দিল্লি: সিংহে সওয়ার হয়ে প্রচারে দল
মাত্র এক মাস আগেও যে সংস্কার ব্রাত্য ছিল কংগ্রেসের অন্দরে, এখন সেই ‘সিংহেই’ সওয়ার হয়েছে দল। আজ কংগ্রেসের শীর্ষ স্থানীয় নেতারা স্পষ্ট করে দিয়েছেন, এই ‘সিংহের’ পিঠ থেকে নামার প্রশ্ন নেই। বরং পরের পর দুর্নীতির অভিযোগে যে নেতিবাচক আবহ তৈরি হয়েছে, তা থেকে ঘুরে দাঁড়াতে ‘ব্র্যান্ড মনমোহনকেই’ এখন পুঁজি করতে চাইছে কংগ্রেস।
গত কাল জাতির উদ্দেশে বক্তৃতায় আর্থিক সংস্কারের পক্ষে সওয়াল করেন প্রধানমন্ত্রী। যুক্তি দিয়ে বোঝান, কেন সংস্কার প্রয়োজন। সেই বক্তৃতায় ছিল অর্থনীতির যুক্তি। আর আজ জনার্দন দ্বিবেদী, দিগ্বিজয় সিংহের মতো দলের প্রথম সারির নেতারা দিলেন রাজনৈতিক যুক্তি। তাঁদের বক্তব্য, নব্বইয়ের দশকে যখন উদারিকরণের দাওয়াই দেন মনমোহন, তখন দেশে ‘সংস্কার’ শব্দটাই ছিল অচেনা। ভীতির যথেষ্ট কারণও ছিল। কিন্তু ‘মনমোহনী দাওয়াই’তে অর্থনীতি কী ভাবে স্বাস্থ্যবান হয়ে উঠতে পারে, বিশ বছরের অভিজ্ঞতায় তা স্পষ্ট।
বিরল হাসি। শনিবার নয়াদিল্লিতে বিজ্ঞান ভবনের একটি অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী। ছবি: পিটিআই
কংগ্রেসকে পাশে পেয়ে প্রধানমন্ত্রীও বলিয়ান হয়ে উঠেছেন। গত কালের পর আজ ফের সংস্কারের পক্ষে সওয়াল করেন তিনি। দিল্লিতে এক সম্মেলনে আজ বলেন, ব্যাঙ্ক ও আর্থিক ক্ষেত্রকে এমন ভাবে কার্যকরী করে তুলতে হবে, যা বিদেশি লগ্নিকারীদের এ দেশে বিনিয়োগে উৎসাহ জোগাবে। পাশাপাশি আর্থিক সংস্কারের কর্মসূচিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে প্রসঙ্গে কোম্পানি আইন পাশ করানোর অঙ্গীকার করেন মনমোহন।
সরকারের শীর্ষ সূত্রে বলা হচ্ছে, রাজনৈতিক বাধা সত্ত্বেও সংস্কারের প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রীর এই ধারাবাহিক বার্তা দেওয়ার মধ্যে কৌশল রয়েছে। তা হল সাহসী মনোভাব দেখিয়ে বাজারকে তেজি রাখা। সেই হিসেবে গত কয়েক দিনে বাজারের গতিপ্রকৃতিও উৎসাহব্যঞ্জক বলেই মনে করছেন প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের কর্তারা।
আবার কংগ্রেসের কৌশল পুরোপুরি রাজনৈতিক। না হলে সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা বোঝাতে মাত্র এক মাস আগে এই মনমোহনই যখন তাঁর দূত করে মন্টেক সিংহ অহলুওয়ালিয়াকে কংগ্রেসের এক কর্মশালায় পাঠিয়েছিলেন, তখন বিরোধিতার মুখে পড়েন তিনি। ভর্তুকি ছাঁটাইয়ের প্রস্তাবে রীতিমতো জুজু দেখেছিল কংগ্রেস। কিন্তু সেই ভয় এখন অনেকটাই ঝেড়ে ফেলেছেন দলের নেতারা। বরং তাঁদের বক্তব্য, প্রধানমন্ত্রী ঝুঁকি নেওয়ায় কিছুটা হলেও লাভ হয়েছে কংগ্রেসের। দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারের গোড়া থেকে উপর্যুপরি দুর্নীতির অভিযোগে জেরবার ছিল শাসক দল। তার সঙ্গে যোগ হয়েছিল শরিক তৃণমূলের বাধা, ফলে নীতি পঙ্গুত্বের গ্রাসে পড়েছিল সরকার। এই নিয়ে দেশে সাধারণ মানুষ থেকে শিল্পমহল তো বটেই, সমালোচনায় দিল্লিকে বিদ্ধ করছিল আন্তর্জাতিক মহলও। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী সংস্কারের পথে ফেরার সাহস দেখানোয় সিআইআই, ফিকি-র মতো শিল্প ও বণিকমহল প্রশংসা করছে। মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্তদের একটা বড় অংশও সরকারকে সাধুবাদ দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে কংগ্রেসের কৌশল হল, শেষমেশ যদি সামগ্রিক ভাবে দেশের আর্থিক পরিস্থিতির উন্নতি হয়, ভর্তুকি ছাঁটাই করে সরকারের কোষাগারও কিছুটা শক্ত ভিতের উপরে দাঁড়াতে পারে, তা হলে বরং সামাজিক প্রকল্পে খরচ বাড়ানো যাবে। আগামী বছরের বাজেটে সেই পদক্ষেপ করা যেতে পারে (ইউপিএ-২ সরকারের সেটাই হবে শেষ পূর্ণাঙ্গ বাজেট)।
কংগ্রেসের এক শীর্ষ নেতার যুক্তি, “প্রধানমন্ত্রী যে ‘পপুলিজম’ করেননি বা জনপ্রিয় নীতি নেননি, তা তো নয়। ইউপিএ-১-এর সময় বৃদ্ধির হার যখন ঊর্ধ্বমুখী ছিল, তখন তিনিও ৭০ হাজার কোটি টাকা কৃষি ঋণ মকুবের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। ফলে অর্থনীতির পরিবেশ শোধরালে তেমন সুযোগ ফের হতে পারে। আগের তুলনায় টাকা শক্তিশালী হচ্ছে। এই ধারা বজায় থাকলে দীপাবলীর সময় ৬টি সংস্থার বিলগ্নীকরণ থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় হবে। আবার আমদানি খরচ কমলে পেট্রোপণ্যের দাম কমতে পারে। খাদ্য সুরক্ষা আইন রূপায়ণেও তৎপর হবে সরকার। আজ সেই ইঙ্গিত মনমোহনও দেন।
তবে রাজনীতির কারবারিদের মতে, ঝুঁকি নেওয়ার নেপথ্যে মনমোহনের ব্যক্তিগত লক্ষ্যও রয়েছে। বছর খানেক ধরে তিনি টের পাচ্ছিলেন যে, ‘ব্র্যান্ড মনমোহনের’ অবমূল্যায়ন হচ্ছে। তাই স্লগ ওভারে এসে আর এক বার নড়েচড়ে বসলেন তিনি। ওষুধে রোগ ধরবে কি না, আর তাতে দলের উপকার হবে কি না, সেটা বলবে ২০১৪-ই।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.