চলছে চাপানউতোর
সবংয়ে একই সঙ্গে ১৫টি প্রকল্পের শিলান্যাস মানসের
জোটের আকাশে মেঘ। রাজ্য -রাজনীতির যা হালচাল, তাতে কংগ্রেসের মন্ত্রীদের রাজ্যপাট হারানো শুধুই সময়ের অপেক্ষা। এই পরিস্থিতিতে শুক্রবার তড়িঘড়ি নিজের বিধানসভা এলাকায় ১৫টি প্রকল্পের শিল্যানাস করলেন সেচমন্ত্রী মানস ভুঁইয়া। মন্ত্রিত্ব থাকতে থাকতে মানসবাবু শিলান্যাস -পর্ব সেরে ফেললেন বলে রাজনৈতিক মহলে জোর আলোচনা শুরু হয়েছে। যদিও মানসবাবু নিজে বলছেন, “আগে থেকেই শিলান্যাসের কর্মসূচি নেওয়া ছিল। তা ছাড়া, কে মন্ত্রী থাকল তা বড় কথা নয়। বড় কথা হল কাজ।”
শিলান্যাসের কর্মসূচি পূর্ব -নির্দিষ্ট, এ কথা অবশ্য মানছে বিরোধী সিপিএম। দলের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য হরেকৃষ্ণ সামন্ত সবংয়েরই বাসিন্দা। তিনি বলেন, “আমরা বারবার জানতে চেয়েছিলাম প্রকল্পের মধ্যে ক’টা সেতু রয়েছে, কী কী হবে জানান। কিন্তু না মন্ত্রী, না সেচ দফতরের আধিকারিক, কেউই কিছু জানাননি। শুক্রবার সকালেই শুনলাম, একগুচ্ছ শিলান্যাস হচ্ছে। আসলে মন্ত্রিত্ব থাকবে কি না তা নিয়ে সংশয় তৈরি হওয়াতেই উনি এই কাজ করলেন। বার মন্ত্রিত্ব গেলেও বলতে পারবেন, আমি সবংয়ের জন্য কত কিছু করেছি।” জেলা সেচ দফতরের সুপারিন্টেনডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার সুবীর লাহা বলেন, “তিন দিন আগে এই শিলান্যাসের নির্ঘণ্ট স্থির হয়েছে।” প্রসঙ্গত, যদিও মন্ত্রীর কথায়, “হাই কম্যাণ্ডের নির্দেশেই মন্ত্রী হয়েছি। হাই কম্যাণ্ড নির্দেশ দিলে মন্ত্রীত্ব ছেড়ে দেব। অনেকেই প্রশ্ন করছেন, মানসবাবু, আর মন্ত্রী থাকবেন তো? আমি তাঁদের বলি, আমি মন্ত্রী হয়ে জন্মায়নি। মানুষের সঙ্গে থেকে কাজ করতে চাই। তাই মন্ত্রী থাকা বড় কথা নয়। উন্নয়ন বড় কথা। উন্নয়নের কাজকে ত্বরান্বিত করতেই এই পদক্ষেপ।”
শিলান্যাসের পরে মানস ভুঁইয়া। ছবি : সৌমেশ্বর মণ্ডল।
মানসবাবু সবংয়ের ‘ভূমিপুত্র’। বরাবরই পশ্চিম মেদিনীপুরের এই এলাকা থেকে জিতে বিধানসভায় প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ২০১১ -এর নির্বাচনেও সবং থেকেই জিতে মন্ত্রী হয়েছেন। স্বভাবতই নিজের বিধানসভা এলাকার একটা বাড়তি গুরুত্ব আছে তাঁর কাছে। সেচমন্ত্রী হয়েই সর্বাগ্রে যে প্রকল্পটিকে তিনি গুরুত্ব দিয়েছেন, সেটি হল কেলেঘাই -কপালেশ্বরী -বাগুই অববাহিকা নিকাশি প্রকল্প। এই নদী সংস্কার প্রকল্প রূপায়িত হলে সবং -সহ দুই মেদিনীপুরের বিস্তীর্ণ বানভাসি এলাকা বন্যার প্রকোপ থেকে বাঁচবে। ইতিমধ্যেই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। দিন যে ১৫টি প্রকল্পের শিলান্যাস মানসবাবু করলেন, তার মধ্যেও রয়েছে কেলেঘাই -কপালেশ্বরী -বাগুই প্রকল্পের জন্য অফিস আবাসন নির্মাণ। অফিস আবাসন হবে সবংয়ের তেমাথানিতে। বাকি ১৪টি সেতুর শিলান্যাস।
দিন সবংয়ের ভুয়াতে এক অনুষ্ঠানেই ১৫টি প্রকল্পের শিলান্যাস করেন মন্ত্রী। ভুয়া মোহিনীবাজারে হবে ডবল লেন সেতু, গণপথ খালে উপর আমদা বসন্তপুর, আমদা শিমূলতলাতে হবে সেতু, তেখালিতে হবে তিনটি সেতু, বাঁশকোনা খালের উপর শ্যামসুন্দরপুরে, কালীমণ্ডপ খালের উপর কেরুড়, মোহাড় বাজার রায়চকে, আমড়াখালি খালের উপর বিষ্ণুপুর বাজার মুরারিচকে, দোখালি খালের উপর খড়িকা এড়ালে, সত্য খালের উপর নিশ্চিন্তিপুর সিমপুরে, খড়িকা খালের উপর ফুলেশ্বরী বাজার -সহ মোট ১৪টি সেতু তৈরি করা হবে। যার জন্য ৩৫ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। যার মধ্যে ‘ব্যাকওয়ার্ড রিজিওন গ্রান্ট ফান্ড’ থেকে ২৩ কোটি রাজ্য সরকারের কোর প্ল্যান থেকে ১২ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে বলে মন্ত্রী জানান। মন্ত্রীর কথায়, “ইতিমধ্যেই সেতু তৈরির টাকা মঞ্জুর করে দিয়েছে অর্থ দফতর। দ্রুত গতিতে এই কাজও শুরু হয়ে যাবে।” পূর্ব মেদিনীপুরের বিভিন্ন জায়গাতেও ৮টি সেতু তৈরির তোড়জোড় চলছে বলে মন্ত্রী জানান। আগামী দু’মাসের মধ্যে সবংয়ের প্রতিটি এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ পৌঁছে দেওয়া এবং দু’ বছরের মধ্যে প্রতিটি এলাকায় বিশুদ্ধ পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দেন মানসবাবু।
কেলেঘাই প্রকল্পের কাজে মাঝেমধ্যেই বাধাদানের অভিযোগ উঠছে। গু’দিন আগেই পূর্ব মেদিনীপুরের ভগবানপুরে প্রকল্পের কাজ দেখতে গিয়ে হেনস্থা হন সেচ দফতরের আধিকারিকেরা। অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধানের ছেলের বিরুদ্ধে। তাঁকে গ্রেফতারও করে পুলিশ। সেই প্রসঙ্গ টেনে এ দিন মানসবাবু বলেন, “উন্নয়নে বাধা দিলে মানুষ ছেড়ে কথা বলবেন না। বহু প্রতীক্ষিত স্বপ্ন বাস্তবায়িত করতে কম লড়াই করতে হয়নি। তাতে সকলের সহযোগিতা করার কথা। কিন্তু উল্টে নানা অজুহাতে কিছু মানুষ বাধাদানের চেষ্টা করছেন। আমি তাঁদের বলি, হাতে হাত মিলিয়ে উন্নয়নে সাহায্য করুন।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.