অভিজিতের বিরুদ্ধে প্রার্থী নয়
‘যুদ্ধে’র আবহেও সৌজন্য দেখালেন মমতা
জোট ভেঙে গিয়েছে। তাতে দু’পক্ষই মনে করছে, তারা ‘মুক্ত’। কিন্তু এর মধ্যেও রয়ে গেল সৌজন্যের রেশ, যা ধরে রাখলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং। তার একটা দৃষ্টান্ত, জঙ্গিপুরের উপনির্বাচনে প্রণব-পুত্র অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে তৃণমূলের প্রার্থী না দেওয়া (জোট থাকাকালীন সেটাই ঠিক ছিল)। দ্বিতীয়টি দেখল মহাকরণ। মুখ্যমন্ত্রীর কাছে ইস্তফাপত্র দিতে এসে কংগ্রেসের ছয় মন্ত্রী পেলেন উষ্ণ আপ্যায়ন।
অথচ মাত্র ২৪ ঘণ্টা আগেও ছবিটা ছিল অন্য রকম।
শুক্রবার প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে তৃণমূলের ছয় কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পদত্যাগপত্র দিতে গেলে তাঁদের এক কাপ চা-ও দেওয়া হয়নি বলে একটা মৃদু অনুযোগ শোনা গিয়েছিল। কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় তিন বছরেরও বেশি একসঙ্গে থাকার মেয়াদ ফুরিয়ে গিয়েছিল মাত্র পাঁচ মিনিটেই! অথচ আজ রাজ্য মন্ত্রিসভায় ১৬ মাসের ‘সহকর্মীদের’ পদত্যাগপত্র গ্রহণ অনুষ্ঠানে ফিস ফ্রাই, মিষ্টি, চিপস, চা দিয়ে হাসিমুখে আপ্যায়ন করলেন মমতা। তাঁদের সঙ্গে প্রায় আধ ঘণ্টা ধরে নানা বিষয়ে রীতিমতো জমিয়ে আড্ডাও দিলেন। পদত্যাগপত্র নেওয়ার পরেও সদ্য প্রাক্তন সহকর্মীদের মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমার দরজা খোলা। যখন খুশি আসবেন।” কথায়-কথায় এমন ইঙ্গিতও দিলেন যে, ভবিষ্যতে ‘ফিরে আসতে’ চাইলে তাঁরা মন্ত্রিসভাতেও ফিরতে পারেন।
বহু ব্র্যান্ডের খুচরো ব্যবসায় প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ থেকে ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি একাধিক প্রশ্নে কেন্দ্রে কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন সরকারের সঙ্গে গত এক সপ্তাহ ধরে রাজনৈতিক যুদ্ধ চালিয়েছেন মমতা। শেষ পর্যন্ত গত কাল সমর্থন প্রত্যাহার করে নেয় তৃণমূল। তার পরে তৃণমূল নেতৃত্ব স্পষ্ট করে দেন, আগামী দিনে কেন্দ্রের ইউপিএ সরকারের সঙ্গে তীব্র সংঘাতের পথেই হাঁটবে দল। কিন্তু এই ‘যুদ্ধে’র আবহেও ‘দেওয়া কথা’ ভোলেননি মুখ্যমন্ত্রী। দীর্ঘদিন আগেই তিনি প্রণব মুখোপাধ্যায়কে কথা দিয়েছিলেন, অভিজিৎ প্রার্থী হলে তাঁকে সমর্থন করবে তৃণমূল। সাম্প্রতিক বিরোধের মধ্যেও অভিজিতের বিরুদ্ধে প্রার্থী দাঁড় না করানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে মমতা আজ বোঝালেন, কেন্দ্রের উপর থেকে সমর্থন তুললেও অন্যান্য বিষয়ে তিক্ততা বাড়ানো তাঁর উদ্দেশ্য নয়। তাঁর বিরোধিতা বিষয়ভিত্তিক। যে কারণে অভিজিতের বিরুদ্ধে প্রার্থী না দেওয়ার সিদ্ধান্ত ব্যাখ্যা করতে গিয়ে শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় আজ বলেন, “আমরা কথা রাখি।” ‘যুদ্ধের আবহেও’ যে সৌজন্য নষ্ট হবে না, সেটা গত কালই নিজের ‘ফেসবুক’ বার্তায় স্পষ্ট করে দেন মমতা। সেখানে প্রধানমন্ত্রীর নাম না করেও তাঁর বক্তব্যের অংশ উদ্ধৃত করে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে সমালোচনা করেছেন বটে, কিন্তু তা নেহাতই নীতিভিত্তিক। মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ মহলের বক্তব্য, অত্যন্ত সচেতন ভাবেই তিনি এটা করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর মতো দেশের শীর্ষ পদাধিকারীর সম্মান, মর্যাদা যাতে ক্ষুণ্ণ না হয়, সে কারণেই তিনি সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর নাম করে তাঁকে আক্রমণ করেননি।
মমতার হাতে পদত্যাগপত্র দিয়ে বেরিয়ে ‘সদ্য প্রাক্তন মন্ত্রী’ সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, “মনেই হচ্ছিল না যে, পদত্যাগপত্র দিতে গিয়েছিলাম! আন্তরিক, সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে মুখ্যমন্ত্রী অভ্যর্থনা জানিয়েছেন আমাদের।” মুখ্যমন্ত্রী সম্পর্কে মানস ভুঁইয়া বলেন, “উনি বর্ণময় চরিত্র।” তার পরেই বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী আমাদের বলেছেন, সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে আমরা একসঙ্গে কাজ করেছি। মানুষের প্রয়োজনে যে কোনও সময় যোগাযোগ করতেও বলেছেন।”
কংগ্রেসের মন্ত্রীদের সঙ্গে আলাপচারিতায় কখনও মমতা, কখনও মানসবাবুরা নিজের নিজের রাজনৈতিক লড়াইয়ের স্মৃতিচারণ করেছেন। কংগ্রেসের মন্ত্রীরা ছাড়াও মুখ্যমন্ত্রীর ঘরে তখন সদ্য প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সৌগত রায়, রাজ্যের মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, সুব্রত মুখোপাধ্যায়। স্মৃতিচারণে শরিক হন তাঁরাও।
মানসবাবুরা চলে আসার সময় ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে হাসিমুখে তাঁদের ‘নমস্কার’ জানান মমতা। তাঁদের মহাকরণের ভিআইপি লিফট পর্যন্ত পৌঁছে দেন শিল্পমন্ত্রী পার্থবাবু। মহাকরণ থেকে বেরনোর আগে সদ্য প্রাক্তন ও বর্তমান মন্ত্রীরা একে অন্যকে জড়িয়েও ধরেন।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.