সাত নম্বর রেসকোর্স রোড বহু দিনের চেনা ঠিকানা তৃণমূল নেতা তথা মন্ত্রীদের কাছে। একাধিক বার রাজ্যের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে এখানে দরবার করে গিয়েছেন সৌগত রায়, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়রা।
রাষ্ট্রপতি ভবনও মুকুল রায়-শিশির অধিকারীদের কাছে কোনও নতুন গন্তব্য নয়। এই তো মাত্র পাঁচ মাস আগে এক বসন্তের সকালে অশোক হল-এ শপথবাক্য উচ্চারণ করেছিলেন মুকুলবাবু।
সেই সব দিনগুলোর মতোই অজস্র ফ্ল্যাশের ঝলক, সংবাদমাধ্যমের প্রবল ভিড়, ‘বাইট’-এর জন্য কাড়াকাড়ি এ সব আজও ছিল। কিন্তু রাজধানীর পড়ন্ত বিকেলে তৃণমূলের ছয় সাংসদের প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন এবং রাষ্ট্রপতি ভবন ‘অভিযানের’ ছবিটা যেন ভাঙা হাটের। কলকাতা থেকে নয়াদিল্লি গত এক সপ্তাহ ধরে রাজনৈতিক টানাপোড়েনের যে চিত্রনাট্য লেখা হচ্ছিল, আজ তার শেষ দৃশ্য রচিত হয়ে গেল। ছ’জন তৃণমূল নেতা প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে ঢুকলেন মন্ত্রী হিসেবে, বাইরে যখন এলেন, তখন তাঁরা শুধুই সাংসদ। পরে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় জানালেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তিনি তৃণমূলের মন্ত্রীদের বাধ্যবাধকতা বোঝেন। |
যে মন্ত্রীদের অফিসে আজ সকাল থেকে বিসর্জনের সুর। চলেছে ব্যক্তিগত কাগজপত্র, জিনিস বাঁধাছাঁদা। সুদীপবাবু বলছিলেন, “অনেক কাগজই রয়ে গেল, কত আর নেব। বিবেকানন্দ আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি দু’টো সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছি।” বছরখানেক ছিল তাঁর মন্ত্রিত্বের মেয়াদ। শেষ বারের মত অফিসঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার আগে চারদিকে চোখ বুলিয়ে সুদীপ বললেন, “এইমস-এর মতো হাসপাতাল যাতে কল্যাণীতে করা হয়, তার জন্য আজ সকালেও কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী গুলাম নবি আজাদকে বলেছি। চিঠিও দিয়েছি।” “মন্ত্রিত্বের পরেও জীবন রয়েছে”, উপলব্ধি সৌগত রায়ের। কেমন সেই লালবাতিহীন গাড়ির ‘জীবন’? সৌগতবাবু জানালেন, “এত দিন মন্ত্রী থাকার জন্য সংসদে বিভিন্ন বিষয়ে মন খুলে কথা বলতে পারিনি। সরকারের অনেক নীতির প্রতিবাদ করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু এ বার সেটাই করব।” শুধুমাত্র পদত্যাগেই শেষ নয়, সরকারের ‘জনবিরোধী’ বিভিন্ন পদক্ষেপের বিরুদ্ধে তৃণমূল সাংসদরা এ বার সংসদের ভিতরে-বাইরে সরব হবেন বলে জানিয়েছেন মুকুল রায়। তাঁর কথায়, “বিরোধিতা কাকে বলে এ বার দিল্লিতে তৃণমূল সেটা দেখাবে।”
আজ সাউথ অ্যাভিনিউয়ে তৃণমূলের দলীয় অফিসে বিকেল তিনটেয় জড়ো হন তৃণমূলের ছয় মন্ত্রী। ঠিক হয় সরকারি গাড়িতে নয়, ব্যক্তিগত গাড়িতে চড়েই পদত্যাগপত্র জমা দিতে যাওয়া হবে। সেই মতো সব যখন তৈরি, তখন বিপত্তি হয় সুলতান আহমেদকে নিয়ে। তিনি নমাজ পড়ে চলে এসেছেন ঢের আগে, কিন্তু আসেনি তাঁর পদত্যাগপত্রটি! পরে তাঁর সচিব সেটি নিয়ে আসায় স্বস্তি।
সাত রেসকোর্সে পৌঁছনোর পর প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের সঙ্গে নামমাত্র সৌজন্যমূলক কথা হয় তাঁদের। ঘরের আবহাওয়া ছিল কিছুটা গুমোট। এমনকী চা-ও খেতে চাননি তৃণমূল নেতারা। দলের তরফে ইস্তফাপত্রগুলি তুলে দেন মুকুল রায়। তৃণমূল জোট ছাড়ায় রীতিমাফিক দুঃখপ্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। এক সাংসদ জানান, তৃণমূলের তরফেও আনুষ্ঠানিক ভাবে ধন্যবাদ জানানো হয় প্রধানমন্ত্রীকে।
রাষ্ট্রপতি ভবনের আবহাওয়া অবশ্য অনেকটাই সহজ ছিল। রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় তৃণমূল নেতাদের কাছ থেকে সমর্থন প্রত্যাহারের চিঠি গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতি ভবনের ইতিহাস-ভূগোল নিয়ে গল্পও করেছেন। সদ্যপ্রাক্তন মন্ত্রীরা এখানে চা খেয়েছেন। সঙ্গে মিষ্টিও। |