|
|
|
|
|
|
|
আপনার সাহায্যে... |
|
বাঁচার ইচ্ছে চলে গেলে আত্মহত্যা-ই শেষ কথা নয় |
এমন ভুল করার আগে আরও এক বার ভাবতে বললেন মনোচিকিৎসক ডা: রিমা মুখোপাধ্যায় |
৮২ বছরের বৃদ্ধা স্বামীর শোকে ৩৫ তলা থেকে লাফিয়ে পড়লেন! তাও সপরিবার!
শোক চরম পর্যায়ে পৌঁছালে তো অনেক সময়ে যুক্তি-বুদ্ধি হারিয়ে যায়।
স্বামী তো মারা গেছেন ৯০ বছর বয়সে!
তা ঠিক। তবে অনেকেই শোক-দুঃখ ঠিক মেনে নিতে পারেন না।
তার পর তাঁর মেয়েরা! তাঁরা তো যথেষ্ট প্রতিষ্ঠিত ছিল!
আত্মহত্যা কি কেবল অবহেলিত বা একা মানুষেরা করে? যখন কারও মনে হয়, মরে গেলেই সব সমস্যার সমাধান হবে, সে মরতে চেষ্টা করে।
এ তো একপেশে ভাবনা।
সে তো বটেই। কিন্তু তখন তার বিচার বুদ্ধিলোপ পায়। আত্মবিশ্বাস এতটাই কমে যায় যে, সে পালাতে পারলে বাঁচে। |
|
‘হেমলক সোসাইটি’ ছবির একটি দৃশ্য |
কেউ যদি পথ দেখায়, হেমলক সোসাইটির মতো?
অনেক সাপোর্ট গ্রুপ আছে আজকাল। কিন্তু সেখানে তো ফিল্মি কায়দায় কেউ এন্ট্রি নেবে না। আপনাকেই সাহায্য চাইতে হবে।
বাঁচার ইচ্ছে চলে গেলে কি আর চাওয়ার ইচ্ছে থাকবে?
তাই হয়। অবসাদ খুব গভীর হলে চাওয়ার ইচ্ছেটাই চলে যায়।
অবসাদ তো আর এক লাফে গভীর হয়ে যায় না। শুরুতেই যদি সাহায্য চাওয়া যায়?
আমরা তো তাই চাই। যে মানুষ থেকে থেকে ভাবছেন মরে গেলে ভাল হয়, তিনি যদি সেই পর্যায়ে যুক্তি-পাল্টা যুক্তির পালা খেলতে পারেন, নিজে না পারলে বন্ধু বা কাউন্সেলারের সাহায্য নেন, কাজ হতে পারে।
হতে পারে কেন বলছেন? বলুন, নিশ্চয়ই হবে।
তা বলতে পারছি না কারণ মনের-প্রাণের কথা খুলে বলার মতো মানুষ আজ পাওয়া দুষ্কর।
বা থাকলেও তো অনেকে মন খুলতে পারে না।
এরাই সবচেয়ে বিপজ্জনক। কষ্ট ভাগ করে নিতে পারে না। একা একা গুমরে মরে বিপদ বাধিয়ে বসে।
আত্মহত্যা ঠেকানোর সবচেয়ে বড় দাওয়াই কষ্ট ভাগ করে নেওয়া?
হ্যাঁ।
ডা: রিমা মুখোপাধ্যায় |
যার সঙ্গে ভাগ করবে তাকেও তো তেমন হতে হবে। হয়তো দেখা গেল কথা বলে আরও মুষড়ে পড়ল।
তা ঠিক। শুরুতেই যে পরিবারের কথা বললেন, তাঁরা তো তিন জনে মিলে এমন গোলমাল পাকালেন যে মরা ছাড়া কোনও সমাধান এল না মাথায়।
তা হলে কি প্রফেশনাল হেল্প নেওয়াই ভাল?
