রেলের জমি ভাড়া নিয়ে সরকারি স্কুল করা হয়েছে। এখন সেই ভাড়ার টাকা চাইছে রেল। তবে সেই টাকা কে দেবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকারা। উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুরের স্টেশন রোড প্রাইমারি স্কুলে ঘটনাটি ঘটেছে। ১৯৬৯ সালে স্কুল স্থাপিত হওয়ার পর এলাকাতে জমি সংক্রান্ত সমস্যা ছিল। সেই সময়ে রেল কলোনি এলাকাতে একটি মাঠেই ওই স্কুল হয়। পরে ১৯৮২ সালে রেলের কাছ থেকে ভাড়ায় জমি নিয়ে স্কুলের কাজ শুরু হয়। স্কুল সূত্রে জানতে পারা গিয়েছে, সম্প্রতি রেল সেই জমির ভাড়া বাবদ (১৯৮২ থেকে ২০১২ পর্যন্ত) ১ লক্ষ ১২ হাজার ৯২২ টাকা চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছে। তবে সরকারি প্রাইমারি স্কুলের সেই টাকা কে দেবে তা নিয়েও ধন্দে রয়েছেন স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকারা। স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা বিউটি সরকার বলেন, “স্কুলের ভাড়ার এত টাকা কে দেবে? বিষয়টি এসআই ও প্রাথমিক শিক্ষা সংসদে জানিয়েছি। এমনকী, পুরো বিষয়টি এলাকার বিধায়ক তথা রাজ্যের জনশিক্ষা ও গ্রন্থাগার মন্ত্রীকেও জানিয়েছি। পর পর তিনটি চিঠি পেয়েছি রেল থেকে।” ইসলামপুরের আলুয়াবাড়ি রোড স্টেশন থেকে ৩০০ মিটার দূরে রেলওয়ের জমিতে রয়েছে ওই স্কুল। বর্তমানে স্কুলে মোট ছাত্রছাত্রী সংখ্যা প্রায় ১৬০ জন। এলাকার পুরাতন পল্লী, মেলার মাঠ, ক্ষুদিরামপল্লি, রেল কলোনি সহ আসে পাশের বেশ কয়েকটি এলাকা থেকে ছাত্র ছাত্রীরা সেখানে পড়তে যায়। তবে রেল স্কুল সরিয়ে দিতে চাইলে পড়ুয়াদের কী হবে তা নিয়েই চিন্তিত অভিভাবকেরা। রেলের কাটিহার ডিভিশনের ডিআরএম অরুণ কুমার শর্মা বলেন, “জমি ভাড়ায় নিয়ে থাকলে টাকা তো দিতেই হবে। তবে পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” ইসলামপুরের বিধায়ক তথা রাজ্যের জনশিক্ষা ও গ্রন্থাগার মন্ত্রী আবদুল করিম চৌধুরী বিষয়টি শুনেছেন। তিনি বলেন, “বিষয়টি স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকারা আমাকে জানিয়েছেন। ওই বিষয়ে রেলকেও চিঠি দিয়েছি। এমনকী, মুখ্যমন্ত্রীকেও জানিয়েছি। আশা করা যায় একটা সমাধান করতে পারব।” এলাকার এক বাসিন্দা পেশায় স্কুল শিক্ষক বিকাশ দাস নিজেও ওই স্কুলে পড়েছেন। তিনি বলেন, “বর্তমানে স্কুলের অবস্থা খুবই খারাপ। একটা বড় ক্লাসঘর রয়েছে। তা সামান্য হাওয়া দিলেই দুলতে থাকে। যে কোনও দিন বড় কোন দুর্ঘটনা ঘটতে পারে স্কুলে। সরকার উচিত রেলের কাছ থেকে জমি নিয়ে স্কুলকে দেওয়া। যাতে স্কুল কর্তৃপক্ষও ঘর ছাত্রদের বসার জন্য ভাল ঘর করতে পারেন।” স্কুল পরিদর্শক থেকে শুরু করে উত্তর দিনাজপুরের প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান সকলেই স্কুলের সমস্যার কথা জানেন। ইসলামপুর চক্রের স্কুল পরিদর্শক অক্ষয় ভট্টাচার্য বলেন, “এত টাকা ভাড়া দেওয়ার মতো ক্ষমতা নেই। স্কুলের ঘরের খারাপ অবস্থার বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।” উত্তর দিনাজপুরের প্রাইমারির চেয়ারম্যান শেখরচন্দ্র রায় সমস্যা মেটানোর চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, “সম্প্রতি স্কুলের তরফে চিঠি পেয়েছি। যখন স্কুল তৈরি হয়, সেই সময়ে ছাত্রছাত্রীদের কথা ভেবে হয়তো ওখানে তা হয়। এখন কী ভাবে সমস্যা মেটানো যায় দেখছি।” |