ইস্টবেঙ্গল-১ (চিডি-পেনাল্টি)
স্পোর্টিং ক্লুব-১ (ভিক্টোরিনো) |
মাঠের মাঝখানে ক্রিকেট পিচ ঢাকতে চাপানো ঘাসের চাবড়াগুলো উঠে গিয়েছে। বেরিয়ে পড়েছে এঁটেল মাটির ‘টাক’।
ম্যাচের আগে বৃষ্টিতে কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামের দফারফা। বল নিয়ে দৌড়নোর পথে ফুটবলারের চূড়ান্ত বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে, এমন সব উপকরণ হাজির। কাদা, জল, বুটের স্টাডের মধ্যে মাটি ঢুকে ভারি হওয়াসব।
এ রকম মাঠ পাসিং ফুটবলের বধ্যভূমি। আবার কমবয়সি অকুতোভয় ফুটবলারের স্বর্গরাজ্য। ভারী চেহারার ফুটবলাররা এমন মাঠে বরাবর সুবিধা পান। শেষ দু’টো ফ্যাক্টরই শুক্রবার সাহায্য করল স্পোর্টিং ক্লুব দ্য গোয়াকে।
আগের দিন অনুশীলনে চিডি-বলজিতদের বডি ল্যাঙ্গুয়েজ দেখে মনে হয়েছিল এ বারের ফেড কাপে অশ্বমেধের ঘোড়া হওয়ার পক্ষে এই টিমটাই আদর্শ। সেই ট্রেভর মর্গ্যান বাহিনী প্রথম ম্যাচেই আটকে গেল, তারকাহীন একটা দলের কাছে। ঘটনবহুল ম্যাচে বিতকির্ত পেনাল্টি, ধাক্কাধাক্কি, দুই কোচের একে অপরের দিকে রিজার্ভ বেঞ্চ থেকে আঙুল তোলা এবং লালকার্ড কিছুই বাদ গেল না। স্পোর্টিংয়ের বিশ্বেশ্বর সিংহকে বিশ্রী ফাউল করে মাঠ ছাড়তে হল মেহতাবকে। রবিবারের ম্যাচে তিনি নেই। আর আজ ইস্টবেঙ্গল দশ মিনিট খেলল দশজনে। |
কলকাতায় যাঁরা ঝড় তুলে এসেছিলেন, এখানে এসে তাঁদের কেন এমন হাল? শুধু মাঠের শত্রুতার জন্যই ওপারা-পেনদের এই দুর্দশা? কিন্তু গত কাল ব্রিটিশ কোচ তো জানিয়েছিলেন, তাঁর ছেলেরা যে কোনও পরিস্থিতির জন্য তৈরি! তা হলে মর্গ্যানের ‘প্ল্যান বি’ কী কাজে লাগেনি? নাকি সেটা নেই-ই লাল-হলুদের গেমপ্ল্যানে? মাঠের সমালোচনা করেও ইস্টবেঙ্গল কোচ অবশ্য বলছেন, “শূন্যর চেয়ে এক পয়েন্ট তো ভাল।”
ইস্টবেঙ্গলের গ্রুপের প্রথম ম্যাচে ওএনজিসি ৫-১ গোলে বিধ্বস্ত করল কালীঘাট মিলন সংঘকে। মর্গ্যানের টিমের পরের খেলা এ দিন দু’গোল করে চমকে দেওয়া কাটসুমি ইসা-র দলের সঙ্গেই। যে ভাবে মাঝেমধ্যে দার্জিলিংয়ের পাহাড় থেকে শিলিগুড়ির সমতলে বৃষ্টি নেমে আসছে, তাতে মাঠের অবস্থা আরও খারাপ হবে। তখন কী করবেন চিডিরা? এ দিনের ম্যাচের পরে লাল-হলুদের শহরে কিন্তু প্রশ্ন উঠে গিয়েছে, মশাল ব্রিগেড শেষ চারে যাবে তো? মর্গ্যান সেই আশঙ্কা বাড়িয়ে দিলেন এই বলে যে, “জানি না পরের দু’টো ম্যাচে মাঠের অবস্থা কেমন থাকবে।”
