দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলছে। নাৎসি সন্ত্রাসে ক্রমেই কোণঠাসা হয়ে পড়ছে ফ্রান্স। এ রকমই এক সময়ে ফ্রান্সের এক পথচলতি সাইকেল আরোহীকে প্রকাশ্য দিবালোকে গুলি করে খুন করল এক জার্মান সেনা। বাকিরা দেখল। কিন্তু খুনের কারণ বুঝল না।
তার পর কেটে গিয়েছে অনেক গুলো দিন। বহু নাৎসি সেনার মতো সেদিনের সেই সেনাটিও তখন উত্তর লন্ডনের ট্রেন্ট পার্ক ডিটেনশন কেন্দ্রে যুদ্ধবন্দি। হঠাৎই বাকি বন্দি সেনাদের সঙ্গে হালকা মেজাজের আড্ডায় ফ্রান্সের ঘটনাটির কথা ‘সদর্পে’ ঘোষণা করলেন তিনি। বাকিদের প্রশ্ন, “কেন মারলি”? সঙ্গে সঙ্গে তাঁর ভাবলেশহীন উত্তর, “আরে ওর সাইকেলটা দরকার ছিল যে।”
এই পর্যন্ত শুনে মনে পড়তেই পারে ‘শিন্ডলার্স লিস্ট’ ছবিটির কথা। ইহুদিদের উপর নাৎসি বাহিনীর অকথ্য অত্যাচারের কিছু খণ্ড-চিত্র দেখা গিয়েছিল স্টিভেন স্পিলবার্গের এই ছবিটিতে। তবে উপরের গল্পটি কোনও চলচ্চিত্র নয় বা জার্মান সন্ত্রাসের উপর তৈরি হওয়া তথ্যচিত্রেরও দৃশ্য নয়। ১৯৪০ থেকে ১৯৪৫ সালের মধ্যে ব্রিটিশ সেনার হাতে আটক হওয়া এ রকম বহু জার্মান সেনার কথোপকথন গোপন মাইক্রোফোনে ‘রেকর্ড’ করেছিল ব্রিটিশ গোয়েন্দা দফতর। জার্মানদের যুদ্ধের বিশেষ পরিকল্পনাগুলো যাতে জানা যায়, সে জন্যই এই ব্যবস্থা করেছিলেন তাঁরা। কিন্তু তার পরিবর্তে উঠে এসেছে এ হেন অজস্র ‘নৃশংস’ কথোপকথন। দিনকয়েক আগে সেই কথোপকথনগুলিই জার্মান ভাষায় বইয়ের আকারে প্রকাশিত হয়েছিল। সম্প্রতি বইটির ইংরেজি অনুবাদ করা হয়েছে। যা পড়ে স্তব্ধ সাধারণ পাঠক থেকে শুরু করে বিশেষজ্ঞরাও। বীভৎসতায় গেস্টাপো এবং এসএসের মতো নাৎসি সংস্থাকেও হার মানিয়ে দিতে পারে এই সাধারণ নাৎসি সেনারা। অন্তত সে রকমটাই ধারণা বিশেষজ্ঞদের।
আসলে যুদ্ধবন্দি থাকাকালীন নিজেদের মধ্যে রীতিমতো গাল-গল্প করতেন নাৎসি সেনারা। বিশেষত কে কী রকম ভাবে বা ঠিক কতটা আনন্দে ক’টা মানুষ খুন করেছেন, তারই হিসেবনিকেশ চলত সেই আড্ডায়। এবং সে সবের সারমর্ম একটাই। মানুষ খুন করে নাকি খেলাধূলো করার মতো আনন্দ পেতেন নাৎসিসেনারা। সেই আমোদে গা ভাসাতেই নির্বিচারে চলত হত্যালীলা। কখনও কারণ ছাড়াই আবার কখনও বা তুচ্ছ কোনও কারণে।
যেমন সহকর্মীর সঙ্গে কথোপকথনে এক নাৎসি সেনা বলছেন, “আরে মার্কেট স্কোয়্যারে সে দিন অগুনতি মানুষ। গুলি চালিয়ে একদম শেষ করে দিয়েছিলাম ওদের। ভারী মজা লেগেছিল।” সঙ্গে সঙ্গে অন্য সেনা বুক ফুলিয়ে বলতে শুরু করলেন, “আমি অবশ্য বোমা ফেলতেই ভালবাসি। অদ্ভুত আনন্দ হয়। যেন কাউকে সামনে থেকেই গুলি করছি।” তবে নাৎসি সেনারা যে শুধু খুন করেই আনন্দ পেতেন, তা কিন্তু নয়। তাঁদের আমোদের উপকরণ ছিল গণধর্ষণের মতো ‘খেলাও’। এমনকী কী ভাবে এক জন মহিলা গুপ্তচরকে প্রথমে বেধড়ক মারধর, পরে গণধর্ষণ এবং সব শেষে নৃশংস ভাবে খুন করেছিলেন এক দল জার্মান সেনা, তারও বর্ণনা রয়েছে বইটিতে। বেশি কিছু নয়, এক সেনার মুখে ওই ঘটনার বর্ণনার কথা শুনে প্রাণ খুলে হেসে উঠেছিলেন আট জন শ্রোতা।
ঘটনাচক্রে এই শ্রোতাদের প্রত্যেকেই ছিলেন প্রাক্তন নাৎসি সেনা অফিসার। মানুষ খুন যাঁদের অন্যতম খেলা, গণধর্ষণ যাঁদের কাছে হাসির খোরাক। |