উঁচু-নিচু জমি। কোথাও বড় গাড্ডা। কোথাও আবার বৃষ্টির জলের আড়ালে সেটাও উধাও। স্যাঁতস্যাঁতে কাদা-মাটি, খাটালের চেয়েও জঘন্য অবস্থা। চতুর্দিক বাধা-বিপত্তিতে মোড়া। যেন মরণ-ফাঁদ পেতে রাখা হয়েছে!
জামশেদপুরের ঝাঁ-চকচকে শহরের সঙ্গে জেআরডি টাটা স্পোর্টস কমপ্লেক্সের মাঠকে কিছুতেই মেলানো যাচ্ছে না। মেলানো যাচ্ছে না, মসৃণ ঢালাই রাস্তার সামনে স্টেডিয়ামের ‘গোল সরণির’ করুণ দৃশ্য। যেখান দিয়ে কিনা র্যান্টি মার্টিন্স-কার্লোস হার্নান্ডেজরা জয়ের পতাকা নাড়াবেন? খুব সংক্ষেপে বললে, কোনও চমৎকার না হলে শনিবার ফেড কাপের দ্বিতীয় ম্যাচে প্রয়াগ ইউনাইটেডের বড় কাঁটা হয়ে উঠতে পারে স্টেডিয়ামের মাঠই। প্রতিপক্ষ পুণে এফসি নয়।
এ দিন রাতেই ফেডারেশনকে চিঠি দিয়ে ক্ষুব্ধ প্রয়াগ কর্তারা ব্যাখ্যা চাইলেন, কেন তাঁরা এই ম্যাচটা বয়কট করবেন না সেটা যেন এআইএফএফ তাদের জানায়। কালো ব্যাজ না পরে মাঠে নামলেও শনিবার সুব্রত পাল, গৌরমাঙ্গী সিংহেরা প্রতিবাদী মনোভাব নিয়েই ম্যাচটা খেলবেন। প্রয়াগ কর্তারা রীতিমতো বিস্মিত, গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচটা কিনান স্টেডিয়ামে সরিয়ে দিয়েও কেন আবার অজানা কারণে জেআরডি টাটা স্পোর্টস কমপ্লেক্সে ফেরানো হল? |
প্রয়াগের তারকায় মোড়া দলে আতঙ্কের মাল-মশলার কোনও কমতি নেই। মাঠের দুরবস্থা যদি এক নম্বর জায়গা দখল করে বসে থাকে, তা হলে প্রথম তিনের তালিকায় আরও কিছু গোলা-বারুদ লুকিয়ে আছে। যেখানে সঞ্জয় সেনের কোচিং যোগ্যতা ইতিমধ্যেই একটা বড় আলোচ্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রয়াগের অন্দরমহলে। বিশেষ করে ফেড কাপের প্রথম ম্যাচে সালগাওকরের কাছে অপ্রত্যাশিত হারের ধাক্কায় ঘোর সঙ্কটে সঞ্জয়ের কোচিং-ভবিষ্যৎ। ক্লাবের প্রধান স্পনসরদের মতে, তিনি র্যান্টি-কার্লোসদের মতো মহা-তারকাদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না। বরং তাঁর জায়গায় কোনও জাঁদরেল বিদেশি কোচ হলে প্রয়াগের এই হাল হত না। প্রশ্ন উঠছে তাঁর স্ট্র্যাটেজি নিয়েও। যেখানে মরসুমের শুরু থেকেই বিশ্বকাপার হার্নান্দেজকে মিডফিল্ডার বলে আসছিলেন সঞ্জয়, সেখানে হঠাৎ করে তাঁকে স্ট্রাইকারে খেলানো হল কেন?
স্পনসরদের আচরণে আবার সঞ্জয় পাল্টা বিরক্ত। তাঁর যুক্তি, “মাঠের মাঝখানটা একেবারেই খেলার জন্য যোগ্য নয়। হার্নান্দেজ ওখানে বল নিয়ন্ত্রণেই রাখতে পারবে না। সব ভেবেই ওকে ফরোয়ার্ডে খেলিয়েছিলাম।” তা হলে পুণে এফসি ম্যাচে ছক বদলানো হচ্ছে কেন? প্রয়াগের অনুশীলন দেখে যা মনে হল, শনিবার হার্নান্ডেজকে আবার মাঝমাঠে খেলানোর ভাবনা-চিন্তা করছেন কোচ। এবং ফরোয়ার্ডের দায়িত্ব সামলাবেন র্যান্টি-রফিক জুটি। কিন্তু ঘটনা হল, মাঠের অবস্থার কোনও উন্নতি হয়নি। তা হলে কি স্পনসরদের চাপেই ছক বদলাতে বাধ্য হলেন প্রয়াগ কোচ? কোনও সংশয় নেই যে, ফেড কাপের মার্কশিটের ওপর অনেকটাই নির্ভর করছে সঞ্জয়ের কোচিং-ভবিষ্যৎ।
বৃষ্টিভেজা মাঠে শুক্রবার ডেম্পো-লাজংয়ের খেলা দেখে মনে হচ্ছিল, ফুটবলাররা বল নিয়ন্ত্রণ করছেন না। বরং বল আপন মনে চলছে আর সেই মতো ঘূর্ণিপাক দিচ্ছেন সুয়োকা-মিরান্দারা। বল কখনও নিজের খুশিমতো থেমে যাচ্ছে, কখনও আবার এমন ছুটছে, পাত্তাই পাওয়া যাচ্ছে না। পরিস্থিতি যা, তাতে প্রতিভার ঝুলি ড্রেসিংরুমে রেখে তিনটে বিষয়ের ওপর বিশেষ নজর দিতে হচ্ছে। গায়ে-গতরের শক্তি, মানসিক দৃঢ়তা ও অসম্ভব ব্যালেন্স করার ক্ষমতা। কেননা বাকিটা শুধু লং বলের খেলা। যা দেখে স্বয়ং জাতীয় দলের কোচ উইম কোভারম্যান্স বিরতির পরেই স্টেডিয়াম ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন। ডেম্পো অবশ্য ১-০ জিতল মিরান্দার একমাত্র গোলে।
কোচ বনাম স্পনসর ঠান্ডা লড়াই, স্ট্রাইকারদের শূন্যতা এবং অবশ্যই বেহাল মাঠ। ত্র্যহস্পর্শের অন্ধকারের মধ্যে কি কোনও আলোর দেখা নেই প্রয়াগে? আছে। ডেরেক পেরেরার হাঁড়ির খবর জানা দুই ফুটবলার এখন প্রয়াগে— সুব্রত পাল ও লেস্টার ফার্নান্ডেজ। পুণের বিরুদ্ধে যা একটা বাড়তি সুবিধা হতে পারে।
এখন শুধু দেখার, শনিবারের ম্যাচে প্রয়াগের ভাগ্যে কী নাচছে— ‘এ ভাবেও ফিরে আসা যায়’ না ‘বাপি বাড়ি যা’। |