি জোশীর হাতে তুলে দেন মনমোহন।
প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় সূত্রে অবশ্য বলা হচ্ছে, তৃণমূল সমর্থন প্রত্যাহারের পর কেন্দ্রের স্থায়িত্ব নিয়ে যে সঙ্কট নেই তা নিয়েই রাষ্ট্রপতির সঙ্গে কথা বলেছেন মনমোহন। কিন্তু সেই যুক্তি সহজপাচ্য হচ্ছে না সকলের কাছে। বরং কংগ্রেস সূত্রেই বলা হচ্ছে, সম্ভাব্য রদবদল নিয়ে প্রণববাবুর সঙ্গে বৈঠক হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর। আগামী ২৬ ও ২৭ তারিখ শ্রীনগর সফরে যাচ্ছেন রাষ্ট্রপতি। ফলে ওই দু’দিন বাদ দিয়ে চলতি সপ্তাহের যে কোনও দিন রদবদল হয়ে যেতে পারে। কারণ ৩০ থেকে পিতৃপক্ষ শুরু হয়ে যাবে। তার আগেই রদবদলের পর্ব সেরে ফেলতে চান মনমোহন। মন্ত্রিসভার সতীর্থদেরও সে ব্যাপারে ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছেন তিনি। আবার কংগ্রেসের আর একটি সূত্র বলছে, সম্ভাব্য এই রদবদল পিছিয়ে দেওয়ার জন্য দলের একটি অংশ সক্রিয়। তাঁরা চাইছেন, পিতৃপক্ষের অবসানে দেবীপক্ষ শুরু হলে তখনই রদবদল করা হোক।
তবে যখনই হোক না কেন মন্ত্রিসভার রদবদল এখন অনিবার্য। কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার ওই রদবদলের সঙ্গে সমন্বয় রেখে কংগ্রেসের সংগঠনেও রদবদল করা হবে। কংগ্রেস সূত্রে বলা হচ্ছে, সম্ভাব্য এই দুই রদবদল পশ্চিমবঙ্গের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তৃণমূল কংগ্রেস এত দিন শরিক দল ছিল। তাই শরিক দল সম্পর্কে কিছুটা সমঝে চলেছে কংগ্রেস। পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে রাজ্য সংগঠনে পরিবর্তন করা হতে পারে। পশ্চিমবঙ্গ থেকে মন্ত্রী করার ব্যাপারে বিবেচনার তালিকায় রয়েছে বর্তমান প্রদেশ সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য, অধীর চৌধুরী, দীপা দাশমুন্সি এবং আবু হাসনত খান চৌধুরীর নাম। সর্বভারতীয় কংগ্রেসের এক সাধারণ সম্পাদকের কথায়, আগে ঠিক ছিল, পশ্চিমবঙ্গ থেকে এক বা দু’জনকে প্রতিমন্ত্রী করা হবে। কিন্তু সনিয়া গাঁধী অন্তত এক জনকে এখন পূর্ণমন্ত্রী করতে চাইছেন।
তবে রদবদবলে স্বরাষ্ট্র, অর্থ, বিদেশ ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের পরিবর্তনের কোনও সম্ভাবনা নেই বলেই মনে করা হচ্ছে। তবে মন্ত্রিসভার কিছু কংগ্রেস নেতাকে সংগঠনের কাজে নিয়ে যাওয়া হতে পারে। এর মধ্যে জয়রাম রমেশ, অম্বিকা সোনি, সুবোধকান্ত সহায়, গুলাম নবি আজাদের নাম রয়েছে। আবার বর্তমান মন্ত্রীদের মধ্যে গুরুত্ব বাড়ানো হতে পারে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ার। সেই সঙ্গে মণীশ তিওয়ারি, মীনাক্ষী নটরাজনদের সংগঠন থেকে সরকারের নিয়ে আসা হতে পারে। কংগ্রেসের অভ্যন্তরীণ এই রদবদলের সম্ভাব্য ছবি এখনও অবস্য পুরোপুরি পরিষ্কার নয়।
তবে এটা পরিষ্কার যে মন্ত্রিসভা থেকে এ বার সরিয়ে দেওয়া হবে পূর্ণ সাংমার কন্যা অগাথা সাংমাকে। পরিবর্তে এনসিপি নেতা তারিক আনোয়ারকে ক্যাবিনেট মন্ত্রী করা হবে। সন্দেহ নেই শরিকদের খুশি করার জন্যই কংগ্রেস যে এই পদক্ষেপ করতে চাইছে। একই কারণে ডিএমকে থেকেও নতুন দু’জনকে মন্ত্রী করা হবে। কংগ্রেসের একটি সূত্র বলছে, আসন্ন রদবদলে লালু
প্রসাদ বা তাঁর দলের কোনও নেতাকে মন্ত্রিসভায় সামিল করানোরও একটা প্রস্তাব রয়েছে। কারণ, আগামী লোকসভা ভোটে ফের লালু-রামবিলাস পাসোয়ানের সঙ্গে হাত মেলাতে পারে কংগ্রেস। সে দিকে তাকিয়ে লালু নিজেও সরকার সামিল হতে আগ্রহী। এ ব্যাপারে সনিয়া-মনমোহন চূড়ান্ত কী সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন তা এ মাসের মধ্যেই স্পষ্ট হয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। |