তৃণমূল কেন্দ্রের উপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহারের ঠিক পাঁচ দিন পরে, ২৬ সেপ্টেম্বর, কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী তথা এনসিপি নেতা শরদ পওয়ার কলকাতা যাচ্ছেন পূর্বাঞ্চল ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মুখ্যমন্ত্রীদের নিয়ে একটি বিশেষ বৈঠক করতে। বৈঠকের বিষয়বস্তু সবুজ বিপ্লব।
এই বৈঠক নিয়ে খুবই উৎসাহী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কেন্দ্রের কাছ থেকে দাবিদাওয়া আদায়ের লক্ষ্যে মুখ্যমন্ত্রীদের জোট গড়ার সম্ভাবনার নিরিখেই এই বৈঠককে দেখতে চাইছেন তিনি। প্রাথমিক ভাবে এই বৈঠকে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। কিন্তু মমতাই কেন্দ্রকে বলেন, পূর্বাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য হিসেবে বিহারকেও ডাকা উচিত।
এর পর নীতীশকে নিজেই ফোন করেন মমতা। নীতীশের সচিবালয় সূত্রে বলা হচ্ছে, বৈঠকের কথা আগে থেকে জানা না থাকায় ওই দিন দ্বারভাঙায় মুখ্যমন্ত্রীর কর্মসূচি রয়েছে। তিনি নিজে যেতে না পারলেও রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী বা অন্য কেউ বৈঠকে যাবেন। (ওড়িশাও জানাচ্ছে, নবীন না পারলে অন্য কাউকে পাঠানো হবে) তবে মুখ্যমন্ত্রীদের জোট নিয়ে মমতার ভাবনার সঙ্গে তিনি যে সহমত, সে কথা জানিয়ে নীতীশ বলেছেন, “পূর্বাঞ্চলের চাহিদার বিষয়গুলি নিয়ে একজোট হওয়ার সময় এসেছে। সব সময় যে কেন্দ্রের মধ্যস্থতায় এই ধরনের বৈঠক করতে হবে, তার কোনও অর্থ নেই। মমতা আমন্ত্রণ জানালে যে কোনও দিন কলকাতায় গিয়ে বৈঠক করতে পারি।” মমতাও চান, পূর্বাঞ্চলীয় মুখ্যমন্ত্রীদের এই ধরনের সম্মেলন আরও বেশি বেশি করে হোক। নীতীশ-নবীনদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়ে সর্বভারতীয় রাজনীতির কেন্দ্রে উঠে আসতে চাইছেন তিনি। |
ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি আর খুচরো ব্যবসায়
বিদেশি লগ্নির বিরোধিতাকে হাতিয়ার করেও সেই একই পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছেন তৃণমূল নেত্রী। যে দিন কলকাতায় মুখ্যমন্ত্রীদের সম্মেলন, সে দিনই দিল্লির যন্তর-মন্তরে ধর্নার কর্মসূচি নিয়েছে তৃণমূল। পাশাপাশি, কেন খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নির বিরোধিতা করছেন তা বোঝাতে বিভিন্ন রাজ্যে সফর করবেন বলে জানিয়েছেন মমতা। এক প্রশ্নের জবাবে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, তিনি অচলাবস্থা চান না। তা সত্ত্বেও কেন সমর্থন প্রত্যাহারে বাধ্য হলেন, সেটাই বোঝাবেন দেশের লোককে।
মমতার এই পরিকল্পনা থেকে স্পষ্ট যে, বঙ্গোপসাগরের তীরে বসে ‘দিল্লি চলো’ রাজনীতির নতুন অধ্যায় শুরু করতে চাইছেন তিনি। আজ মুকুল রায়রা যখন রাষ্ট্রপতি ভবনে গিয়ে ইউপিএ সরকারের উপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহারের চিঠি দিচ্ছেন, তখন উত্তর ২৪ পরগনার গাইঘাটায় মমতা বলছেন, বাংলাই দিল্লি তথা গোটা দেশকে পথ দেখাবে।
জাতীয় রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টায় আরও একটি কৌশল নিয়েছেন মমতা। সেটি হল, খুচরো ব্যবসায় বিদেশি বিনিয়োগের বিষয়টি সংসদে উত্থাপন করা। কংগ্রেসের সঙ্গ ত্যাগ করলেও মুসলিম ভোটব্যাঙ্কের দিকে তাকিয়ে তৃণমূল কোনও অবস্থাতেই এনডিএ-র দিকে ঝুঁকছে না। মমতা বিজেপি নেতাদের স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন যে, খুচরোয় বিদেশি লগ্নির ব্যাপারে বিজেপি যদি কোনও প্রস্তাব সংসদে নিয়ে আসে, তা হলে তাঁর পক্ষে সেটা সমর্থন করা সম্ভব নয়। বিকল্প হিসেবে তৃণমূলই একটা প্রস্তাব আনতে চায়।
মুকুল রায় আজ বলেন, “রাষ্ট্রপতিকে জানিয়েছি, খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নির বিষয়ে সংসদে আলোচনা হোক। তাতে ভোটাভুটির দাবিও জানিয়েছি।” অন্য দিকে এই প্রশ্নে সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডাকার দাবি জানিয়েছেন বিজেপি নেতা লালকৃষ্ণ আডবাণী। কংগ্রেস অবশ্য বলছে, প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে খুচরো ব্যবসায় বিদেশি বিনিয়োগের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তা নিয়ে সংসদে বিশেষ অধিবেশন ডাকার বা ভোটাভুটি করার অবকাশ নেই। সরকার বিশেষ অধিবেশনে রাজি না হলে নভেম্বরে শীতকালীন অধিবেশনে প্রসঙ্গটি উঠবে।
সংসদে খুচরো ব্যবসার প্রসঙ্গ যবেই উঠুক, মমতার রণকৌশল কিন্তু স্পষ্ট। এক দিকে তিনি যেমন পঞ্চায়েত ভোটের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন, কর্মশালা করছেন, তেমনই অন্য দিকে জাতীয় রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেওয়ার তোড়জোড় করছেন। ভোট এগোতে পারে ধরে নিয়ে তার ক্ষেত্রও প্রস্তুত করছেন তিনি। তাই সুসম্পর্ক বজায় রাখছেন মুলায়ম সিংহ যাদবের সঙ্গে। রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে মতবিরোধ হলেও মুলায়মের বিরুদ্ধে কোনও মন্তব্য করেননি মমতা। উল্টে সম্প্রতি মুলায়ম-পুত্র অখিলেশের সঙ্গে বৈঠকও করেছেন।
বস্তুত, লোকসভা ভোট সময়ের আগে হতে পারে এমন ইঙ্গিত কংগ্রেস সূত্রেই মিলছে। বলা হচ্ছে, সংস্কার নিয়ে মনমোহন সরকার এগিয়ে যাবে। কোনও ভাবেই আর আপস করা উচিত হবে না। তা হলে কংগ্রেসেরই বিপদ হবে। তবে যদি দেখা যায় যে মায়াবতী ও মুলায়ম খুব বেশি রকম সমস্যা তৈরি করছেন, তা হলে নির্ধারিত সময়ের আগেই ভোটে চলে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে কংগ্রেসের। আর সেটা আঁচ করেই অতিসক্রিয় হয়ে জাতীয় রাজনীতিতে নামছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। |