প্রধান বিরোধী কে, কেতাব ঘেঁটে চর্চা বিধানসভায়
নমোহন সিংহ সংস্কারের ঘড়িতে দম দিলেন । অ্যালার্ম বেজে উঠল রাজ্য বিধানসভায়!
যাবতীয় আপত্তি নস্যাৎ করে প্রধানমন্ত্রী দ্রুত পায়ে আর্থিক সংস্কারের পথে হাঁটতে শুরু করায় ক্ষুব্ধ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রীয় সরকারের থেকে সমর্থন তুলে নিয়েছেন। তৃণমূলের ওই সিদ্ধান্তের অভিঘাতে এ রাজ্যে মমতার মন্ত্রিসভা থেকে সরে দাঁড়াচ্ছে কংগ্রেস। এর পরে মমতার নেতৃত্বাধীন সরকারের সঙ্গেও তাদের বিচ্ছেদ শুধু সময়ের অপেক্ষা। আর অদূর ভবিষ্যতের সেই সম্ভাব্যতা কতটা বদলে দিতে পারে রাজ্য বিধানসভার সমীকরণ, তা-ই এখন জল্পনার কেন্দ্রে! রাজ্যে বিরোধী দলনেতার আসন কি হাতবদল হবে, দেখা দিচ্ছে প্রশ্ন!
বস্তুত, রাজ্যপালের কাছে চিঠি দিয়ে সমর্থন প্রত্যাহারের কথা জানিয়ে দিলে একই সরকারের প্রথমে মন্ত্রিসভার শরিক এবং পরে বিরোধী দল হওয়ার নজির গড়বে কংগ্রেস! এমনিতে তাদের সমর্থনের উপরে মমতার সরকার নির্ভরশীল নয়। কিন্তু রাজ্যপালকে যে হেতু চিঠি দিয়ে তৃণমূলকে সমর্থন করার কথা কংগ্রেস জানিয়েছিল, তাই সমর্থন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তও (দলে সেই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে) আনুষ্ঠানিক ভাবে রাজভবনে লিখিত ভাবে জানিয়ে দিতে চায় তারা। প্রদেশ কংগ্রেসের এক বর্ষীয়ান নেতার কথায়, “সে সব হয়ে গেলে বিধানসভায় চিঠি দিয়ে আমরা প্রধান বিরোধী দলের মর্যাদা চাইব। আমাদের বিধায়ক ৪২ জন। একক বৃহত্তম বিরোধী দল হিসাবে সিপিএমের চেয়ে বেশি। তাই আমাদের দল থেকেই বিরোধী দলনেতা হওয়া উচিত।”
গোল বেধেছে এখানেই! অঙ্কের বিচারে সিপিএমের ৩৯ জন বিধায়কের চেয়ে কংগ্রেস অবশ্যই সংখ্যাগরিষ্ঠ। কিন্তু একা সিপিএম নয়, বহু কাল ধরেই গোটা বামফ্রন্ট পরিষদীয় দল হিসাবে স্বীকৃতি পেয়ে আসছে। সব শরিক ধরে বামফ্রন্টের বিধায়ক সংখ্যা ৬১। তা হলে বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রের আসনে কংগ্রেসের কোনও বিধায়ক এসে বসবেন কেন? প্রশ্ন বাম শিবিরের।
এই প্রশ্ন নিষ্পত্তির দায়িত্ব বিধানসভার আইন বলে স্পিকারের। কিন্তু আনুষ্ঠানিক ভাবে কোনও আবেদন তাঁর কাছে জমা পড়ার আগে এই নিয়ে মন্তব্য করতে রাজি নন স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। বিতর্কে জড়াতে চান না মুখ্য সরকারি সচেতক শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ও। তিনি শুধু এইটুকু বলছেন, “রাজনৈতিক ভাবে কেউ (অর্থাৎ কংগ্রেস) কোনও সিদ্ধান্ত নিলে বিধানসভা চালাতে কোনও অসুবিধা হবে না।” ঘরোয়া ভাবে সব শিবিরেই অবশ্য তৎপরতা শুরু হয়েছে। শোকপ্রস্তাব হয়ে স্বল্পকালীন অধিবেশনের প্রথম দিন মুলতবি হয়ে যাওয়ার পরে শুক্রবার স্পিকার, মুখ্য সরকারি সচেতক এবং বিধানসভার সচিবের মধ্যে ঘরোয়া আলোচনা হয়েছে এই নতুন বিতর্ক নিয়ে। বামফ্রন্টের পরিষদীয় বৈঠকেও প্রসঙ্গটি উঠেছিল। শেষ পর্যন্ত বিরোধী দলনেতা বদলালে বিধানসভার ভিতরে কংগ্রেস ও বামেদের আসন পাল্টাতে হবে।