স্পোর্টিং দলটি নিতান্তই সাদামাঠা। কালু-কেইটা-বংদের মতো ভারী চেহারার কিছু বিদেশির সঙ্গে একদল তরুণই কিন্তু বুদ্ধি করে খেলে বিপাকে ফেলে দিল গতবারের রানার্সদের। মাঝমাঠে কাদায় বল আটকে যাচ্ছিল। তাই দু’পাশে যেখানে ঘাস আছে সেখানটা ব্যবহার করে উইং দিয়ে বল তুলে আনছিলেন প্রোতেশ-রোভানরা। স্পোর্টিংয়ের গোলটা বদলি ভিক্টোরানো করলেন অবশ্য একার কৃতিত্বে। সোলো দৌড়ে। |
চিডি শুরুতেই যে গোলটা করে ইস্টবেঙ্গলকে এগিয়ে দিয়েছিলেন সেটা বিতর্কিত। পেন যখন স্পোর্টিং বক্সে বল নিয়ে ঢুকছেন তখন তাঁকে তাড়া করতে গিয়ে পিছলে পড়ে যান কেইটা। বৃষ্টির মাঠে পেনও পড়ে যান। কেইটার সঙ্গে পেনের কোনও সংঘর্ষ হয়েছিল কি না প্রেসবক্স থেকে বোঝা যায়নি। মহারাষ্ট্রের রেফারি রাহুল ডি’সুজা দাঁড়িয়ে ছিলেন দূরে। হতবাক স্পোর্টিং ফুটবলাররা রেফারিকে ঘিরে ধরে ধাক্কাধাক্কি করতে থাকেন। আঙুল উচিয়ে তেড়ে যান কেইটা। তবু স্পোর্টিং ২-১ করার সুযোগ পেয়েছিল দু’বার। ক্যামেরুন স্ট্রাইকার তাকোই বং দু’টো সহজ সুযোগ নষ্ট করেন। ওই সময় মনে হচ্ছিল, ওপারাদের রক্ষণ নিখুঁত নয়।
টোলগেকে নিয়ে খেলা দেখতে এসেছিলেন সন্তোষ কাশ্যপ। ফেরার সময় মোহন-কোচ বলে গেলেন, “স্পোর্টিং পয়েন্ট না পেলে সেটা পোয়েটিক জাস্টিস হত না।”
ইস্টবেঙ্গল: অভিজিৎ, নওবা, ওপারা, গুরবিন্দর, সৌমিক, খাবরা, মেহতাব, পেন, ইসফাক (রালতে), বলজিৎ (মননদীপ), চিডি (সুবোধ)।
|
ফেড নামচা |
• সব ঠিক থাকলে আজ, শনিবার শিলিগুড়ির কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামে আসার কথা ভারতীয় ফুটবল দলের কোচ উইম কোভারম্যান্সের। কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামে ফেডকাপের ফাইনাল, সেমি ফাইনাল-সহ অন্যান্য ম্যাচগুলি দেখবেন তিনি। তাঁর সামনে ‘পারফরম্যান্স’ দেখাতে পারলে ভারতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে অনেক ফুটবলারের।
• গভীর রাতে আচমকা অসুস্থ হয়ে পড়েন ওএনজিসি দলের ম্যনেজার বিবেক ভৌমিক। বৃহস্পতিবার রাতেই শিলিগুড়ি মহকুমা ক্রীড়া পরিষদের কর্মকর্তারা তাকে নার্সিংহোমে নিয়ে যান। বষ্টিতে ভিজে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁর শ্বাসকষ্ট শুরু হয়েছিল। এ দিন কিছুটা সুস্থ হলে তাঁকে নার্সিংহোম থেকে হোটেলে নিয়ে আসা হয়।
• একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার আবেদনে সাড়া দিয়ে তাদের প্রতিবন্ধী ছেলেমেয়েদের কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামে খেলা দেখার সুযোগ করে দেবে শিলিগুড়ি মহকুমা ক্রীড়া পরিষদ। ক্রীড়া পরিষদের সচিব অরূপ রতন ঘোষ জানান, আগামী ২৩ সেপ্টেম্বরের খেলাগুলি সংস্থার প্রতিবন্ধী ছেলেমেয়েদের দেখানোর জন্য আবেদন করেছেন কর্তৃপক্ষ। আমরা তার সুযোগ করে দেব। |
|