জন কিটস-এর নাইটিঙ্গেলে আফিমের ঘোর
ল্পনার সৌন্দর্যে আফিমের রং!
ইংরেজ রোম্যান্টিক কবি জন কিটসের এক নতুন জীবনীতে এমন চাঞ্চল্যকর দাবিই করছেন লেখক নিকোলাস রো। তাঁর দাবি, কিটস আফিমে রীতিমতো আসক্ত ছিলেন। তাঁর জীবন ও সাহিত্যে আফিমের প্রভাবও বেশ জাঁকিয়ে বসেছিল।
ডি কুয়েন্সি-র ‘কনফেশনস অফ অ্যান ইংলিশ ওপিয়াম-ইটার’ বা কোলরিজের ‘কুবলা খানে’র মতো কবিতায় যেমন আফিমের অবদান আছে বলে মনে করা হয়, তেমনই কিটসের ‘ওড অন ইনডোলেন্স’ বা ‘ওড টু নাইটিঙ্গেল’-ও তাই অন্তত নতুন এই জীবনী সে রকমই বলছে। আর সেই সূত্রেই রোম্যান্টিক কবিদের ঘরানায় টমাস ডি কুয়েন্সি, স্যামুয়েল টেলর কোলরিজ, উইলকি কলিন্স এবং পি বি শেলির সঙ্গে কিটসের নামও আফিমখোরদের তালিকায় ঢুকে যাচ্ছে।
রোম্যান্টিকদের নিয়ে অন্য গবেষকরা কি মানছেন নিকোলাসের দাবি? ‘এজ অফ ওয়ান্ডার’-এর লেখক রিচার্ড হোমস এবং ‘আ স্ক্যাটারিং’-এর লেখক ক্রিস্টোফার রিড, দু’জনেই মনে করছেন নিকোলাস তাঁর মত যথেষ্ট বিশ্বাসযোগ্য ভাবেই উপস্থাপিত করেছেন। কিটসের আর এক জীবনীকার অ্যান্ড্রু মোশন তাঁর বইতে লিখেছিলেন, কিটসের ঘনিষ্ঠ বন্ধু চার্লস ব্রাউন কিটসকে আফিমের নেশায় পড়তে বারণ করেছিলেন। অ্যান্ড্রুর মতে, কিটস বন্ধুর কথা মেনে নিয়েছিলেন। কিন্তু নিকোলাস বলছেন, কিটস যে সে কথা মেনেছিলেন, এমন কোনও তথ্যপ্রমাণ নেই। অন্য দিকে মোশন দাবি করছেন, কিটস বন্ধুর কথা রাখেননি, এমনও কোনও তথ্যপ্রমাণ নেই। কোলরিজ এবং তাঁর বন্ধুবান্ধবদের চিঠিপত্রে নিয়মিত আফিম সেবনের কথা যে ভাবে পাওয়া যায়, কিটসের ক্ষেত্রে তা নেই। তবে অ্যান্ড্রু এ কথাও বলছেন, গবেষণা মাত্রই ব্যাখ্যানির্ভর এবং ব্যাখ্যা প্রত্যেকের নিজস্ব। ‘‘আমি আমার মতো করে ব্যাখ্যা খুঁজেছি, নিকোলাস ওর মতো করে খুঁজেছে।”
নিকোলাস কী ব্যাখ্যা দিচ্ছেন তবে? কিটস নিজে ডাক্তারির ছাত্র ছিলেন। আফিমের সঙ্গে তাঁর ওঠাবসা শুরু হয় ১৮১৮ সাল থেকে। কিটসের ভাই টম তখন ক্ষয়রোগাক্রান্ত, মৃত্যুপথযাত্রী। ব্যথা উপশম করার জন্য ভাইকে আফিম খেতে দিতেন কিটস। ভাইয়ের থেকেই ক্ষয়রোগ তাঁর মধ্যেও সংক্রামিত হয় এবং ভাইয়ের মৃত্যুর পর থেকে কিটস নিজেও নিয়মিত আফিম সেবনে অভ্যস্ত হয়ে ওঠেন। ১৮১৯ সালের বিখ্যাত কবিতা, ওড টু নাইটিঙ্গেল-এর ‘হাফ ইন লভ উইথ ইজফুল ডেথ’ বা ‘এম্পটিড সাম ফুল ওপিয়েট টু দ্য ড্রেনস’-এর মতো পংক্তি তারই সাক্ষ্য বহন করছে বলে নিকোলাসের মত। আরও এক ধাপ এগিয়ে তিনি বলছেন, ১৮০২-৪ কালপর্বে ঘোর নেশাসক্ত কোলরিজের জীবন যেমন উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে গিয়েছিল, কিটস সেই রকমই একটা পর্বে পৌঁছন ১৮২০ সাল নাগাদ।
ঘন ঘন মেজাজ পরিবর্তন এবং সম্পর্কের উথালপাথাল, নেশাসক্ত মনের অন্যতম উপসর্গ। কোলরিজ দীর্ণ হয়ে গিয়েছিলেন ওয়র্ডসওয়র্থের শ্যালিকা সারা হাচিনসনের সঙ্গে তাঁর ব্যর্থ প্রণয়ে। কিটসের সঙ্গে ফ্যানি ব্রাউনির সম্পর্কও খুব এলোমেলো হয়ে উঠছিল। সঙ্গে ক্ষয়রোগ তো ছিলই।
নিকোলাস বলছেন, কাহিনির অন্তিম মোচড়টি এল নেপল্স-এর যাত্রাপথে। চিকিৎসার জন্যই চিত্রকর বন্ধু জোসেফ সেভার্ন-কে সঙ্গে নিয়ে নেপলস যাচ্ছিলেন কিটস। জাহাজে কিটসকে আফিম থেকে দেবেন না বলে আফিমের ডিবে লুকিয়ে রেখেছিলেন সেভার্ন। ফলে যন্ত্রণা উপশমের সুযোগ আর পাননি কিটস।
নিকোলাসের দাবি, কিটসের রোগ তখন থেকেই মারাত্মক হয়ে উঠতে থাকে। সেভার্ন লিখেছেন, কিটস তখন দ্রুত মৃত্যু চেয়ে অধীর হয়ে উঠছিলেন। ১৮২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে রোমে মারা যান কিটস। বয়স তখন ২৫।
কবিতায় কল্পনার সৌন্দর্যকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতেন কিটস। সৌন্দর্যই ছিল তাঁর কাছে শেষ সত্য, আর কল্পনার মধ্য দিয়েই তাতে উপনীত হওয়া যায় বলে মনে করতেন তিনি।
সেই কল্পদৃষ্টিতে আফিমেরও যে একটা ভূমিকা ছিল, কিটস ফাউন্ডেশনের অন্যতম সদস্য নিকোলাস রো সে বিষয়ে নিশ্চিত।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.