|
|
|
|
কার্ফু শিথিলের সময়সীমা বাড়ানোর
আর্জি, ছন্দ ফিরছে চেনা ধুবুরির |
রাজীব চৌধুরী • ধুবুরি |
সন্ধ্যা নামতে না-নামতে পাল্টে যাচ্ছে শহরের ছবি। ঝপাঝপ বন্ধ হচ্ছে দোকানপাট। রকে পরিচিত সেই আড্ডা নেই। সুনসান রাস্তা থেকে ছিটকে বার হচ্ছে শুধু ভারী বুটের শব্দ। যেন আতঙ্ক গিলে খাচ্ছে গোটা জনপদকে। সিনেমার দৃশ্য নয়। বেলা শেষ হতে কার্ফুর জন্য এ ভাবে ঘুমের কোলে ঢলে পড়ছে নামনি অসমের ধুবুরি শহর। গোষ্ঠী সংঘর্ষের পরে গত ২৩ জুলাই থেকে জেলায় কার্ফু জারি হয় ওই শহরে। প্রায় দেড় মাস রাত ১০টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত তা চলে। সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে ফের ধুবুরি জেলা প্রশাসনের তরফে কার্ফুর মেয়াদ বাড়ানো হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে নামানো হয় দুই কোম্পানি র্যাপিড অ্যাকশন ফোর্সের (র্যাফ) জওয়ান। এ ছাড়াও বাড়ানো হয় সিআরপিএফ এবং অসম পুলিশের সংখ্যা। গোটা শহর যেন থমকে দাঁড়ায়। বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে স্বাভাবিক জনজীবন। পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হলে পর্যায়ক্রমে কার্ফু শিথিল করে প্রশাসন। এখন রাতে ঘড়ির কাঁটা ৮টার ঘর ছুঁয়ে যেতে কার্ফু বলবৎ হচ্ছে। চলছে সকাল ৫টা পর্যন্ত। শহরবাসী প্রয়োজনীয় কাজকর্মের জন্য হাতে পাচ্ছে সকাল ৫টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত। হুড়োহুড়ি শুরু হচ্ছে শহর জুড়ে। বিকেলের পরে এক বাজার থেকে অন্য বাজারে দৌড়ে বেড়ানোর দৃশ্য দেখা যাচ্ছে। প্রশাসনের তরফেও মাইকে প্রচার করা হয়েছে রাত ৮টার পরে কেউ যেন বাড়ির বাইরে না থাকেন। কোনমতে কাজ শেষ করে বাড়ি না ফিরতে ২০টি গাড়ির কনভয় নিয়ে রাস্তায় নামছে পুলিশ ও র্যাফের জওয়ানরা। বেড়ে চলে আতঙ্ক। বাসিন্দাদের অভিযোগ, ওই সময় রাস্তায় দেখলে মারধর করছে র্যাফ। কার্ফু চলাকালীন সরকারি কর্মী ও সাংবাদিকদের চলাফেরার জন্য প্রশাসনের তরফে বিশেষ অনুমতিপত্র দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ, ওই অনুমতিপত্র দেখানোর পরেও নিস্তার মিলছে না। ধুবুরির পুলিশ সুপার প্রদীপ শালৈ বলেন, “অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি নিয়ে র্যাফের জওয়ানদের সঙ্গে কথা বলব।” শহরে এ বার নামে বিশ্বকর্মা পুজো হয়েছে। শারদ উৎসব কেমন কাটবে তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন সাধারণ বাসিন্দা থেকে ব্যবসায়ী প্রত্যেকে। ধুবুরি কাপড় ব্যবসায়ী সমিতির সদস্য বিনোদ কুণ্ডলিয়া বলেন, “এ ভাবে চলতে থাকলে পুজোর ব্যবসা লাটে উঠবে। প্রশাসনের উচিত নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার পাশাপাশি যেন জনজীবন স্বাভাবিক হয় সে দিকে নজর দেওয়া।” বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের তরফেও দ্রুত শহরের পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার দাবি জানানো হয়েছে। বিজেপির জেলা সভাপতি বিমল ওসোবাল বলেন, “দেড় মাস থেকে কার্ফু চলছে। জনজীবন বিপর্যস্ত। আমরা চাই দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হোক।” কার্ফু শিথিলের সময় সীমা বাড়ানোর দাবি তুলেছে কংগ্রেস এবং এআইইউডিএফ। কংগ্রেসের জেলা সভাপতি অরবিন্দ সাহা বলেন, “কার্ফু শিথিলের সময় বাড়ানো জরুরি। সেটা না হলে জনজীবন স্বাভাবিক হবে না। এ ছাড়াও স্পর্শকাতর এলাকায় নিরাপত্তা বাড়ানো দরকার।” প্রশাসনের কর্তারা ওই দাবি অস্বীকার করেননি। ধুবুরির জেলাশাসক কুমুদ কলিতা বলেন, “পরিস্থিতি ক্রমশ স্বাভাবিক হচ্ছে। কার্ফু শিথিলের সময়ও বাড়ানো হবে।” |
|
|
|
|
|