|
|
|
|
হলদিয়া বন্দর নিয়ে বার্তা শুভেন্দুর |
আন্দোলন চালিয়ে যান, পাশেই আছে সরকার-পুলিশ |
নিজস্ব সংবাদদাতা • হলদিয়া |
মহাকরণকে চিঠি দিয়েও জট খোলার আশা মিলল না। বরং হলদিয়া বন্দরে শ্রমিক আন্দোলন আরও জোরদার করার ঘোষণা করলেন তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী।
বন্দরের শ্রমিক আন্দোলন পর্বে এত দিন তমলুকের সাংসদ ছিলেন ‘নেপথ্যে’। শুক্রবার প্রকাশ্য সভা করে আন্দোলন জোরদার করার কথা জানান শুভেন্দু। এবং জানিয়ে দেন, রাজ্য সরকার ও পুলিশ এই আন্দোলনের ‘পাশে’ই রয়েছে। খোদ তৃণমূল সাংসদ সভা করে এই বার্তা দেওয়ার পরে হলদিয়া বন্দরে তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি-র জঙ্গি আন্দোলনে লাগাম পরা তো দূরের কথা, উল্টে তার মাত্রা বাড়বে বলেই আশঙ্কা বন্দর-কর্তৃপক্ষের।
নাগাড়ে শ্রমিক অসন্তোষ চলতে থাকলে হলদিয়া বন্দর নিয়ে লগ্নিকারীদের কাছে ভুল বার্তা যাবেএ কথা উল্লেখ করে বুধবারই রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিবকে চিঠি দিয়ে তাঁর হস্তক্ষেপ চান কলকাতা বন্দরের চেয়ারম্যান মণীশ জৈন। বন্দরের ভিতরে ও বাইরে সুষ্ঠু আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বজায় রাখার অনুরোধ চিঠিতে করেছেন বন্দর-চেয়ারম্যান।
তার ঠিক পরেই শুভেন্দুর সভা এবং ‘হুঁশিয়ারি’। বন্দরের এক নম্বর গেটে হাজার তিনেক শ্রমিকের জমায়েতে তৃণমূল সাংসদ বলেন, “কোট-প্যান্ট পরা বন্দরের আধিকারিকেরা শ্রমিকদের পেটে লাথি মারার চক্রান্ত করছেন। আপনারা আন্দোলন চালিয়ে যান। রাজ্য সরকার ও রাজ্য পুলিশ শ্রমিকদের পাশে রয়েছে।” এ প্রসঙ্গে শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মন্তব্য, “সমস্যা সমাধানে বন্দর কর্তৃপক্ষের আরও দায়িত্বপূর্ণ হওয়া উচিত।” |
|
শ্রমিকদের সভায় শুভেন্দু। —নিজস্ব চিত্র |
প্রথমে মঙ্গলবার, তার পর বৃহস্পতিবার, এমনকী শুক্রবার সকালেও ঘণ্টাখানেক হলদিয়ার চিরঞ্জীবপুরে বন্দরের ‘অপারেশনাল বিল্ডিং’য়ে বিক্ষোভ দেখান মাল ওঠানো-নামানোর কাজে যুক্ত কয়েকটি সংস্থার বেশ কিছু শ্রমিক। বন্দর সূত্রে বলা হয়েছে, সমস্যা এড়াতেই ‘এবিজি’ গোষ্ঠীর সঙ্গে চুক্তির সময় উপস্থিত থাকার অনুরোধ জানিয়ে গত ১০ সেপ্টেম্বর সাংসদ শুভেন্দুকে চিঠি পাঠানো হলেও তিনি আসেননি। তার পর থেকেই বিষয়টি নিয়ে জট পাকছে। এ দিন শুভেন্দুর সভার পরে পরিস্থিতি আরও জটিল হবে বলেই বন্দর-কর্তৃপক্ষের আশঙ্কা। পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার সুকেশ জৈন অবশ্য বলেন, “আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে যা করার তা-ই করা হচ্ছে।”
হলদিয়া বন্দরে উদ্ভুত সমস্যার মূলে রয়েছে বন্দরের ২ ও ৮ নম্বর বার্থে বেশি সংখ্যক জাহাজ নোঙর করানোর সিদ্ধান্ত। সম্প্রতি হাইকোর্টের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে বন্দর-কর্তৃপক্ষ ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ওই দু’টি বার্থে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে মাল ওঠানো-নামানোর দায়িত্বে রয়েছে ‘এবিজি’ গোষ্ঠী। ‘এবিজি’র বার্থে বেশি জাহাজ ভিড়লে তাঁরা কাজ হারাবেন, এই আশঙ্কায় অন্য সংস্থার শ্রমিকেরা বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। এমনিতেই নাব্যতা সঙ্কটে জেরবার এই বন্দরে শ্রমিক অসন্তোষের ফলে সমস্যা আরও বেড়েছে।
২ ও ৮ নম্বর বার্থে বেশি জাহাজ ভেড়ানোর কোনও নির্দেশ হাইকোর্ট দেয়নি বলেও এ দিন দাবি করেন শুভেন্দু। তাঁর মতে, “হাইকোর্টের জুজু দেখানো হচ্ছে। হাইকোর্ট কোনও নির্দেশ দেয়নি, অনুরোধ করেছে মাত্র।” যদিও বন্দর সূত্রে খবর, হাইকোর্টের নির্দেশ বন্দরের ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়েছে। কারও যদি মনে হয় তার পরেও বেআইনি কিছু হচ্ছে, তিনি আদালতের দ্বারস্থ হতে পারেন।
বন্দরে জঙ্গি আন্দোলনের পিছনে আইএনটিটিইউসি-র যে নেতা রয়েছেন বলে অভিযোগ, সেই শ্যামল আদককে এ দিনের সভায় উদ্যোক্তার ভূমিকায় দেখা গিয়েছে। শুভেন্দু সভায় অভিযোগ করেন, “বন্দরের উন্নয়ন থমকে দিতে কিছু স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী তাদের ঘনিষ্ঠ সংবাদমাধ্যমকে নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে। সিটুও ওই দলে আছে।” লক্ষ্মণ শেঠের নাম না করে শুভেন্দুর বক্তব্য, “জেল খাটা সিপিএমের প্রাক্তন সাংসদ বলছেন হলদিয়া শুকিয়ে যাবে। আসলে হলদিয়া বন্দর যে বেঁচে আছে, তাতেই কারও কারও সমস্যা হচ্ছে। তাই এই শ্রমিক স্বার্থ বিরোধী চক্রান্ত।”
বন্দর সূত্রে আরও বলা হয়, হলদিয়া বন্দরের নাব্যতা সমস্যার সমাধানে ড্রেজিং করে মাটি ফেলার জন্য নন্দীগ্রামের জেলিংহ্যামে যাতে জমি পাওয়া যায়, সাংসদ শুভেন্দুকে সেই অনুরোধ করা হয়েছিল। কিন্তু সাড়া মেলেনি। শুভেন্দুর অবশ্য দাবি, “আমাকে এমন অনুরোধ কেউ করেনি। আর মাটি তো নয়াচরে ফেলার কথা।”
|
|
|
|
|
|