ভূগর্ভস্থ পাইপ ফেটে টানা দু’দিন প্রবল জলকষ্টে ভুগলেন উত্তরপাড়া থেকে চাঁপদানি পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষ। শুক্রবার রাত পর্যন্ত মেরামতির কাজ চলছে। আজ, শনিবার বিকেলের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বলে সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্তাদের আশা। ফলে, সম্ভবত আজ সকালেও জলকষ্ট থেকে রেহাই নেই শহরবাসীর।
বৃহস্পতিবারের মতো শুক্রবারেও সকাল থেকেই খাবার জল জোগাড় করতে নাভিঃশ্বাস ছোটে নাগরিকদের। হাতেগোনা যে কয়েকটি জায়গায় সরু সুতোর মতো জল পড়লে সেখানেই বালতি, কলসি, বোতল নিয়ে ভিড় জমিয়েছেন মানুষ। অভিযোগ, বেসরকারি একটি মোবাইল সংস্থা কেবল্ বসানোর কাজ করার সময় ওই পাইপ ফেটে যায়। বিষয়টি নিয়ে পুলিশ-প্রশাসনে অভিযোগ জমা পড়েছে। তদন্ত শুরু হয়েছে প্রশাসনিক স্তরে।
শ্রীরামপুরে জিটি রোডের ধারে মাটির নীচ দিয়ে কেএমডব্লিউএস-এর জলের পাইপ গিয়েছে। ওই দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, বৃহস্পতিবার সকালে শ্রীরামপুরের কালীতলায় উড়ালপুলে ওঠার মুখে মাটি খুড়ে কেবল্ বসানোর কাজ করছিল একটি বেসরকারি মোবাইল সংস্থা। সেই কাজ করতে গিয়েই সকাল সাড়ে ৬টা নাগাদ ওই জায়গায় জলের পাইপ ফেটে যায়। এর পরেই প্রবল বেগে সেখান দিয়ে জল বেরতে শুরু করে। বেগতিক বুঝে শ্রমিকেরা চম্পট দেয়। খবর যায় পুলিশে এবং শ্রীরামপুর পুরসভায়। সংশ্লিষ্ট লোকজন এসে জল সরবরাহ বন্ধ করে দেন। শুরু হয় পাইপ মেরামতের কাজ। |
এর ফলে চাঁপদানি, বৈদ্যবাটি, শ্রীরামপুর, রিষড়া, কোন্নগর এবং উত্তরপাড়া পুরসভার বিস্তীর্ণ এলাকায় জলের সংকট শুরু হয়ে যায়। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই ওই ৬টি পুরসভার বহু এলাকায় কলে একফোঁটাও জল আসেনি। কী কারণে জল বন্ধ কেউ তা বুঝে উঠতে পারেননি। পরিস্থিতি এমন হয়, রান্না-খাওয়ার জল জোগাড় করতে কার্যত ছুটোছুটি আরম্ভ হয়ে যায়। নলকূপগুলিতে ভিড় বাড়তে থাকে। বহু মানুষ গঙ্গায় বা পুকুরে গিয়ে স্নান সারেন। অথবা, জলট্যাঙ্কের ধারেকাছে হাতেগোনা যে কয়েকটি জায়গায় কলে জল এসেছে সেখানেই বিভিন্ন জায়গা থেকে বালতি-ড্রাম নিয়ে ছুটে এসেছেন মানুষ। নলকূপের সামনেও ভিড় বেড়েছে। শুক্রবার সকাল থেকেও হুবহু একই ছবি দেখা গিয়েছে। কেউ সাইকেলে, কেউ ভ্যানে করে দূর থেকে জল এনেছেন বাড়িতে।
শ্রীরামপুরের পুরপ্রধান অমিয় মুখোপাধ্যায় বলেন, “ওই মোবাইল সংস্থার বিরুদ্ধে প্রশাসন ব্যবস্থা নিক। আমরা মানুষকে জল পৌঁছে দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করেছি।” একই বক্তব্য বৈদ্যবাটির পুরপ্রধান অজয়প্রতাপ সিংহ এবং উত্তরপাড়া পুরসভার চেয়ারম্যান-ইন-কাউন্সিল দিলীপ যাদবের। তবে, দিনভর যে পরিমাণ জলের চাহিদা ছিল, পুরসভার পাঠানো গাড়ির জল স্বভাবতই ছিল সেই তুলনায় নগণ্য। সব জায়গায় গাড়ি পৌঁছনোও যায়নি। পুলিশ জানিয়েছে, শ্রীরামপুর পুরসভার তরফে থানায় লিখিত অভিযোগ জানানো হয়েছে। এসডিপিও রাজনারায়ণ মুখোপাধ্যায় বলেন, “অভিযোগ তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।” |
পরিস্থিতি আঁচ করে এসডিও জয়সি দাসগুপ্ত যোগাযোগ রাখছেন কেএমডব্লিউএস-এর অফিসারদের সঙ্গে। মহকুমা প্রশাসন সূত্রের খবর, আপাতত পাইপ লাইন সাময়িক ভাবে মেরামত করা হচ্ছে। ওই পাইপ কেনা হয়েছিল পুণের একটি সংস্থা থেকে। ওই সংস্থার বিশেষজ্ঞেরা এসে পাকাপাকি ভাবে মেরামত করবেন। কেএমডব্লিওএসএ-র চিফ ইঞ্জিনিয়ার প্রদীপ রায় শুক্রবার সন্ধ্যায় বলেন, “যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পাইপের ক্ষতিগ্রস্ত অংশ মেরামতের চেষ্টা করছি আমরা। আশা করছি শনিবার বিকেলে জল সরবরাহ করা যাবে।” প্রদীপবাবু বলেন, “বিষয়টি নিয়ে আমরা থানায় এবং এসডিও-র কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছি।” এসডিও বলেন, “কোনও মোবাইল সংস্থা ওই জায়গায় মাটি খুঁড়ে কাজ করার অনুমতি নেয়নি। আমরা তদন্ত করে দেখছি। তারপরেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রয়োজনে এফআইআর করা হতে পারে।”
|
ছবি দু’টি তুলেছেন প্রকাশ পাল। |