|
|
|
|
|
|
|
পুস্তক পরিচয় ৩... |
|
মূল্যায়নও বহুচর্চিত, বৃত্তাকার |
আশিস পাঠক |
শ্রীমান সত্যজিৎ রায়ের শিল্পপ্রতিভা দেখে প্রকাশক দিলীপকুমার গুপ্তের মনে হয়েছিল উত্তরকালে অলংকরণে তিনি বিশেষ সুনাম অর্জন করতে পারবেন। উত্তরকালে চলচ্চিত্রে নাম ভূমিকায় এসেছিলেন সত্যজিৎ। পাশাপাশি কিছুটা বিচ্ছিন্ন ভাবেই চলেছিল তাঁর বহুমুখী গ্রাফিক শিল্প অজস্র বইয়ের প্রচ্ছদ, ভিতরের অলংকরণ, পত্রিকার হেডপিস, নামলিপি, বিজ্ঞাপন, চলচ্চিত্রের প্রচারশিল্প সব অর্থেই।
কিন্তু বিপুলা সে পৃথিবীর কতটুকু জানি? জয়ন্তী সেনের সদ্যপ্রকাশিত লুকিং বিয়ন্ড: গ্রাফিক্স অব সত্যজিৎ রায় (লুস্তর প্রেস/রোলি বুকস, মূল্য অনুল্লেখিত) পড়তে পড়তে সেই প্রশ্নটাই বার বার উঠছিল। মনে হচ্ছিল এ কথাও যে, চলচ্চিত্রে সত্যজিতের আকাশছোঁয়া নাম বলে তবু তো তাঁর গ্রাফিক শিল্প নিয়ে কিছু বই প্রকাশিত হয়, অন্নদা মুন্সী, পূর্ণেন্দু পত্রী, রঘুনাথ গোস্বামীর মতো গ্রাফিক শিল্পীদের কাজ তো প্রায় হারিয়েই গেল।
প্রায় বাইশ বছর আগে দিল্লিতে অনুষ্ঠিত ‘দি আদার রে’ প্রদর্শনীর সূত্রে বিষয়টি নিয়ে নানা জনের লেখার একটি দ্বিভাষিক সংকলন (আর্ট অব সত্যজিৎ রায়/শিল্পী সত্যজিৎ) সম্পাদনা করেছিলেন জয়ন্তী। তখন থেকেই তাঁর এই চর্চার শুরু। ‘চর্চা’ শব্দটা অবশ্য সুভাষণ। কারণ সংগ্রহ-প্রবণতা যত, বুঝতে চাওয়া সে তুলনায় প্রায় শূন্য এ বইয়ে। কলাভবন থেকে শুরু করে ডি জে কিমার, সিগনেট, সন্দেশ, এক্ষণ, সিনেমার প্রচারচিত্র ধারাবাহিক দেখেছেন লেখক, নিছক বর্ণনা দিয়েছেন তার। আর মূল্যায়ন যেটুকু তা-ও বহুচর্চিত, বৃত্তাকার।
ছবি আছে প্রচুর, কিন্তু তার অনেকটাই এর আগে বহু বইয়ে (বিশেষত, শান্তি দাস সম্পাদিত রে: অ্যান ইন্টিমেট মাস্টার, পরিমল রায় ও সন্দীপ রায়ের সংগ্রহ থেকে ভিশন অব রে: সিনে পোস্টার্স অ্যান্ড বিয়ন্ড) দেখেছি। মুদ্রণেও দু-একটি ডুবিয়েছে। যেমন জীবনানন্দ দাশের রূপসী বাংলা-র প্রচ্ছদের রং পাল্টে গিয়েছে। রণেন আয়ন দত্তের ভূমিকাও বিশেষ মাত্রা যোগ করেনি। অন্নদা মুন্সী প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে তিনি জোর করে নিজের সম্পর্কে বলেছেন, সেটা বেমানান। এ বই তাই নিছক বই নয়। এ আমাদের ব্যর্থতার ইতিহাস। বাংলার গ্রাফিক শিল্প তো দূর অস্ত্, শুধু গ্রাফিক শিল্পী সত্যজিতেরও একটি ধারাবাহিক, বিশ্লেষণমূলক পূর্ণাঙ্গ চিত্র-পরিচয় তৈরি করে ওঠা গেল না, ব্যর্থতা সেটাই। |
|
|
|
|
|