নিবন্ধ
অষ্টমীতে আনারকলি
কই সন্ধ্যায় বড় মাসির বাড়িতে অষ্টমীতে দুর্গাপুজোর আরতি দেখা আর তার পরেই নাইট ক্লাবে বন্ধুর পার্টি। কী পরা যায়?
সলিউশন: আনারকলি সালোয়ার স্যুট। দিব্যি ম্যানেজ হয়ে যাবে। ইতিমধ্যে এই ব্যবস্থা নিয়ে ফেলেছেন সেন্ট জেভিয়ার্সের মৌশ্রী। পুজোবাড়ি আর নাইট ক্লাব ব্যালেন্স করে দিয়েছে একটা গোলাপি রঙের মাটি ছুঁইছুঁই আনারকলি পোশাক। বললেন, “পার্টিতে ঢোকার আগে শুধু ওড়নাটা সরিয়ে দু’টো ট্রেন্ডি ড্যাঙ্গলার ঝুলিয়ে নিলাম কানে।” ব্যস্ পার্টি লুক একদম সুপার হিট!

মুজরা ছেড়ে আনারকলি এখন ডিস্কোমুখী
তাই পিছিয়ে থাকে কেন তাঁর নাচ-পোশাকটা? নিত্য নতুন কায়দায় সেটিও দিব্যি জায়গা করে নিচ্ছে শহুরে আধুনিকাদের রোজের রুটিনে।
ভোল বদলাচ্ছে যখন-তখন। তাল সামলাতে কামিজ হয়েছে আরও খানিকটা লম্বা। ওয়েস্টার্ন গাউনের মতো দেখতে এই পোশাক পুরোদস্তুর ইন্ডো-ওয়েস্টার্ন কম্বো।
হরেক রকম ডিজাইন। এক লেয়ার, দু’লেয়ার বা আরও বেশি লেয়ারে। কোথাও নেটের ফুলহাতা, তো কোনওটা স্লিভলেস। চলছে কাপ হাতাও। দোপাট্টা দিয়ে ফর্ম্যাল বা ওড়না ছাড়া এক্কেবারে অন্য রকম লুক। রাত-পার্টি থেকে ঘরোয়া অনুষ্ঠান, সবের জন্যই মানানসই ডিজাইন। পুজোর ওয়ার্ড্রোবে এক জোড়া আনারকলি পোশাক না থাকলে নাকি সাজটাই হবে না ট্রেন্ডি। ডিজাইনারদের মত, অষ্টমীর রাতের শহর এ বার রঙিন হয়ে উঠবে আধুনিকা আনারকলিদের ভিড়েই।
এই ফ্যাশনে উৎসাহী কলেজপড়ুয়া থেকে মাঝবয়সি কর্পোরেট সুন্দরীরা। মৌশ্রীর বান্ধবী স্নেহা তো এর মধ্যেই কিনে ফেলেছে তিন সেট আনারকলি। বললেন, “সব ধরনের অনুষ্ঠানেই কাজে আসে। নামেই সালোয়ার কামিজ, অথচ লুকটা সহজে ওয়েস্টার্ন করে ফেলা যায়।”
এক আইটি সংস্থার এগ্জিকিউটিভ সঞ্চারী আবার কর্পোরেট গাম্ভীর্য বজায় রাখতে অফিস-পার্টিতে পরে যেতে চান আনারকলি কামিজ। তাঁর মতে, “একটা হাই-নেক আনারকলি ড্রেস পরলে রোজের লুকটা বদলে একটু চমক আসে। আবার বজায় থাকে ফর্ম্যাল ভাবটাও। ট্র্যাডিশনাল পোশাকের এটাই তো ভাল দিক!”
ঠিক সে কারণেই এই পোশাক ফিরছে বলে মত ফ্যাশন ডিজাইনার অভিষেক দত্তের। বললেন, “আইভরি, স্কাই ব্লু, কোরাল পিঙ্ক বা কোনও প্যাস্টেল শেডে এই পোশাক সব রকম অনুষ্ঠানেই পরা যায়।” ভারতীয় মহিলাদের ফিগারে বেশি ঘের দেওয়া এই কামিজ খুব মানায় বলে মত ফ্যাশন ডিজাইনার দেব ও নীলের। তাই নানা ভাবে এখানকার ফ্যাশনে ফিরে ফিরে আসছে এই পোশাক।

