মাঠের জমা জলে ভাসছে খালি পাউচ প্যাকেট, বোতল। জরুরি বিভাগের পিছনের মাঠে জমিয়ে চলেছে নেশার আসর। কালো রঙের পিপে থেকে বড় ড্রামে ঢালা হচ্ছে সাদা রঙের তরল পদার্থ। ড্রাম থেকে তা ভরা হচ্ছে ছোট ছোট প্যাকেটে। আর, ওই তরলের কটু গন্ধই বলে দিচ্ছে সেটা চোলাই। রাতের অন্ধকারের নয়, ছবিটা প্রকাশ্য দিবালোকের। বেলুড়ের একটি হাসপাতালের ভিতরে এই ছবিই প্রমাণ করে দেয়, এলাকায় এখনও চোলাই বিক্রি পুরোপুরি বন্ধ করতে পারেনি প্রশাসন।
বালি-জগাছা ব্লকের চাঁদমারি এলাকায় প্রায় ২২ বিঘা জমি জুড়ে বেলুড় ইএসআই হাসপাতাল। ২০০ শয্যার এই হাসপাতালটি রাজ্যের একমাত্র ইএসআই হাসপাতাল যেখানে শুধুমাত্র যক্ষ্মা রোগীদেরই চিকিৎসা হয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, সব সময়েই হাসপাতাল চত্বরে চলে নেশা ও জুয়ার আসর। আরও অভিযোগ, সেই আসরে গিয়ে যোগ দেন অনেক রোগীও। হাসপাতালের পরিত্ত্যক্ত বিল্ডিং ও ঘরগুলি দুষ্কৃতীদের আখড়া।
বাসিন্দাদের অভিযোগ মেনে নিয়েছেন হাসপাতালের সুপার বারীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, “অসামাজিক ও দুষ্কৃতীমূলক কাজকর্ম রুখতে পুলিশের সাহায্য চেয়ে চিঠি দিয়েছি। কিন্তু লাভ হয়নি।” স্থানীয় তৃণমূল নেতা বাবু মণ্ডল বলেন, “আগেও কয়েক বার চোলাইয়ের ঠেক ভেঙে দিয়েছি। কিন্তু ফের গজিয়ে উঠেছে। হাসপাতালটা দুষ্কৃতীদের একটা আখড়া হয়ে উঠেছে।” |
হাসপাতালে ঢোকার মুখেই একটি বড় গেট। সেখান থেকে কংক্রিটের রাস্তা ধরে এগোলেই বাঁ দিকে রয়েছে একটি মন্দির ও মাঠ। বাসিন্দাদের অভিযোগ, ওই মন্দির চত্বরে ও মাঠের চারপাশে বসে প্রকাশ্যেই চলে মদ্যপান। সেই অভিযোগ যে অমূলক নয়, তারও প্রমাণ মিলল হাসপাতাল চত্বরে। জল জমা মাঠের পাশে কংক্রিটের রাস্তার উপর বসেই প্যাকেট ছিঁড়ে চোলাই খাচ্ছেন একদল লোক।
মন্দির ও মাঠ ছেড়ে কিছুটা এগিয়ে যেতেই সামনে দোতলা হাসপাতাল ভবন। ভবনের জরুরি বিভাগের পিছনে একটি ভাঙা ঘরের সামনে গাছতলায় জমিয়ে বসেছে নেশার আসর। হাসপাতাল কর্মীদের কথায়, আগে ওই পরিত্ত্যক্ত ঘরেই চলত চোলাই বিক্রি। সামনে যেতে দেখা গেল, ইটের স্তূপের মধ্যে কালো প্লাস্টিকের ছাউনি দেওয়া একটি গুমটি। বসে আছেন কয়েক জন লোক। এক জন ড্রাম থেকে চোলাই তুলে পাউচে ভরছেন। অন্য এক ব্যক্তি সেই প্লাস্টিক পাউচের মুখ বন্ধ করে বাজারের ব্যাগে ভরছেন। পাশে সাইকেলে ঝোলানো রয়েছে কালো রঙের অনেকগুলি পিপে। জানা গেল, সেখানে চোলাইয়ের একদাম, ‘১০ টাকা।’ খুচরো বিক্রির পাশাপাশি চোলাই ভর্তি পাউচ বাজারের ব্যাগে ভরে চলে যায় অন্যত্র।
হাসপাতালের কর্মীদের একাংশের অভিযোগ, ভোর সাড়ে পাঁচটা থেকে শুরু করে রাত সাড়ে ১২টা-১টা পর্যন্ত চলে এই মদ্যপান। প্রতিদিন ভোরে সাইকেলে করে হুগলির বেগমপুর, বারুইপাড়া থেকে পিপে ভর্তি চোলাই আসে বেলুড়ের এই হাসপাতালে। বিকেল ৪টে থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত রোগীদের ওয়ার্ডের বাইরে হাসপাতাল চত্বরে বেরোতে দেওয়া হয়। অভিযোগ, সে সময়ে নেশার আসরে রোগীদের পাশাপাশি যোগ দেন বহিরাগতেরাও। অভিযোগ কার্যত মেনে নিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও।
আবার, বেলুড় চাঁদমারি এলাকা থেকে প্রান্তিক, আনন্দনগর এলাকা যাওয়ার একমাত্র সহজ রাস্তা এই হাসপাতালের ভিতর দিয়েই গিয়েছে। ফলে রোজ অসংখ্য মানুষ ওই রাস্তা ব্যবহার করেন। বাসিন্দাদের অভিযোগ, নেশার আসর চলায় মহিলা ও শিশুরা দিনেই ওই রাস্তা দিয়ে যেতে ভয় পান। রাতে ওই রাস্তা এড়িয়ে চলেন পুরুষেরাও। হাওড়া কমিশনারেটের ডিসি (সদর) নিশাদ পারভেজ বলেন, “কোনও হাসপাতালে এমন ঘটনা চলতে দেওয়া যেতে পারে না। বিষয়টি খোঁজ নিচ্ছি। বালি থানাকে নির্দেশ দেব অবিলম্বে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য।” |