খুচরো ব্যবসায় বিদেশি বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করানোর জন্য সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডাকার প্রস্তাব থেকে সরে আসছে বিজেপি। লালকৃষ্ণ আডবাণী, নিতিন গডকড়ী, অরুণ জেটলিরা মনে করছেন, বিশেষ অধিবেশনে মনমোহন সরকারই আস্থা প্রস্তাব এনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করতে পারে। সে ক্ষেত্রে কংগ্রেসই বিজেপির পালের হাওয়া কেড়ে নিতে পারে বলে আপাতত তাঁরা রণে ভঙ্গ দিচ্ছেন।
বিজেপি এই দাবি থেকে সরে এলেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মুলায়ম সিংহ যাদব অবশ্য এখনও খুচরো ব্যবসায় বিদেশি বিনিয়োগের বিরোধিতায় সংসদে প্রস্তাব আনার পক্ষে। গত কাল ‘সাম্প্রদায়িক’ বিজেপিকে রুখতে ইউপিএ-কে সমর্থনের কথা ঘোষণা করলেও আজ মুলায়ম জানিয়েছেন, খুচরো ব্যবসায় বিদেশি বিনিয়োগের বিরোধিতায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেস সংসদে প্রস্তাব আনলে তিনি তা সমর্থন করবেন। এমনকী তাঁর দলও এই প্রস্তাব আনতে পারে বলেও দাবি করেছেন মুলায়ম।
মমতাও চান, সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডাকা হোক। তবে এই দাবিতে তিনি সরব হচ্ছেন না। তবে বিশেষ অধিবেশনই হোক বা নভেম্বরের শীতকালীন অধিবেশন, যখনই সংসদ বসবে, তখনই খুচরো ব্যবসায় বিদেশি বিনিয়োগের সিদ্ধান্তের বিরোধিতায় প্রস্তাব আনতে চায় তৃণমূল কংগ্রেস। মমতার বক্তব্য, যখন অধিকাংশ দলই এর বিরুদ্ধে, তখন কেন্দ্র সংসদকে এড়িয়ে এই স্পর্শকাতর সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। সংসদের একটা রীতি আছে। এর আগেও সংসদের বাইরে প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নিয়েই খুচরো ব্যবসায় বিদেশি বিনিয়োগের অনুমতি দিয়েছিল সরকার। কিন্তু রাজনৈতিক বিরোধিতার মুখে সরকারকে সংসদে প্রতিশ্রুতি দিতে হয়, ঐকমত্য না হওয়া পর্যন্ত এই সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখা হবে। কিন্তু নিজের প্রতিশ্রুতি থেকেই সরে আসছে সরকার। আর সেই কারণেই তিনি এর বিরোধিতায় প্রস্তাব আনতে চাইছেন।
মমতা চাইলেও বিজেপি কিন্তু এই ঝুঁকি নিতে সাহস পাচ্ছে না। আডবাণী, গডকড়ী, জেটলিরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে মনে করছেন, তাঁরা যদি বিশেষ অধিবেশনের দাবি জানান, তা হলে কংগ্রেস তথা সরকারের তরফেই সংসদে আস্থা প্রস্তাব নিয়ে আসা হতে পারে। আইনজীবী জেটলির মতে, সরকার সেটা করতেই পারে। কারণ কোনও শরিক দল সমর্থন প্রত্যাহারের পর শাসক দলের নিজের সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণে আস্থা প্রস্তাব নিয়ে আসার অধিকার আছে। সে ক্ষেত্রে মুলায়ম, মায়াবতী থেকে শুরু করে ছোট ছোট দলগুলিও সরকারকে সমর্থন করবে। কারণ সেখানে খুচরো ব্যবসায় বিদেশি বিনিয়োগ নয়, প্রশ্নটা হয়ে দাঁড়াবে সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণের। বিজেপির নেতাদের আশঙ্কা, এক বার যদি মনমোহন সিংহ সরকার আস্থা প্রস্তাব পাশ করিয়ে নিতে পারে, তা হলে তারা হারানো কর্তৃত্ব ফিরে পাবে। সেই আস্থা প্রস্তাব পাশ হয়ে যাওয়াকেই সংস্কারের সিদ্ধান্তে সংসদের সিলমোহর হিসেবে দাবি করে প্রচার চালাবে কংগ্রেস। সব মিলিয়ে বিজেপির সমস্যা বাড়বে বই কমবে না।
মমতা অবশ্য বিজেপি নেতাদের জানিয়েছেন, বিজেপির আনা প্রস্তাবকে সমর্থন করা তাঁর দলের সাংসদদের পক্ষে সম্ভব নয়। তবে তিনি প্রস্তাব নিয়ে এলে বিজেপি তাতে সমর্থন করতে পারে। একই ভাবে মমতার প্রস্তাবকে সমাজবাদী পার্টিও সমর্থন করবে বলে আজ দলের সুপ্রিমো জানিয়ে দিয়েছেন। মুলায়মের ব্যাখ্যা, তিনি সাম্প্রদায়িক শক্তিকে রুখতে সরকারকে সমর্থন করছেন, কিন্তু খুচরো ব্যবসায় বিদেশি বিনিয়োগের সিদ্ধান্তকে সমর্থন করছেন না। তিনি চান সরকার এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করুক। আজ মুলায়ম বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ধর্মনিরপেক্ষ নেত্রী। তিনি যদি প্রস্তাব আনেন, আমরা বিরোধিতা করব না। আমাদের সংসদীয় দলের বৈঠক হবে। সমমনস্ক দলগুলির সঙ্গেও কথা বলব। আমরা মমতাকে সমর্থনই করব। এ-ও হতে পারে যে আমরাও প্রস্তাব আনলাম।” মুলায়ম-পুত্র অখিলেশ আজ বলেন, দেশে সঙ্কটের কথা শুনিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু এর জন্য দেশের জনগণ দায়ী, না শাসকরা?
মুলায়ম যেমন মমতার সঙ্গে আছেন, তেমনই তৃতীয় ফ্রন্টের জল্পনা নতুন করে উসকে দিয়ে আজ তিনি শিরোমণি অকালি দলের নেতা সুখবীর সিংহ বাদলের সঙ্গেও বৈঠক করেছেন। পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী প্রকাশ সিংহ বাদলের পুত্রের সঙ্গে হঠাৎ এই বৈঠকের বিষয়বস্তু নিয়ে অবশ্য দুই নেতার কেউই মুখ খুলতে চাননি। মুলায়ম দাবি করেছেন, এই বৈঠকের সঙ্গে তৃতীয় ফ্রন্টের কোনও সম্পর্ক নেই।
শিরোমণি অকালি দলের তরফেও জানানো হয়েছে, তাঁরা এনডিএ ছেড়ে যাচ্ছেন না। তবে সপা সূত্র বলছে, মুলায়ম লোকসভা নির্বাচনের আগে সব রকম সম্ভাবনাই খোলা রাখতে চাইছেন। সেই কারণে একই সঙ্গে সিপিএম, সিপিআই, তেলুগু দেশম, জেডি (এস)-এর পাশাপাশি মমতা ও এনডিএ-র শরিকদের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছেন। |