স্টাইলের শুরু

আগে উত্তর ভারতের দিকে রাজসভার নর্তকীরা এমনই ধরনের সালোয়ার কামিজ পরতেন বলে শোনা যায়। এখনও কত্থক নাচে ব্যবহার হয় এই পোশাক। মুঘল রাজা জাহাঙ্গিরের (তিনিই রাজপুত্র সেলিম) বিখ্যাত প্রেয়সী, আকবরের সভার নর্তকী আনারকলির নামেই এই পোশাক। আনারকলি সালোয়ার কামিজে মুজরার দৃশ্য বলিউডের বিভিন্ন সময়ের ছবিতেই দেখা গিয়েছে। রেখা থেকে ঐশ্বর্যা এতে সেজেছেন সকলেই।

 

আলমারিতে তোলা আনারকলি পরতে হলে...
দু’বছরের পুরনো আনারকলি কামিজগুলো পরে ফেলাই যায়। একটু খাটতে হবে। এখন কয়েক লেয়ারের আনারকলি কামিজ খুব হিট ফ্যাশন। নীচে এক রঙের গোড়ালি-দীর্ঘ কামিজ থাকুক। ওপর দিয়ে পরে নেওয়া যায় তুলনায় কম ঝুলের পুরনো আনারকলি কামিজটা। নীচের কামিজের চেয়ে ঘের বেশি হোক ওপরের কামিজটার। ট্রেন্ডে থাকা গেল, সদ্ব্যবহার হল পুরনো জামাটারও। আরও আধুনিক লুক চাইলে আনারকলির নীচে চুড়িদারের বদলে পরা যায় শরারা বা স্কার্টও। ডিজাইনার জুটি দেব ও নীলের টিপস্ তেমনই।

জর্জেট-সাটিন-সুতি-সিল্ক
দু’তিন বছর আগে থেকে আনারকলি পোশাক এসেছে আধুনিকাদের রোজকার ফ্যাশনে। বলিউডের বিদ্যা, শিল্পা থেকে টলিউডের ঋতুপর্ণা, কোয়েলকে বিভিন্ন পার্টিতে দেখা গিয়েছে এই সাজে। কামিজের গড় ঝুল ছিল তখন হাঁটুর কয়েক ইঞ্চি নীচ পর্যন্ত।
এখন ভোল বদলে আনারকলি কামিজ গোড়ালি পর্যন্ত। কোনওটায় জর্জেট, কোনওটায় সাটিন বা সুতি বা সিল্কের ওপরে সুতো বা জরির ডিজাইনে। অথবা শুধু কাচ দিয়েই কাজ করা জামা জুড়ে। নজর কাড়বে অ্যাপ্লিকের কাজও। টু পার্ট আনারকলি আরও ট্রেন্ডি। ওপরে একটা জমকালো বিশাল ঘেরের জ্যাকেট। ভিতরে হাল্কা কাজের স্লিভলেস কামিজ।
গ্রে গ্রিন, কালো, সাদা আর নানা প্যাস্টেল রঙেও এই পোশাক বাজার মাতাচ্ছে এ বার। ফ্যাশনে ইন ‘ওমরে এফেক্ট’ও। অর্থাৎ, কামিজের নীচ আর ওপরের মধ্যে থাকছে শেডের পার্থক্য। কোথাও ওপরটা গাঢ়, নীচটা হালকা। আবার হতে পারে উল্টোটাও।
সাবেক সাজের দিনে বেছে নেওয়া যায় জরি বা জারদৌসি কাজে একটা জমকালো কামিজ। সঙ্গে দোপাট্টা। আর মানানসই ট্র্যাডিশনাল গয়নায় অল্পেই জমজমাট হয়ে উঠবে লুক। আর সাজটা যদি করতে হয় আর একটু ওয়েস্টার্ন ঘেঁষা, তার ব্যবস্থাও সহজ। দোপাট্টা বাদ দিয়ে বেছে নেওয়া যায় বেশ বড়সড় একটা বেল্ট। পরে নেওয়া যায় একটা জমকালো স্কার্ফও। কানে ঢাউস ভিক্টোরিয়ান ড্যাঙ্গলার জোড়া ঝোলালেই সাজ হয়ে গেল ইন্ডো-ওয়েস্টার্ন। পার্টি লুকটা আরও গ্ল্যামারাস করতে পায়ে এক জোড়া স্টিলেটো গলিয়ে নেওয়ার টিপস্ দিচ্ছেন ডিজাইনার অভিষেক। হাতে থাকুক মানানসই বটুয়া বা ক্লাচ পার্স।
আর একটা কথা। পুজোর ভিড়ের মধ্যে নজর কাড়তে মন দিতে হবে চুলের স্টাইলেও। আনারকলির সঙ্গে রেট্রো কায়দায় সামনে বুফো করে একটা পনিটেলে এই পুজোয় হয়ে ওঠা যাবে একেবারে আলাদা। জমতে পারে একটু বড় কার্লসও!

ছবিতে ডিজাইনার অভিষেক দত্তের তৈরি আনারকলি পোশাক


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.