ফের পিছিয়ে গেল ধাপা জল-প্রকল্প তৈরির সময়সীমা। এ নিয়ে চতুর্থ বার। এই কাজ না হলে বাইপাস সংলগ্ন বিভিন্ন প্রকল্প ও আবাসনে পুরসভার পরিস্রুত জল দেওয়া যাবে না।
২০২৬ সালে বাইপাস সংলগ্ন পূর্ব কলকাতার জনসংখ্যা প্রায় ১১ লক্ষ হতে পারে ধরে নিয়ে তৈরি হয় এই প্রকল্প। ২০০৬-এর ৪ অগস্ট এটি জেএনএনইউআরএম প্রকল্পের ছাড়পত্র পায়। গোড়ায় ঠিক ছিল, প্রকল্পটি শেষ হবে ২০১০-এ। ২০০৯ সালে পুর-কর্তারা জানান, প্রকল্পের কাজ শেষ হবে ২০১১ সালে। ওই বছরেরই ২৪ অগস্ট মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেন, ২০১২-র মধ্যে শেষ করা হবে এই প্রকল্পের কাজ। আর এখন মেয়রের আশা, ওই প্রকল্পে জল সরবরাহ শুরু হবে ২০১৩-র শেষে। সম্ভাব্য খরচ বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় সাড়ে তিনশো কোটি টাকা।
রাজডাঙা, পূর্বালোকের মতো বাইপাস সংলগ্ন পূর্ব কলকাতার বিভিন্ন অংশে চড়া দামে ফ্ল্যাট কিনেও পরিস্রুত জল পাচ্ছেন না আবাসিকেরা। বারবার পুরসভা তাঁদের আশ্বাস দিচ্ছে, ধাপা প্রকল্পের কাজ হয়ে গেলেই জল মিলবে। কেন এত সময় লাগছে? পুর-কর্তাদের জবাব, জমি নিয়ে মামলাই এর প্রধান কারণ। কলকাতার জলাভূমি নষ্টের অভিযোগ এনে ২০০৭-এ মামলা করে ‘পাবলিক’ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। বিষয়টি গড়ায় সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত। এ ছাড়া, প্রকল্প-এলাকার জমির মালিকানা নিয়ে দেখা দেয় জট। তা ছাড়াতে বসাতে হয় ট্রাইব্যুনালের লোক-আদালত।
মেয়র বলেন, “মামলার জট এখন আর নেই। মূল প্রকল্প, অর্থাৎ ট্রিটমেন্ট প্লান্ট তৈরি হয়ে যাবে অক্টোবর নাগাদ। তবে জল সরবরাহ শুরু করতে অপেক্ষা করতে হবে আরও অন্তত এক বছর।” গঙ্গার জল ধাপায় এনে শোধন করতে বাগবাজারের মায়ের ঘাটে একটি ‘ইনটেক জেটি’ ও পাম্পিং স্টেশন তৈরি হচ্ছে। এর জন্য প্রায় ৪০ কোটি টাকার দরপত্র ডাকা হয় ২০১০-এর ১৯ সেপ্টেম্বর। কথা ছিল, দেড় বছরে ওই কাজ শেষ হবে। তা হয়নি। কেন? মেয়র বলেন, “চক্ররেলের ডাবল লাইন করার কথা ছিল। তা হলে পুর-প্রকল্পের কাজ আটকে যেত। শেষে লাইন ‘সিঙ্গল’ রেখে দেওয়ায় কাজ শুরু হয়েছে।”
গঙ্গার ওই জল আনার ভূগর্ভস্থ পাইপ বসানোর সিংহ ভাগ কাজ শেষ। এ কথা জানিয়ে পুরসভার ডিজি (জল সরবরাহ) বলেন, “ধাপা থেকে গড়িয়া পর্যন্ত প্রায় ১২ কিলোমিটার পাইপ বসানোর প্রস্তুতি চলছে। বাইপাস ঠিক কী ভাবে কতটা চওড়া করা হবে, সে ব্যাপারে নিশ্চিত হতে আমাদের একটু অপেক্ষা করতে হচ্ছে।” এই পরিস্থিতির মধ্যেই তিলজলা-তপসিয়া অঞ্চলে জল সরবরাহ বাড়াতে গত ২০ মে বাইপাসের কাছে আনন্দপুরে একটি বুস্টার পাম্পিং স্টেশনের শিলান্যাস করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখান থেকে দৈনিক ২০ লক্ষ গ্যালন জল সরবরাহ করা হবে। এটি কার্যকরী হবে ধাপা প্রকল্প শেষ হওয়ার পরেই।
এ দিকে, বাইপাস সংলগ্ন বিভিন্ন অঞ্চলের আবাসনে নিয়মের তোয়াক্কা না করে ভূগর্ভ থেকে যথেচ্ছ জল তোলা হচ্ছে। এই জলে লোহার ভাগ বেশি থাকায় সমস্যায় পড়ছেন বাসিন্দারা। বাড়ছে আর্সেনিক দূষণের আশঙ্কাও। কবে মিলবে ধাপা-প্রকল্পের পরিস্রুত জল, সে প্রশ্ন সকলেরই। পরিস্থিতি যা, আরও বছর দেড়েক অপেক্ষা করতে হবে ওই জল পেতে। |