|
|
|
|
বুলেট থেকে ব্যালট |
গণতন্ত্রের পথে গারো জঙ্গি গোষ্ঠী |
রাজীবাক্ষ রক্ষিত • গুয়াহাটি |
সশস্ত্র বিপ্লব থেকে সরাসরি গণতন্ত্রের পথেই চলতে চাইছেন গারো জঙ্গি প্রধান। বুলেট নয়, তিনি বুঝেছেন ব্যালটের ক্ষমতা অনেক বেশি। আর তাই লালডেঙ্গা, জোরাম থাঙ্গার পথে হাঁটতে চাইছেন মেঘালয়ের গারো ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (জিএনএলএ) শীর্ষক দুঁদে জঙ্গি সংগঠনটির প্রধান, চ্যাম্পিয়ন আর সাংমা। আগামী নির্বাচনে কংগ্রেসকে সমর্থন করার জন্য তিনি তাঁর সংগঠনকে নির্দেশও দিয়েছেন।
গত কয়েক বছরে নিরাপত্তা কর্মীদের ঘোল খাইয়ে দিয়েছিলেন চ্যাম্পিয়ন। মেঘালয় পুলিশের একদা ডেপুটি পুলিশ সুপার (ডিএসপি) হঠাৎই একদিন স্রেফ উবে গিয়েছিলেন। পুলিশের বেশ কিছু আধুনিক রাইফেল নিয়ে গিয়ে দায়িত্ব
|
জিএনএলএ প্রধান
চ্যাম্পিয়ন আর সাংমা |
নিয়েছিলেন জিএনএলএ। এবং এই প্রাক্তন পুলিশ অফিসারের নেতৃত্বে গারো পাহাড়ে ত্রাস হয়ে উঠেছিল জিএনএলএ। গত কয়েক বছরে পুলিশের বিরুদ্ধে একটার পর একটা অ্যাকশন করেছে তারা। কম্যান্ডো বাহিনী ‘সোয়াট’-এর জওয়ানদের বার বার ফাঁদে ফেলেছেন চ্যাম্পিয়ন। মাস কয়েক আগে বাংলাদেশে ধরা পড়েন চ্যাম্পিয়ন সাংমা। সম্প্রতি বাংলাদেশ তাঁকে ভারতের হাতে তুলেও দিয়েছে। এরপরেই শান্তি আলোচনার প্রস্তাব দেন চ্যাম্পিয়ন। এ বার আরও এক প্রস্থ এগিয়ে চ্যাম্পিয়ন ঠিক করেছেন, মেঘালয়ের আগামী বিধানসভা নির্বাচনে তিনি সরাসরি লড়বেন। তাঁর আশা, কেন্দ্রের সঙ্গে শান্তি আলোচনার পাশাপাশি, ভোটে জিতে রাজ্যেও ক্ষমতায় ভাগীদার হতে পারবেন তিনি। এবং সে ক্ষেত্রে গারো পাহাড়ের উন্নয়নে সক্রিয় ভূমিকা নিতে পারবেন। বুলেট দিয়ে যা পারেননি, ব্যালট দিয়ে সেটাই করতে চান এই গারো জঙ্গি নেতা।
জঙ্গলের জঙ্গি ঘাঁটি থেকে সোজা রাজনীতির আঙিনায় আসার ঘটনা উত্তর-পূর্বে নতুন কিছু নয়। ১৯৬০ সাল থেকে মিজোরামে জঙ্গি আন্দোলন চালানো লালডেঙ্গা ১৯৮৬ সালে, শান্তি আলোচনার পরে কংগ্রেসি মুখ্যমন্ত্রী লাল থানহাওলাকে হঠিয়ে মুখ্যমন্ত্রী হন। তাঁর একসময়ের সহকর্মী, অপর জঙ্গি নেতা জোরম থাঙ্গা লালডেঙ্গার আমলে অর্থ ও শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন। পরে ১৯৯৮ ও ২০০৩ সালে তিনি মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী হন। অসমের বড়োল্যান্ড টাইগার্স-এর নেতা হাগ্রামা মহিলারি, বড়ো চুক্তির পরে, বড়ো পিপলস্ ফ্রন্টের নেতা হয়ে বড়োল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অটোনমাস ডিস্ট্রিক্টস্-এর (বিটিএডি) সর্বেসর্বা হয়ে বসেছেন।
চ্যাম্পিয়ন অবশ্য এখনই এতদূর ভাবছেন না। এখনও কারাবন্দী তিনি। জামিনের আবেদন বারবার খারিজ হয়েছে। গত কাল ফের ১৪ দিনের হেফাজত শেষে তাঁকে শিলং সিজেএম আদালতে আনা হয়। কিন্তু বন্ধে আদালত অচল থাকায় ২৫ সেপ্টেম্বর তাঁর শুনানির দিন ধার্য্য হয়েছে। আদালত চত্বরে দাঁড়িয়েই চ্যাম্পিয়ন সাংমা জানান, ২০১৩ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তিনি লড়বেন। শান্তি প্রক্রিয়া সুগম করার জন্যই তাঁর এই সিদ্ধান্ত। তিনি বলেন, “আমি বিধানসভায় নির্বাচিত হলে, আমার সংগঠনের সঙ্গে কেন্দ্র ও রাজ্যের শান্তি প্রক্রিয়া ত্বরাণ্বিত হবে। তবে কোন কেন্দ্র থেকে আমি লড়ব তা এখনই জানাচ্ছি না।”
চ্যাম্পিয়ন বা জিএনএলএ সেনাধ্যক্ষ সোহন ডি শিরার বক্তব্য হল, যদি নাগাদের জন্য নাগাল্যান্ড, মিজোদের জন্য মিজোরাম গড়া হতে পারে, তবে গারোদের জন্য গারোল্যান্ড নয় কেন? জিএনএলএ সংগঠনে প্রায় ২০০ সশস্ত্র জঙ্গি রয়েছে। গত এক বছরে নিরাপত্তাবাহিনীর জওয়ান-সহ ৩৫ জনকে হত্যা করেছে তারা। অপহরণ করেছে অন্তত ২৫ জনকে। অবশ্য, চ্যাম্পিয়ন শান্তি চাইলেও, পৃথক গারো রাজ্য গঠনের শর্ত মানতে রাজি নয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের যুগ্ম সচিব শম্ভু সিংহ বলেন, “মেঘালয় এমনিতেই ছোট রাজ্য। একে আর টুকরো করা সম্ভব নয়। তা ছাড়া কৃতকর্মের জন্য জঙ্গিদের বিচারের সামনে দাঁড়াতেই হবে।” রাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী এইচডিআর লিংডোর কথায়, “আমরা আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ ভাবে সমস্যা মেটাতে চাই। কিন্তু জিএনএলএকে প্রথমে অস্ত্র ত্যাগ করে, সন্ত্রাস বন্ধ করে, আলোচনার পরিবেশ তৈরি
করতে হবে।”
এই পরিস্থিতিতে চ্যাম্পিয়ন ‘সংগঠন ও কেন্দ্রের মধ্যে জট কাটাবার স্বার্থে’ ভোটে দাঁড়াতে চাইছেন। চ্যাম্পিয়নের বিরুদ্ধে মোট ৯টি মামলা ঝুলছে। নিয়মিত বিভিন্ন আদালতে হাজির করাতে
হচ্ছে তাঁকে। বারবারই খারিজ হচ্ছে তাঁর জামিনের আবেদন। |
|
|
|
|
|