যে আত্মহত্যার কথা ভাবছে সে তো নিজে সব সময় সাহায্য চাইতে যায় না। কাছের মানুষেরা যদি তার কথায় বা আচার-আচরণে অসঙ্গতি দেখে সহানুভূতির হাত বাড়াতে পারে তা হলেই বেশি ভাল হয়।
ঠিক বলেছেন। কাছের মানুষের সহানুভূতি পেলে মত ঘুরে যেতে পারে।
আমার এক ডিপ্রেশনের রোগী, ছাদে উঠে ঝাঁপ দিতে যাবে, শুনল ছেলে কাঁদছে। নেমে আসা মাত্র ছেলে জড়িয়ে ধরে বলল, ‘মা আমাকে ছেড়ে কোথায় গিয়েছিলে?’ এইটুকু তো কথা। এতেই ও মত পাল্টে ফেলল। অপরাধবোধ হতে লাগল তার। যে সন্তানকে ছেড়ে মরতে যাচ্ছিল।
ঠিক তাই। পিছুটান থাকলে মরা কঠিন।
ডিপ্রেশন খুব বেড়ে গেলে পিছুটান থাকলেও মানুষ মরে। সে ভাবতে শুরু করে আমি মরে গেলেই ওরা ভাল থাকবে।
ওষুধে তো ডিপ্রেশন কমে যায়।
৩-৪ সপ্তাহ লাগে কমতে। তার মধ্যেই করে ফেলে অনেকে।
এটা ঠেকানোর রাস্তা কী?
কাছের মানুষদের সচেতন থাকা। ‘ভাল লাগছে না, মরে গেলেই হয়’ জাতীয় কথা বললে তাকে হালকা ভাবে না নিয়ে তার কষ্ট দূর করার চেষ্টা করা। মাসখানেক অন্তত চোখে চোখে রাখা। ডাক্তারকে জানানো।
ডিপ্রেশন হয়েছে বোঝা গেলে নাহয় এ সব করা যায়, কিন্তু কোথাও কিছু নেই, স্কুল থেকে ফেরার পরে ছাদে উঠে ঝাঁপ দিল, তার কী সমাধান?
কোথাও কিছু না থাকলে কিন্তু কেউ আত্মহত্যা করে না। কোনও একটা সূত্র কোথাও থাকে।
সেই সূত্রটা যদি খুব ক্ষীণ হয়, তাকে চিনব কী করে?
ওই যে আগে বললাম, আচার-ব্যবহারে কিছু অসঙ্গতি পাবেন। তাকে সহানুভূতির সঙ্গে দেখতে হবে।
অনেকে তো ব্ল্যাকমেল করার জন্যও মরার হুমকি দেয়।
তা দেয়। আবার হুমকি দিতে দিতে যখন কাজ হয় না, রাগের চোটে করেও ফেলে। কাজেই সাবধান থাকা ভাল।
|
টিপস |
মাঝরাতে যদি একা লাগে, মরতে ইচ্ছে করে... |
• কথা পাঁচকান করবে না এমন বন্ধুকে ফোন করে বলুন কষ্টের কথা। সে কী ভাববে না ভাববে তা নিয়ে ভাববেন না। ড্যামেজ কন্ট্রোলের অনেক সময় পাবেন পরে। বন্ধু না থাকলে সাপোর্ট গ্রুপের হেল্প লাইনে ফোন করুন। নাম্বারটা আগে থেকে জোগাড় করে রাখবেন।
• কান্না পেলে কাঁদুন একচোট।
• মনে যা আসছে লিখে ফেলুন। যার বিরুদ্ধে যত রাগ, দুঃখ, অভিমান আছে সব লিখুন। ভাল বন্ধু থাকলে চ্যাটে বসে মনের ভার হালকা করে দিন।
• সকালে জীবন আর এত বিবর্ণ লাগবে না। সেই বিশ্বাস মনে জাগান।
• চিন্তাভাবনা শিকেয় তুলে কোনও সিনেমা দেখতে বসে যান।
• প্রতিবেশী কী ভাববে না ভেবে বেশ জোরে গান চালিয়ে দিন।
• ঠিক করুন, মরবেন কি মরবেন না, সেই সিদ্ধান্ত নেবেন এক ঘন্টা বাদে।
• এক্ষুনি এসপার-ওসপার চাইলে যে যে যুক্তিতে মরতে ইচ্ছে করছে তা পরপর লিখে তার পাশে উল্টো যুক্তিগুলি লিখুন।
• মাঝেমাঝেই মরার ভূত ঘাড়ে চাপলে, যে ভাবে মরার কথা ভাবছেন, তার উপযুক্ত উপকরণ যাতে হাতের কাছে না থাকে, তার ব্যবস্থা করে রাখুন। |
|
যোগাযোগ- ২৪৬৩৩৫০৫/ ৬৫৪১১৯৩২
সাক্ষাৎকার: সুজাতা মুখোপাধ্যায় |
|
|
|
|
|