বিপদসীমার উপরে ব্রহ্মপুত্র, ফের বন্যা অসমে
ন্যার তোড়ে বাকি দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল নদীদ্বীপ মাজুলি, ধেমাজির শদিয়া ও অরুণাচলের কিছু অংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় অসম, অরুণাচলে বন্যার প্রকোপ আরও বেড়েছে। সরকারি হিসেবে, অসমের ১৩ জেলায় প্রায় ৪ লক্ষ মানুষ বন্যাকবলিত। আজ মাজুলিতে ব্রহ্মপুত্রের জলে পুরো দ্বীপের ৯০ শতাংশ গ্রামই জলমগ্ন হয়ে যায়। ধেমাজি জেলার প্রায় অর্ধেক বানভাসি। নতুন করে বন্যার জল ঢুকেছে কাজিরাঙা জাতীয় উদ্যানেও। পাশাপাশি, অরুণাচলে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ। এখন অবধি বন্যায় অসমে ৩ ছাত্র ও অরুণাচলে এক ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে।
গত কয়েকদিনের ক্রমাগত বৃষ্টিতে অরুণাচলের লোহিত ও পূর্ব সিয়াং জেলার অবস্থা শোচনীয়। গত কাল, বালিজানের বন্যাকবলিতদের উদ্ধার করে একটি গাড়ি ফিরছিল। সুনপুরার কাছে জলের তোড়ে গাড়িটি ভেসে যায়। বাকিদের উদ্ধার করা গেলেও বাবলু নাথ নামে এক কলেজ ছাত্রের মৃত্যু হয়। এ ছাড়া, সুনপুরার ভিকেভি স্কুল থেকে ৯৪ জন ছাত্রছাত্রীকে সিআরপিএফ উদ্ধার করে। লোহিত, কামলাং ও তাদের উপনদীগুলির জল ক্রমশ বাড়ছে। এমন কী জুন মাসের উচ্চতম জলসীমাও ছাপিয়ে গিয়েছে। আলুবাড়ি, নোপাতিয়া, মারিবা, মোরাপাট বাকি ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন। নোয়া ডিহিং নদীর জলও পাড় ছাপিয়েছে। ডুবেছে স্থানীয় বিধায়ক সি টি মেইনের বাড়ি। নামসাইয়ের অবস্থাও তথৈবচ। পানিং-পাসিঘাটে রাস্তা বিচ্ছিন্ন। পূর্ব সিয়াং কার্যত রাজ্য থেকে পৃথক হয়ে পড়েছে। মেবো-ঢোলা রোডও ধসের কারণে বন্ধ। অন্তত ন’টি সেতু হয় ধসে গিয়েছে, না হলে অগম্য। বেশ কিছু স্কুলও ধসে চাপা পড়েছে। তবে স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের প্রাণহানি হয়নি। সাংলের দইমুখ-সাংলে রোড, সাংলে-সাকিং রোড বন্ধ।
ব্রহ্মপুত্রের জল মাপছেন সংশ্লিষ্ট দফতরের এক কর্মী। শুক্রবার গুয়াহাটিতে উজ্জ্বল দেবের তোলা ছবি।
লোহিত জেলার তেজু থেকে পরশুরাম, তিনসুকিয়া ও আলুবাড়ি যাওয়ার রাস্তা বন্ধ। তোহাংগাম থেকে ব্রহ্মকুণ্ড অবধি তিনটি স্থানে বড় ধস নেমেছে। তেজুর বাঁধ উপছে দিহিং নদীর জল ধর্মপুরে ঢুকে পড়েছে। লোহিতের জেলাশাসক আর কে শর্মা জানান: লোহিত, কামলাং, নোয়া ডিহিং, তেজু নালা, তাবাং নালা, সিবরি, ডেনিং নালার জল ক্রমশ বাড়ছে। তেজু শহরে বিদ্যুৎ ও পানীয় জল সরবরাহ ভেঙে পড়েছে। বন্যা পরিস্থিতি সামলাতে মুখ্যমন্ত্রী নাবাম টুকি ‘চরম সতর্কতা’ জারি করে জরুরি ভিত্তিতে সব জেলাশাসককে ১০ লক্ষ টাকা করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।
পাশাপাশি, অসমের ধেমাজি, লখিমপুর, ডিব্রুগড়, তিনসুকিয়া, কামরূপ, বাক্সা, উদালগুড়ি প্রভৃতি জেলায় বন্যার প্রকোপ প্রবল। সব মিলিয়ে বন্যা কবলিতের সংখ্যা ৪ লক্ষেরও বেশি। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত জেলা ধেমাজি। এখানকার অর্ধেকই আপাতত জলের তলায়। ভেসে গিয়েছে একটি স্কুলও। গত কাল উজানি অসমের তিনসুকিয়ার ঢোলা ঘাটে বিপদসীমার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ব্রহ্মপুত্র পার হওয়ার সময় নৌকা উল্টে ডুমডুমা কলেজের দুই ছাত্র রাজকুমার চৌধুরী ও দিলীপ মাল্লার মৃত্যু হয়েছে। আজ ডিব্রুগড়ে বন্যার জলে ভেসে গিয়েছেন এক ব্যক্তি। ঢোলা ও শদিয়ার মধ্যে নৌচলাচল বন্ধ। মাজুলির সোনোয়াল কাছারি এলাকায় দু’মাসের মধ্যে দ্বিতীয়বার বাঁধ ভাঙল। জলসম্পদ উন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী তথা মাজুলির বিধায়ক রাজীবলোচন পেগুর বাড়িও রেহাই পায়নি। পেগু জানান, কয়েকটি গ্রাম বাদে, পুরো মাজুলি জলমগ্ন। মাজুলি ও শদিয়া গোটা দেশ থেকে আপাতত বিচ্ছিন্ন। নিমাতিঘাটে ব্রহ্মপুত্র বিপদসীমার ১ মিটার উপর দিয়ে বইছে। প্লাবিত হয়েছে ডিব্রুগড়ও। ভুটানের দিক থেকে জল বেড়ে নামনি অসমের বাক্সার ৩টি ও উদালগুড়ির ২টি গ্রাম জলমগ্ন হয়েছে। গুয়াহাটি থেকে এনডিআরঅফ-এর দুটি বাহিনী উজানি অসমে গিয়েছে। রাঙাজান, রাঙানদী, দিহিং, কপিলি, টিংরা নদীর জল বিপদসীমা ছুঁই ছুঁই। ৫২ নম্বর জাতীয় সড়ক ডুবে অসম-অরুণাচলের মধ্যে যান চলাচলও বিঘ্নিত হচ্ছে। টিওক, চাবুয়া, ঢোকুয়াখানা, নলবাড়িতেও বন্যার জল ঢুকেছে।
এই অকাল বন্যায় আতঙ্কিত বন দফতরও। ডিব্রু শইখোয়া ও কাজিরাঙা জাতীয় উদ্যানে গত কালই ব্রহ্মপুত্রের জল ঢুকে পড়েছে। ডিব্রু শইখোয়ার বহু প্রাণী আশপাশের চা-বাগানে ঢুকে পড়েছে। এ বারের বর্ষার বন্যায়, ১৯টি গন্ডার, ১১টি বারাশিঙা, চারটি বাইসন, ৫২৯টি হগ ডিয়ার-সহ ৬৩১টি প্রাণী কাজিরাঙায় মারা যায়। ফের বন্যায় এক দিকে যেমন পশুমৃত্যুর আশঙ্কা দেখা দিয়েছে, তেমনই পুজোর মরশুমে উদ্যান খোলা যাবে কি না তা নিয়েও সংশয়ে বন দফতর।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.