মাত্র ২৪ ঘণ্টার ফারাক। দিল্লির পরে আজ, শনিবার কলকাতায় বিচ্ছেদের পালা!
দিল্লিতে শুক্রবার বিকেলেই প্রধানমন্ত্রীর কাছে পদত্যাগ পত্র দিয়েছেন তৃণমূলের কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা। দলের হাইকম্যান্ডের নির্দেশে আজ বিকেলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে পদত্যাগ পত্র দেবেন কংগ্রেসের মন্ত্রীরা। ডিজেলের দাম বৃদ্ধি, গ্যাস সিলিন্ডারের ভর্তুকি ছাঁটাই, এফডিআই-য়ের প্রতিবাদে তৃণমূল মন্ত্রীরা পদত্যাগ করেছেন। এ দিন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্যও পাল্টা বলেছেন, “রাজ্যে আইন-শৃঙ্খলার অবনতি এবং এফডিআই নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জোট ছেড়ে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে কংগ্রেসের মন্ত্রীরা পদত্যাগ করবেন।”
তৃণমূল যেমন ইউপিএ-২ সরকারের উপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করে নিয়ে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়কে চিঠি দিয়েছে, মমতা-সরকারের উপর থেকে তাঁরাও সমর্থন প্রত্যাহার করবেন কিনা তা নিয়ে অবশ্য এ দিন পর্যন্ত প্রদীপবাবুরা কোনও সিদ্ধান্ত নেননি। আজ, বেলা সাড়ে ১১টায় প্রদেশ কংগ্রেস দফতর বিধানভবনে রাজ্যের ছয় মন্ত্রীকে নিয়ে প্রদীপবাবু বৈঠকে বসবেন। কংগ্রেস সমর্থন প্রত্যাহার করলেও মমতা-সরকারের কিছু যাবে আসবে না। প্রদীপবাবু অবশ্য বলেছেন, “আলোচনা করে আমাদের সিদ্ধান্ত হাইকম্যান্ডকে জানানো হবে। দিল্লি যা নির্দেশ দেবে, সেই মতোই আমরা পদক্ষেপ করব।” এ দিন দুপুরেই পশ্চিমবঙ্গে দলের ভারপ্রাপ্ত এআইসিসি-র নেতা শাকিল আহমেদ রাজ্যের কংগ্রেস মন্ত্রী মানস ভুঁইয়াকে ফোন করে পদত্যাগ করার নির্দেশ জানিয়ে দেন। মানসবাবু জানান, এর পরেই পদত্যাগপত্র পেশের সময় জানতে মুখ্যমন্ত্রীর সচিবালয়ে তিনি যোগাযোগ করেন। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী গাইঘাটায় ব্যস্ত ছিলেন। মুখ্যমন্ত্রীর সচিবালয় থেকে বিকেল ৫টায় মানসবাবুদের সময় দেওয়া হয়েছে। মানসবাবু বলেন, “আমাদের মন্ত্রীদের পদত্যাগ পত্র তো মুখ্যমন্ত্রীর হাতেই দিতে হবে। আমরা তৈরি আছি। পদত্যাগ পত্র দিয়ে দেব।” |
