ফুলহারের উপচে পড়া জলে ঘর ভেসে যাওয়ার পরে গত সোমবার থেকে উঁচু রাস্তায় আশ্রয় নিয়েছেন সুবোধ পরিহার। বৃদ্ধ বাবা সহ পরিবারের ৭ জনের কোনও মতে দিন কাটছে পুরনো ত্রিপলের ছাউনির তলায়। সুবোধবাবু পেশায় দিনমজুর। মাঠ-ঘাট সবই জলে ডুবে থাকায় দিনমজুরি জুটছে না। একবেলা খাবার জোটাতে নাজেহাল হতে হচ্ছে। কিন্তু টানা ছয়দিন ওই দশা চললেও ত্রাণ পাওয়া পরের কথা। প্রশাসনের কেউ তাঁদের খোঁজ নেয়নি বলে অভিযোগ। শুধু সুবোধ পরিহারের পরিবার নয়। মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরের ইসলামপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের অসংরক্ষিত এলাকার দিয়ারা গ্রামে একই ভাবে রাস্তায় আশ্রয় নিয়েছেন খেদু মণ্ডল, সুবল মণ্ডলরা। প্রত্যেকে পেশায় দিনমজুর। কাজ না জোটায় পরিবার নিয়ে একবেলা আধপেটা খেয়ে তাঁদের দিন কাটছে। কিন্তু ত্রাণ জোটেনি। যদিও জেলা প্রশাসনের এক কর্তা জানান, দুর্গতদের জন্য ১০ কুইন্টাল চাল বরাদ্দ করা হয়েছে। কিন্তু ওই চাল এখনও প্লাবিত এলাকায় পৌঁছয়নি কেন? প্রশ্নের উত্তর মিলছে না। গত মাসেও ফুলহারের জলে কয়েক দিন বন্দি ছিলেন ভাকুরিয়া, দিয়ারা, কাওয়াডোল এলাকার বাসিন্দারা। অভিযোগ, ওই সময়ও ত্রাণ জোটেনি। বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে, অসংরক্ষিত এলাকার বাসিন্দা জন্যই কী প্রশাসনের তরফে ত্রাণ বিলিতে এত উদাসীনতা! হরিশ্চন্দ্রপুরের ফরওয়ার্ড ব্লক বিধায়ক তজমূল হোসেন বলেন, “অসংরক্ষিত এলাকা জন্য প্রশাসনের কর্তারা গুরুত্ব দিচ্ছেন না। সেটা না হলে পাঁচ দিন পরেও কেউ দুর্গতদের খোঁজ নেয়নি কেন! যে বাসিন্দাদের ঘর জলে তলিয়েছে তাঁদের ত্রাণ দেওয়ার জন্য বিডিওকে অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু লাভ হয়নি। শুক্রবার পর্যন্ত ত্রাণের ছিটেফোঁটা এলাকায় পৌঁছয়নি।” দিয়ারা এলাকার বাসিন্দা তথা সিপিএমের হরিশ্চন্দ্রপুর-২ পঞ্চায়েত সমিতির সিপিএমের বিরোধী দলনেতা সুধীর যাদব বলেন, “অসংরক্ষিত এলাকা হওয়ার জন্য কেউ গুরুত্ব দিচ্ছে না। এলাকার চার দিকে জল। কাজ নেই। ত্রাণ পেলে মানুষগুলো অন্তত খেয়ে বাঁচত।” ইসলামপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের কংগ্রেস প্রধান গীতা মণ্ডল জানান, প্রশাসনের বরাদ্দ চাল পাওয়া গেলে দুর্গতদের দেওয়া হবে। তিনি বলেন, “প্রশাসনে পলিথিন ও শুকনো খাবারের দাবি জানিয়েছি। তা পাঠানোর আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।” বৃহস্পতিবার এলাকায় যান তৃণমূলের এক দল প্রতিনিধি। তাঁরা ফিরে ত্রাণ নিয়ে দলের জেলা সভানেত্রী নারী ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রীকে ক্ষোভের কথা জানিয়েছেন। বিধায়ক ত্রাণ সমস্যার কথা সেচ মন্ত্রীকে জানান। এর পরে রাতে ১০ কুইন্টাল চাল বরাদ্দ করে প্রশাসন। এদিকে জলস্তর ৬ সেন্টিমিটার কমলেও বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে ফুলহার। সেচ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার ফুলহারের জলস্তর দাঁড়ায় ২৭.৭৪ মিটারে। যা অসংরক্ষিত এলাকায় বিপদসীমা থেকে এবং সংরক্ষিত এলাকায় হলুদসীমা থেকে ৩৯ সেন্টিমিটার বেশি। জেলা সেচ দফতরের এক আধিকারিক জানান, অসংরক্ষিত এলাকায় নদী এখনও বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে। তবে জলস্তর আপাতত স্থিতিশীল। |