জেলার প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়ায় অনিয়মের অভিযোগে শাস্তিপ্রাপ্ত ৩ সিপিএম নেতার ভূমিকা খতিয়ে দেখবে জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদ। পাশাপাশি, তিন নেতাকে সাসপেন্ড করার ঘটনা প্রকাশ্যে আসতে অভিযুক্ত নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তুলে আসরে নেমে পড়েছে কংগ্রেস ও তৃণমূল। সিপিএমের দলীয় রিপোর্টেই যখন তিন নেতাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে এবং তার ভিত্তিতে দলের রাজ্য কমিটি তাদের শাস্তি দিয়েছে, তখন কেন জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদ তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে না, এই প্রশ্ন তুলেছে কংগ্রেস-তৃণমূল। এমনকী, তদন্ত সাপেক্ষে ওই তিন নেতার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিও তুলেছে তৃণমূল। জলপাইগুড়ি জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের চেয়ারম্যান ধর্ত্তিমোহন রায় বলেন, “পুরো বিষয়টি রাজ্য শিক্ষা দফতরকে জানাব। নিয়োগের প্রক্রিয়ায় তিন নেতার কী ভূমিকা ছিল তা দেখে ব্যবস্থা হবে।” তৃণমূলের জলপাইগুড়ি সাংগঠনিক জেলা সভাপতি চন্দন ভৌমিক জানান, জলপাইগুড়ির প্রাথমিক নিয়োগ কাণ্ডের পর্দা ফাঁস করতে সরকারের কাছে নতুন তদন্ত কমিশন তৈরির দাবি জানানো হয়েছে। চন্দনবাবু বলেন, “ওই কমিশন সিপিএম যে নেতাদের শাস্তি দিয়েছে তাদের জেরা করে, নিয়োগে অনিয়ম করার দায়ে ব্যবস্থা নেবে বলে আশা করছি।” যুব কংগ্রেসের জলপাইগুড়ি লোকসভা কমিটির সভাপতি সৈকত চট্টোপাধ্যায় বলেন, “সিপিএম তাদের তিন নেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে। অবিলম্বে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ এই তিন নেতার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন আইনে থানায় অভিযোগ করে তাদের গ্রেফতার করার পদক্ষেপ করুক। এই দাবিতে সোমবার থেকে যুব কংগ্রেস আন্দোলন করবে।” যদিও সিপিএমের জলপাইগুড়ি জেলা সম্পাদক কৃষ্ণ বন্দোপাধ্যায় বলেন, “আমাদের দলে এমন শুদ্ধিকরণ চলতেই থাকে। এটি দলের অন্দরের বিষয়ে. তার ভিত্তিতে বাইরে কোনও আলোচনা হতে পারে না।” শিক্ষা দফতর সূত্রে খবর, ২০১০ সালে জুলাই মাসে জলপাইগুড়িতে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের প্যানেল প্রকাশ হতেই জেলা জুড়ে আলোড়ন পড়ে যায়। তৎকালীন সিপিএমের জেলা সম্পাদক মানিক সান্যালের পূত্রবধূ সহ সিপিএম ও শাখা সংগঠনের প্রথম সারির নেতাদের আত্মীয়দের নাম প্যানেলে থাকায় দলের ভেতরে ও বাইরে তুমুল ক্ষোভ তৈরি হয়। রাজ্য সরকারের তরফে একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়। প্যানেল প্রকাশের একমাসের মধ্যে তৎকালীন জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের চেয়ারম্যানকে বরখাস্ত করে রাজ্য স্কুল দফতর। সংসদের সচিবের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত শুরু করে তাঁর অবনমন ঘটিয়ে বদলি করা হয়। প্যানেলে থাকা ১৫ জন সিপিএম নেতাদের আত্মীয়স্বজনকে সাময়িক সাসপেন্ড করা হয়। পরে শোকজ করা হয় নবনিযুক্ত ৪২৩ জন শিক্ষককে। চলতি বছরে আরও ২ হাজার আবেদনকারীর খাতা পূর্নমূল্যায়ণের জন্য জেলা থেকে সংগ্রহ করে নিয়ে গিয়েছে শিক্ষা দফতর। এই নিয়োগ কাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে সিপিএমের তরফে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক দুই শিক্ষক সংগঠনের সম্পাদক এবং সংসদের কর্মী সংগঠনের সম্পাদককে অভিযুক্ত করে সাসপেন্ড করা হয়েছে। সংসদের একটি সূত্রে জানানো হয়েছে, রাজ্যের ক্ষমতায় থাকালাকলীন গঠিত সিপিএমের দলীয় তদন্ত কমিটি তিন নেতার নামও নিয়োগের প্রক্রিয়ায় যুক্ত করে দেয়। তাঁরাও যে নিয়োগ প্রক্রিয়ার অনিয়মের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তা দিনের আলোর মতো পরিষ্কার। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান ধর্ত্তিমোহন বাবু বলেন, “সরকারি নিয়োগের প্রক্রিয়ায় যে বা যাঁরা অনিয়ম করেছে সকলের বিরুদ্ধেই আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নতুন পদক্ষেপ করা হবে।” |