|
|
|
|
|
|
|
পুস্তক পরিচয় ২... |
|
হারানো যুগের জন্য ব্যাকুলতা |
বিমল বসুর বিজ্ঞানে অগ্রপথিক (গাঙচিল, ২৫০.০০) বইটি বেশ সমৃদ্ধ। প্রাচীন যুগ থেকে শুরু করে বিংশ শতাব্দী পর্যন্ত ভারত-সহ বিশ্বের অগ্রণী বিজ্ঞানীদের কথা আলোচিত হয়েছে এ-বইতে। প্রাচীন যুগ, ষোড়শ-সপ্তদশ শতক, সপ্তদশ-অষ্টাদশ শতক, অষ্টাদশ-ঊনবিংশ শতক, ঊনবিংশ-বিংশ শতক এ ভাবে বিভিন্ন অধ্যায়ে গ্রন্থিত করা হয়েছে বিজ্ঞানীদের কর্ম ও জীবন। তাঁদের আবিষ্কার ও উদ্ভাবনের সঙ্গে সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট উল্লেখিত হয়েছে। লেখক মূল রচনাগুলির ‘শুরুর আগে’ অংশটি রেখেছেন যাতে পাঠক সংক্ষিপ্ত হলেও বিজ্ঞানের একটা ইতিহাস পান। যেমন, ‘‘খ্রিষ্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকেই ভারতে পরমাণুর ধারণা ছিল। খ্রিস্টীয় ষষ্ঠ শতকে যে ধারণাকে সুগ্রথিত করেন কণাদ। ...প্রায় একই সময়ে গ্রিক দার্শনিক ও বিজ্ঞানী ডেমক্রিটাস পদার্থের ক্ষুদ্রতম অবিভাজ্য কণাকে ‘অ্যাটম’ বা পরমাণু বলে সংজ্ঞায়িত করেন। অবশ্যই কণাদ ও ডেমক্রিটাস কেউ কারও তত্ত্ব জানতেন না।”
স্মৃতি-বিস্মৃতির সুখ-দুঃখ/ মনে-পড়া আর ভুলে-যাওয়া (ভাষান্তর, টীকা: সন্দীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। সূত্রধর, ৫০.০০) গোপালকৃষ্ণ গান্ধি-র বেঙ্গল ক্লাবে প্রদত্ত ভাষণের সামান্য সংক্ষেপিত রূপ। তাঁর গদ্যের একটু নমুনা: ‘‘বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় আসলে তাড়িত হয়েছিলেন যে-যুগটা দ্রুত হারিয়ে যাচ্ছে, তার প্রতি এক স্মৃতিকাতর ব্যাকুলতায়। সেই মর্মভাবকেই ধরেছেন সত্যজিৎ রায় এবং তাকে ব্যবহার করেছেন এমনভাবে যা তাঁর মতো শিল্পী-ই পারেন। স্মৃতিমেদুরতা বিধৃত শুধু সংগীতে নয়, নন্দলাল বসু-ধরনের হস্তলিপিতে নামাঙ্কনের রেখায় নয়, বিশেষ কিছু দৃশ্য পরিকল্পনাতেও, যেমন ‘দেখো দেখো’ বলে গ্রামবাসীদের বিস্ময়চকিত করে দেওয়া সেই খেলা-দেখানো অভিনেতার প্রবেশ।” শেষে আর-একটি ছোট লেখাও ঠাঁই পেয়েছে: ‘উত্তমকুমার স্মরণে’। উত্তমকুমার-স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ উপলক্ষে গোপালকৃষ্ণের বক্তৃতার লিখিত রূপ।
বিজ্ঞানের দর্শন নিয়ে বাংলায় বেশি লেখা হয়নি, তেমনই একটি বই শিবনাথ চট্টোপাধ্যায়ের বিজ্ঞান: সঙ্গ-অনুষঙ্গ (সূত্রধর, ১২৫.০০)। লেখাগুলি মূলত পদার্থ বিজ্ঞান নিয়ে। শুরুতেই ‘মননের ভারতীয় পরম্পরা’য় লেখকের মন্তব্য, ‘দর্শন এবং ধর্ম হাত ধরাধরি করে চললে শেষ পর্যন্ত মুক্তচিন্তার গতি ব্যাহত হয়।’ তাঁর রচনার মধ্যে আছে ‘বিজ্ঞান থেকে ঋষি: জগদীশচন্দ্র’, ‘প্রফুল্লচন্দ্র-র শিল্পভাবনা’, ‘নিউটনের উত্তরাধিকার’, ‘আইনস্টাইন: ১৯০৫-এ বিস্ফোরণ’। পরিশিষ্টে লেখক-কৃত সাক্ষাৎকার প্রয়াত বিজ্ঞানী অমলকুমার রায়চৌধুরীর: ‘অনেকেই তো হোমিওপ্যাথিতে বিশ্বাসী তাঁদের মধ্যে তো অনেক বৈজ্ঞানিকও আছেন। হয়ত জ্যোতিষীর কাছেও যান, প্রস্তর-টস্তর ধারণও করেন। মানুষের মনটা বড় অদ্ভুত।’ অত্যন্ত যত্নে উৎপল দত্তের কাজ ও জীবনের নিহিত দর্শনের খোঁজ করেছেন অরূপ মুখোপাধ্যায়। তাঁর সৃষ্টিময় গবেষণা-গ্রন্থটির নামই উৎপল মানস (দীপ, ২০০.০০)। ভূমিকা-য় দীপেন্দু চক্রবর্তী জানিয়েছেন ‘অরূপ নিষ্ঠাবান গবেষকের মতো উৎপল দত্তের মার্কসবাদ চর্চা নিয়ে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে আলোচনা করেছেন। তবে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য উৎপল দত্তের রবীন্দ্রচর্চার রচনাটি।’ উৎপল দত্তকে নিয়ে কোনও-কোনও রচনায় রয়েছে লেখকের ব্যক্তিগত স্মৃতির ছোঁয়াও, সঙ্গে দু’টি সাক্ষাৎকার সত্য বন্দ্যোপাধ্যায় ও সত্যজিৎ রায়ের। “তুমি ‘টিনের তলোয়ার’ দেখেছো? ওই হল ভারতীয় থিয়েটারের হাইট।” লেখককে বলেছিলেন সত্যজিৎ। পরিশিষ্টে উৎপল রচিত পরিচালিত অভিনীত নাটক-যাত্রা, বাংলা-হিন্দি-ইংরেজি ছবির পঞ্জি, গ্রন্থতালিকা। |
|
|
|
|
|