|
|
|
|
|
|
নতুন পৃথিবী |
হাসিতে শব্দ ঝরে |
অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায় |
এ যেন পুনর্জন্ম হল আয়ুষের!
জন্মের ছ’মাস পর আয়ুষের বাবা-মা বুঝতে পেরেছিলেন, সে কথা বলতে পারে না। পরে চিকিৎসা করাতে গিয়ে জানা যায়, সে শুনতেও পায় না। তার পরে টানা আড়াই বছর ধরে অনেক টানাপোড়েন। কিন্তু আয়ুষের কানে শব্দ পৌঁছনো যায়নি। ফলে কথাও ফোটেনি মুখে।
কিন্তু সেটাও সম্ভব হল। প্রযুক্তির সাহায্যে আয়ুষের কানে শব্দ পৌঁছে দিয়েছেন চিকিৎসকেরা। আগামী ছ’মাসের মধ্যে আয়ুষের মুখে কথাও ফুটবে বলে জানালেন তাঁরা। পুরো ঘটনার সাক্ষী থাকল দক্ষিণ-পূর্ব রেলের গার্ডেনরিচ সেন্ট্রাল হাসপাতাল।
সম্প্রতি মা-বাবার সঙ্গে হাসপাতালে এসে প্রথম থেকেই ছটফট করে ঘুরে বেড়াচ্ছিল তিন বছরের আয়ুষ। মাঝেমধ্যে মুখে কিছু অস্পষ্ট গোঙানির শব্দ। এর আগে গত ২৪ জুলাই এই হাসপাতালেই আয়ুষের মাথায় অস্ত্রোপচার (ককলিয়ার ইমপ্ল্যান্টেশন) করে বসিয়ে দেওয়া হয়েছিল একটি যন্ত্র। মুম্বই থেকে এসে ওই অস্ত্রোপচার করেন চিকিৎসক অমিত কিশোর।
এর পরের প্রায় ৪০ দিন যে কী ভীষণ উদ্বেগে কেটেছে ইএনটি দফতরে ছেলে কোলে নিয়ে সে কথাই বলছিলেন আয়ুষের বাবা শিউজি কুমার। মুম্বই থেকে আসা অডিওলজিস্ট অনিন্দ্য দ্যুতি হেডফোন লাগিয়ে দিলেন আয়ুষের কানে। ল্যাপটপে রেকর্ড করা শব্দ তরঙ্গ হেডফোনের মাধ্যমে পৌঁছে দেওয়া হবে আয়ুষের মাথার ভিতরে বসানো ওই যন্ত্রে। তার পরেই শুনবে আয়ুষ।
ইএনটি চিকিৎসক কৈলাশ বর্মার চেম্বারে তখন যেন পিন পড়লেও শব্দ হবে। বাবা জোর করে কোলে বসিয়ে রেখেছেন আয়ুষকে। কাচের দেওয়ালের ও পারে উৎকণ্ঠা নিয়ে মা রেণু। সবাই চুপ। কথা শুধু বলছেন অনিন্দ্য: ‘‘এখন মাপা হচ্ছে কতটা শব্দতরঙ্গ ও নিতে পারবে। দেখা হচ্ছে সব স্নায়ু কাজ করছে কি না।” |
|
ছবি: বিশ্বনাথ বণিক |
কিন্তু মোটেই স্থির ছিল না আয়ুষ। গলা ফাটিয়ে কান্নার শব্দ বার করছিল। আচমকাই হাত তুললেন অনিন্দ্য। মানে, আয়ুষের কানে শব্দ পৌঁছে দেওয়া হল।
ওই মুহূর্তেই কান্না থেমে গেল। বিস্ফারিত চোখ আয়ুষের। এ দিক-ও দিক তাকিয়ে মুখ নামিয়ে চোখ বন্ধ করল আয়ুষ। শব্দ গিয়েছে আয়ুষের কানে। এটা তারই প্রতিক্রিয়া। ল্যাপটপের স্ক্রিনে ফুটে ওঠা গ্রাফিক্সে আরও কিছু হিসেবনিকেশ করেই দাঁড়িয়ে পড়লেন অনিন্দ্য। বললেন, “সব ঠিক আছে। শুনতে পাচ্ছে আয়ুষ।” চিকিৎসকেরা হাততালি দিয়ে উঠলেন। আশার ঝিলিক রেণুদেবীর চোখেও। হেসে উঠলেন তিনি। এর পরে বাইরে থেকে মোবাইলে গান বাজিয়ে আর এক দফা পরীক্ষা। এ বার তার হিয়ারিং এড-এ ধীরে ধীরে শব্দ বাড়ানো হবে। তার পরে শুরু হবে ‘স্পিচ থেরাপি।’
আয়ুষের বাবা পেশায় দক্ষিণ-পূর্ব রেলের ইলেকট্রিক মিস্ত্রি। আড়াই বছর ধরে ছেলের জন্য লড়াই চালাচ্ছেন। তিনিই মুম্বইয়ের ওই চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য রেলকে অনুরোধ করেন। রেলের হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফে ওই চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। দক্ষিণ-পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সৌমিত্র মজুমদার বলেন, “এই চিকিৎসায় পুরো খরচ হয়েছে প্রায় সাড়ে ৯ লক্ষ টাকা। দক্ষিণ-পূর্ব রেলের জেনারেল ম্যানেজার অজয়কুমার বর্মা ওই টাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। তবে রেল আমন্ত্রণ করায় মুম্বইয়ের ওই চিকিৎসক কোনও পারিশ্রমিক নেননি।” |
|
|
|
|
|