জল্পনা বাড়তেই শুরু হয়েছে বিধানসভার নথি ঘাঁটা। বিধানসভা পরিচালনার আইনের হ্যান্ডবুকে ১০৯ ও ১১০ পাতায় ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে: বিরোধীদের মধ্যে যে দলের সংখ্যার বিচারে গরিষ্ঠতা থাকবে, তাদের নেতাকেই বিরোধী দলনেতা হিসাবে মানতে হবে। আবার সঙ্গে এ-ও বলা আছে, এই নিয়ে কোনও ‘সংশয়’ দেখা দিলে বিধানসভার স্পিকারই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকারী। বিধানসভায় ১৯৫৭ সালে তৎকালীন স্পিকার শঙ্করদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের যে রুলিং (ব্রিটিশ আমলের ‘মিনিস্টারস অফ দ্য ক্রাউন অ্যাক্ট, ১৯৩৭ সামনে রেখে) বলে জ্যোতি বসু বিরোধী দলনেতা হয়েছিলেন, সেই দৃষ্টান্তও আলোচনায় আসছে। বামফ্রন্টের এক বিধায়ক বলছেন, “এখন বিরোধী দলনেতা সিপিএমের, সহকারী দলনেতা আরএসপি-র এবং সচেতক ফরওয়ার্ড ব্লকের। তার মানে বামফ্রন্ট হিসাবেই যে বিরোধীদের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে, সেটা এই সরকারই মেনে নিয়েছে। এখন আবার একই সরকার বামফ্রন্ট ছেড়ে শুধু সিপিএমকে দল হিসাবে ধরবে কী ভাবে?” খোদ সূর্যবাবুর প্রতিক্রিয়া, “এই নিয়ে আমরা চিন্তিত নই। কোনও আলোচনাও হয়নি।”
কংগ্রেসের বিধায়ক এখন ৪২। জঙ্গিপুর লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় জয়ী হলে নলহাটি বিধানসভা আসনটি শূন্য হয়ে কংগ্রেস নেমে আসবে ৪১-এ। এই জঙ্গিপুরও এখন প্রধান শাসক দলের কাছে ‘ধর্ম-সঙ্কট’! তারই মধ্যে বিরোধী দলনেতার আসন নিয়ে টানাটানি। সূর্যবাবুর জায়গায় কী তবে মানস ভুঁইয়া বা মহম্মদ সোহরাব? দোলাচল কাটাতে হবে কংগ্রেসকে। আবেদন হাতে পেলে সিদ্ধান্ত নিতে হবে স্পিকারকেও। মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ সূত্রের খবর, তিনি চাইছেন কংগ্রেস পুরোপুরিই সমর্থন প্রত্যাহার করে নিক এবং তাদের কাছেই যাক বিরোধী দলনেতার পদ। তাতে সব দিক থেকেই তাঁর ‘দায়’ মুক্তি হয়। এক বাম বিধায়কের কথায়, “ভালই তো! উনিই বেছে নেবেন, কে হবে ওঁর আসল বিরোধী! একেবারে হার ম্যাজেস্টিজ্ অপোজিশন!”
বিরোধী দলনেতার মুকুট যাঁর মাথাতেই থাক, দ্বিমত নেই একটা প্রশ্নেই। ১৮৫ বনাম ১০৩। উত্তাপ বাড়বে বিধানসভার!



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.