ছুটিতে ‘দুর্নীতিগ্রস্তরা’
পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাঙ্ককে ফিরিয়ে আনলেন হাসিনা
দ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাঙ্কের লগ্নি ফিরিয়ে আনল বাংলাদেশ। দুর্নীতির অভিযোগ তুলে গুরুত্বপূর্ণ এই প্রকল্পটি ছেড়ে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বিশ্বব্যাঙ্ক। প্রকল্প যত দিন চলবে, তত দিন অভিযুক্ত মন্ত্রী-উপদেষ্টা-অফিসারদের ‘ছুটিতে পাঠানোর’ শর্তও দিয়েছিল। সরকার তা মেনে নেওয়ায় শুক্রবার বিশ্বব্যাঙ্ক জানাল, তারা এই প্রকল্পে বিনিয়োগে তৈরি। বিদেশি ঋণ ও লগ্নি আনতে এ বাংলার শাসকরা যখন উদাসীন, বিশ্বব্যাঙ্কের লগ্নি ফেরাতে দুর্নীতিতে অভিযুক্ত প্রভাবশালী মন্ত্রী-অমাত্যদেরও রেয়াত করলেন না বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
পদ্মার উপরে প্রায় ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এই দ্বিতল সেতুটি নির্মাণে ২৯৭ কোটি ডলার খরচ ধরা হয়েছে, যার মধ্যে ১২০ কোটি ডলার বিশ্বব্যাঙ্কের ঋণ। কিন্তু ২৯ জুন বিশ্বব্যাঙ্ক এই প্রকল্প থেকে সরে যাওয়ার কথা ঘোষণা করে জানায়, দুর্নীতির ‘বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ’ সরকারকে দেওয়া হলেও তারা ব্যবস্থা নেয়নি।
সরকারি সূত্রের খবর, বিশ্বব্যাঙ্ক দুর্নীতির অভিযোগ করেছিল তখনকার যোগাযোগ মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা মসিউর রহমান, সেতু-সচিব মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়া ও বেশ কয়েক জন অফিসারের বিরুদ্ধে। সম্প্রতি মন্ত্রিসভা রদবদলে আবুল হোসেনকে সরিয়ে নতুন যোগাযোগ মন্ত্রী নিয়োগ করা হয়েছে ওবায়দুল কাদেরকে। উপদেষ্টা মসিউর রহমানকে সরানো না হলেও সেতু নির্মাণ সংক্রান্ত সব দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। সচিব ও দাগি অফিসারদেরও বদলি করা হয়েছে। এর পরে প্রধানমন্ত্রীর আর এক উপদেষ্টা গওহর রিজভি একটি প্রতিনিধি দল নিয়ে ওয়াশিংটনে বিশ্বব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দেখা করতে যান। তাঁদের বোঝান, সরকার দুর্নীতির অভিযুক্তদের ‘ছুটিতে পাঠিয়েছে’। এর পরেই বিশ্বব্যাঙ্ক ফের প্রকল্পে ফেরার কথা ঘোষণা করে।
বাংলাদেশে উত্তর ও দক্ষিণাংশের মধ্যে যোগাযোগ মসৃণ করতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ এই পদ্মা সেতু। বিশ্বব্যাঙ্ক ছাড়াও এডিবি ৬১.৫ কোটি, জাইকা ৪০ কোটি এবং আইডিবি ১৪ কোটি ডলার ঋণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। বিশ্বব্যাঙ্ক ১২০ কোটি ডলারের ঋণ দেওয়া থেকে পিছিয়ে যাওয়ায় প্রকল্পটির ভবিষ্যৎই অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। শেষ পর্যন্ত বিদেশি বিনিয়োগ ধরে রাখার স্বার্থে দুর্নীতিতে অভিযুক্ত মন্ত্রী-উপদেষ্টাদের সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তই নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শাসক আওয়ামি লিগের এক নেতার কথায়, এই সিদ্ধান্ত নেওয়াটা মোটেই সহজ ছিল না শেখ হাসিনার। তাঁর কথায়, পশ্চিমবঙ্গের নেত্রীর সঙ্গে বোধ হয় এখানেই তফাত বাংলাদেশের নেত্রীর। কারণ, বিদেশি ঋণ নিয়ে দরবার করলেও জলকরের মতো অনেক শর্ত মানতে চান না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যে তিনি বিদেশি বিনিয়োগ চান, অথচ খুচরো ব্যবসায় বিদেশি বিনিয়োগের বিরোধী। ওই নেতা বলেন, এমনকী এই বিরোধিতা করতে গিয়ে তিনি সমর্থন তুলে কেন্দ্রে সরকার ফেলার মতো চরম পদক্ষেপ করতেও তৎপর হয়েছিলেন। আর বাংলাদেশের নেত্রী সর্বস্ব পণ করে দলীয় স্বার্থের উপরে উঠে ফিরিয়ে আনলেন বিশ্বব্যাঙ্কের বিনিয়োগকে।
বিশ্বব্যাঙ্ক দুর্নীতির অভিযোগ তোলার পরে সরকার ও প্রশাসনকে বিদ্ধ করতে ছাড়েনি বিরোধী বিএনপি। এমনকী সরকারের ইস্তফাও দাবি করেছিল সরকার। তাদের কথায়, এই ঘটনায় বাংলাদেশের মুখে চুনকালি পড়েছে। কিন্তু বিশ্বব্যাঙ্ক ফিরে আসার পরে তারা কিছুটা চুপ। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত অবশ্য আজ বলেন, বিনিয়োগ ফিরিয়ে আনার সঙ্গে সঙ্গে ভাবমূর্তিও ফিরেছে বাংলাদেশের। আর তা সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কঠোর সিদ্ধান্তেই।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.