‘লা মার্টিনিয়ার ফর বয়েজ’ স্কুলের অধ্যক্ষ-সহ চার শিক্ষককে আত্মহত্যায় প্ররোচনা-সহ অন্য সব অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিল নগর দায়রা আদালত। আদালত জানিয়েছে, শিক্ষকদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় তথ্যপ্রমাণ মেলেনি। তাই তাঁদের এই মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হচ্ছে।
পুলিশ জানায়, ওই স্কুলের ছাত্র রৌভনজিৎ রাওলার অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় তাঁদের বিরুদ্ধে প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ দায়ের করেছিলেন তার বাবা অজয় রাওলা। পুলিশ নিম্ন আদালতে যে চার্জশিট জমা দিয়েছিল, তাতে আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগ ছিল না। নিম্ন আদালত সেই অভিযোগ যুক্ত করে মামলাটি উচ্চ আদালতে পাঠায়। শুক্রবার নগর দায়রা আদালতের অতিরিক্ত জেলা জজ (তৃতীয় ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট) মধুছন্দা বসু তাঁর রায়ে জানান, ওই স্কুলের অধ্যক্ষ সুনির্মল চক্রবর্তী-সহ চার শিক্ষকের বিরুদ্ধে এমন তথ্যপ্রমাণ মেলেনি যাতে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা চালানো যায়।
তাই তাঁদের মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হচ্ছে।
২০১০-এর ফেব্রুয়ারিতে লা মার্টিনিয়ারের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র রৌভনজিতের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয় তাদের আলিপুরের বাড়ি থেকে। পুলিশ জানায়, ওই ছাত্র আত্মহত্যা করেছে। অজয় রাওলার অভিযোগ ছিল, ওই শিক্ষকেরা তাঁর ছেলেকে মারধর করেছেন। অধ্যক্ষ রৌভনজিৎকে বলেছিলেন, পরদিন বাবাকে নিয়ে স্কুলে হাজির হতে। অভিভাবককে ডেকে পাঠানোয় ভয় পেয়ে সে আত্মহত্যা করে বলে অভিযোগ ওঠে। শেক্সপিয়র সরণি থানায় শিক্ষকদের বিরুদ্ধে নাবালক রৌভনজিতকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ দায়ের করেন ওই ছাত্রের বাবা।
শিক্ষকদের আইনজীবী কৌশিক দে জানান, চার্জশিটে পুলিশ জানায়, ওই শিক্ষকদের বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার প্রমাণ মেলেনি। নিম্ন আদালত আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগ যুক্ত করে মামলাটি উচ্চ আদালতে পাঠিয়েছিল।
এই ঘটনায় দেশজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। জাতীয় শিশু অধিকার রক্ষা কমিশনের প্রতিনিধি দল লা মার্টিনিয়ারে আসে। ওই বছর অক্টোবরে গ্রেফতার হন অভিযুক্ত শিক্ষকেরা। পরে অবশ্য জামিনে মুক্ত হন তাঁরা।
তবে, আদালতের এই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আবেদন করা হবে বলে জানিয়েছেন সরকারি আইনজীবী। রাওলাদের আইনজীবী দীপনারায়ণ মিত্র একই কথা জানিয়েছেন। তিনি জানান, শিক্ষকদের বিরুদ্ধে আত্মহত্যায়
প্ররোচনা দেওয়া-সহ একাধিক অভিযোগ আনা হয়েছিল। এই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আবেদন জানানো হবে।”
এ দিনের রায়ে স্বস্তিতে স্কুল-কর্তৃপক্ষ। স্কুলের পরিচালন সমিতির সচিব সুপ্রিয় ধর বলেন, “বিচারব্যবস্থার উপরে আমাদের আস্থা বরাবরই ছিল। সুবিচার হয়েছে।” সুনির্মলবাবু বলেন, “আমরা সব সময়েই চেষ্টা করি যাতে সব ছাত্র মনের আনন্দে পড়াশোনা শিখতে পারে। কোনও ছাত্র সম্পর্কে বিরূপ ধারণা পোষণ করা হয় না। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কাছে তো তাঁদের পড়ুয়ারা সন্তানসম। তাদের আমরা সেই চোখেই দেখি।” |