সকালে সব্জি বাজারে নেহাতই গোবেচারা মুখ করে ক্রেতার পাশে দাঁড়িয়ে থাকত ওরা। তার পর সামনের দিকে ঝুঁকে পড়ে এক মনে যখন সব্জি বাছাবাছি করছেন ক্রেতা, তখন তাঁর অসতর্কতার সুযোগে কোন ফাঁকে তারা বুক পকেট থেকে মোবাইল বা প্যান্টের পিছনের পকেট থেকে উধাও করে দিত মানিব্যাগ। হাজার খোঁজাখুঁজির মধ্যে একবারও কিন্তু সন্দেহের তালিকায় ভেসে উঠত না পাশে দাঁড়িয়ে থাকা নিরীহ মুখের ছেলেটির কথা। এ ভাবেই কৃষ্ণনগর শহরের বুকে রীতিমত লজ ভাড়া করে সেখানে ঠিকানা গেড়ে পকেটমারি চালিয়ে যাচ্ছিল তিন কিশোর। বৃহস্পতিবার সকালে তাদের এক জনকে হাতে-নাতে ধরে ফেলেন কৃষ্ণনগর শক্তিনগর বাজার এলাকার এক বাসিন্দা। হাত ছাড়িয়ে ছেলেটি দৌড়ে ঢুকে পড়ে লজের ভেতরে। এলাকার মানুষ লজের ভেতরে ঢুকে তাদের তিন জনকেই ধরে ফেলে। পরে খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে চুরি করা ১৪টি দামি মোবাইল-সহ তিন জনকে গ্রেফতার করে। ধৃত তিন জনই ঝাড়খণ্ডের রাজমহল এলাকার বাসিন্দা সোনু নোনিয়া, অরবিন্দ নোনিয়া ও বাদল নোনিয়া। ওই চক্রের মূল পাণ্ডা অবশ্য পালিয়ে গিয়েছে বলে পুলিশের অনুমান। সেই সঙ্গে হোটেল মালিক বলরাম সাহাকেও গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, ছিনতাই চক্রের চার জন দেড়শো টাকা দিয়ে একটি ঘর ভাড়া করে গত ২০ দিন ধরে রয়েছে। ধৃত হোটেল মালিক সব কিছু জানার পরও কোনও রকম বৈধ নথিপত্র ছাড়াই তাদের থাকতে দিয়েছিল। এমনকী হোটেলে যে তারা আছে সেটাও খাতায় নথিভুক্ত করেনি। ঝাড়খণ্ডের বাসিন্দা এক ব্যক্তি তাদের কৃষ্ণনগরে নিয়ে এসে ওই হোটেলে তোলে। ঝাড়খণ্ডে তাদের ছিনতাইয়ের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল। তারপরও প্রতি দিন সন্ধ্যায় হোটেলের ঘরের ভেতরে তাদের প্রশিক্ষণ দিত ওই ব্যক্তি।
মূলত নবদ্বীপ ও কৃষ্ণনগরের বাজার এলাকায় ছিনতাই চালাত। এদের লক্ষ্য ছিল সকালে সব্জি বাজার করতে আসা ব্যস্ত খদ্দেররা। ওই দুটি থানা এলাকায় গত ক’দিনে একাধিক ছিনতাইয়ের ঘটনায় জেরবার হয়ে উঠছিল পুলিশ। মূলত বাজার এলাকায় ছিনতাইয়ের ধরণ দেখে অবাক হয়ে যাচ্ছিলেন পুলিশ কর্মীরা। ছিনতাইবাজদের সম্পর্কে কিছুতেই তারা তথ্য সংগ্রহ করতে পারছিলেন না। জেলার এক পুলিশ কর্তা বলেন, “কি করে বুঝব যে ঝাড়খণ্ড থেকে এসে অতটুকু বাচ্চা ছেলেরা এমন নিখুঁত ভাবে ছিনতাই করছে।” কোতোয়ালি থানার আইসি অলোক মুন্সী বলেন, “আমরা মূল পাণ্ডা সম্পর্কে বেশ কিছু তথ্য পেয়েছি। ঝাড়খণ্ড পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে।” |