|
|
|
|
নাগাল্যান্ড |
পুলিশের একাংশই সরকারি অস্ত্র পাচার করছে জঙ্গিদের |
নিজস্ব সংবাদদাতা • গুয়াহাটি |
ভিন রাজ্য বা ভিন দেশের পাচারকারীর দরকার কী? বিশেষ করে, রাজ্যের অস্ত্রাগার থেকে যখন নিয়মিত জঙ্গিদের কাছে অস্ত্র পৌঁছে দিচ্ছে খোদ পুলিশই! কেঁচো খুঁড়তে এমনই কেউটের সন্ধান মিলল নাগাল্যান্ডে। সম্প্রতি, একাধিক পুলিশকর্মী জঙ্গিদের হাতে পুলিশের অস্ত্র পাচার করতে গিয়ে ধরা পড়েছেন। সেই মামলার তদন্ত করতে গিয়েই জানা গিয়েছে: একটি-দুটি নয়, গত ১২ বছরে নাগাল্যান্ড পুলিশের অস্ত্রাগার থেকে মোট ১৫২টি রাইফেল ও ৪৪,৫৫০ রাউন্ড কার্তুজ উধাও। তদন্তকারীদের সন্দেহ, এর সবই নাগা জঙ্গি গোষ্ঠীগুলির কাছে মোটা দামে বিক্রি করা হয়েছে।
গত এপ্রিল মাসে পুলিশ বিভাগে অস্ত্র কেলেঙ্কারি প্রথম ফাঁস হয়। ওখার পুলিশ সুপার এস সেজংমং সাংগতাম ও দুই এসআই বরখাস্ত হন। জামিন পেয়ে ফের অস্ত্র পাচারের চেষ্টা করেছিলেন সশস্ত্র ব্যাটালিয়নের এসআই সসিৎসুংবা আও। পুলিশের অস্ত্রাগার থেকে ডেনমার্কে তৈরি মেশিনগান (এমএমজি) সাত লক্ষ টাকার বিনিময়ে বিক্রি করার সময় হাতেনাতে ধরা পড়ে সে। তদন্তে জানা গিয়েছে, অনুশীলনের জন্য আসা পুলিশের অস্ত্র ও কার্তুজ গত সাত বছর ধরে এনএসসিএন (আইএম) জঙ্গি সংগঠনকে বিক্রি করা হচ্ছিল। আজ নাগাল্যান্ডের বিধানসভা অধিবেশনে সরকারের দেওয়া হিসেবে জানা গিয়েছে, উধাও হওয়া রাইফেলের সংখ্যা ১৫২। এরমধ্যে রয়েছে বেশ কিছু একে ৪৭, এসএলআর, মেশিনগান ও কার্বাইন।
মুখ্যমন্ত্রী নেফিয়ু রিও জানান, ঘটনাটি জানতে পেরে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক অত্যন্ত ক্ষুব্ধ। তিনি বলেন, “রাজ্যের পুলিশকর্তা ও কর্মীরা যে ভাবে অস্ত্রাগারে লুন্ঠন চালাচ্ছেন তাতে রাজ্যের মাথা গোটা দেশের কাছে হেঁট হয়ে গিয়েছে। কেন্দ্র ও রাজ্য এক যোগে জঙ্গি-পুলিশ যোগসাজশ বন্ধে উদ্যোগী হবে।” কেবল অস্ত্র পাচারই নয়, অন্তত ১২ জন পুলিশকর্মী অস্ত্র নিয়ে জঙ্গি শিবিরে যোগ দিয়েছেন। যেহেতু রাজ্য ও কেন্দ্রের সঙ্গে সব ক’টি নাগা জঙ্গি গোষ্ঠীর সংঘর্ষবিরতি রয়েছে, তাই জঙ্গি শিবিরে হানা দিয়ে তাদের গ্রেফতার করাও সম্ভব হচ্ছে না। রিও জানান, অস্ত্র নিয়ে পালিয়ে জঙ্গি বনে যাওয়া পুলিশকর্মীদের নামে মামলা দায়ের করা হয়েছে। কেন্দ্র নির্দেশ দিয়েছে, তাদের যে করে হোক গ্রেফতার করতে হবে। অস্ত্র পাচারে যুক্ত একাধিক অফিসার ও জওয়ানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
বিরোধী দলনেতা টোখেলো ইয়েপথোমি আজ বিধানসভায় প্রসঙ্গটি উত্থাপন করে, রাজ্য স্বরাষ্ট্র বিভাগের সমালোচনায় মুখর হন। তিনি বলেন, “কেবল নীচুতলার পুলিশকর্মীদের বলির পাঁঠা করে লাভ নেই। উপরতলার মদত ছাড়া দিনের পর দিন এই কাজ সম্ভব নয়।” রিও অভিযোগ মেনে নিয়ে বলেন, “বেশ কিছু পদস্থ অফিসার তাঁদের কর্তব্য যথাযথভাবে পালন করেননি। ঠিক সময় গরমিলের কথা জানতে পারলে অনেক আগেই অস্ত্র পাচার আটকানো যেত।”
মুখ্যমন্ত্রী জানান, তাঁদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আপাতত, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক অস্ত্র উদ্ধারের দায়িত্ব রাজ্যের হাত থেকে নিজেদের হাতে নিয়েছে। সংঘর্ষবিরতির মধ্যস্থতাকারী পর্যবেক্ষক দলের সাহায্য নিয়ে এনএসসিএন (আইএম), এনএসসিএন (খুলে-কিতোভি) ও খাপলাং বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। তবে অধিকাংশ নাগা জঙ্গি গোষ্ঠী আগেভাগেই জানিয়ে দিয়েছে, তাদের কাছে পুলিশের অস্ত্র নেই। |
|
|
|
|
|