বিচ্ছেদের পর্ব শুরু হতেই দুই শরিকের ‘সম্পর্ক’ও তিক্ত হয়ে উঠেছে। তাদের সভাতেও সরকারি-প্রশাসনিকের কোপ পড়তে শুরু হয়েছে। সিঙ্গুরে বিডিও অফিসে আগামী মঙ্গলবার বিক্ষোভ কর্মসূচির অনুমতি চেয়েছিল হুগলি জেলা কংগ্রেস। প্রাথমিক অনুমতিও মিলেছিল। কিন্তু প্রশাসনের তরফে বৃহস্পতিবার চিঠি দিয়ে সভার অনুমতি নাকচ করা হয়েছে বলে এ দিন অভিযোগ করেন প্রদেশ কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নান। তাঁর অভিযোগ, “ওই দিন ওখানে তৃণমূল সভা করবে। ওদের মঞ্চও বাঁধা হচ্ছে। অথচ আমাদের সভা করতে দেওয়া হল না! এটা সরকারের ঔদ্ধত্য। এর বিরুদ্ধে ধিক্কার জানাচ্ছি।” এর প্রতিবাদে আজ হুগলির চুঁচুড়ায় প্রতিবাদ সভা করবে জেলা কংগ্রেস। ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রাজ্যের ব্লকে ব্লকেও কংগ্রেস সরকারের বিরুদ্ধে ধিক্কার-সভা করবে বলে মান্নান জানান। প্রশাসন সূত্রের খবর, মঙ্গলবারই সিঙ্গুর কৃষিজমি রক্ষা কমিটির দিনভর কর্মসূচি রয়েছে সেখানে। একই দিনে দু’টি কর্মসূচি নিয়ে আকচা-আকচি এড়াতেই কংগ্রেসকে সভার অনুমতি দেওয়া হয়নি। কৃষিজমি রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক তথা হরিপালের বিধায়ক বেচারাম মান্না বলেন, “দিনটি স্মরণে ২০০৬ সালের পর থেকেই আমরা নানা কর্মসূচি নিয়ে থাকি। কংগ্রেসের অনেক আগেই প্রশাসনকে আমরা কর্মসূচির কথা জানিয়েছি।”
শরিকি ‘বিচ্ছেদে’র জেরে শিলিগুড়ি, ইংরেজবাজার সহ উত্তরবঙ্গের একাধিক পুরবোর্ডের ভবিষ্যৎ নিয়ে শুরু হয়েছে জল্পনা। ওই পুরসভাগুলিতে কংগ্রেস-তৃণমূল যৌথ ভাবে বোর্ড চালাচ্ছে। যেমন শিলিগুড়িতে মেয়র পদে কংগ্রেস থাকলেও ডেপুটি মেয়র-সহ গুরুত্বপূর্ণ মেয়র পারিষদ তৃণমূলের দখলে রয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে কী করণীয় তা ঠিক করতে উভয় দলের তরফেই জেলা নেতারা এ দিন বৈঠক করেছেন। কিন্তু চূড়ান্ত কোন সিদ্ধান্ত এ দিন হয়নি। মালদহের ইংরেজবাজার ও কোচবিহার পুরসভায় চেয়ারম্যান কংগ্রেসের হলেও ভাইস চেয়ারম্যান পদ তৃণমূলের কাছে রয়েছে। দুই শিবিরের নেতৃত্বই পরিস্থিতির ওপর নজর রেখে পদক্ষেপ করবেন জানিয়েছেন। মালদহের ইংরেজবাজার কংগ্রেস-তৃণমূল জোট করে পুরসভা চালাচ্ছে। তবে পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল ও মেদিনীপুর দু’টি পুরসভায় জোটে ‘বিচ্ছেদের’ আঁচ এ দিন পর্যন্ত লাগেনি।
অবশ্য বিচ্ছেদের আবহাওয়ায় জঙ্গিপুরে তৃণমূল প্রার্থী দেবে কি না, তা নিয়ে জল্পনা তৈরি হয়েছে কংগ্রেস শিবিরে। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি তো বলেই ফেলেছেন, “জঙ্গিপুরে আমাদের প্রার্থীকেই তৃণমূল সমর্থন করুক, সেটাই চাই। নির্বাচন যখন ঘোষণা হয়েছিল, তখন জোট ছিল। জোটধর্ম মেনে আমরাও কিন্তু পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুর, বাঁকুড়া, বসিরহাটের উপনির্বাচনে তৃণমূলের বিরুদ্ধে প্রার্থী দিইনি।”
জঙ্গিপুর নিয়ে তৃণমূল কী করে, এখন সেটাই দেখার। |