মহানগরের রাস্তায় ত্রিফলা আলো লাগানোর বরাত দেওয়ার ক্ষেত্রে অনিয়মের অভিযোগ নিয়ে কলকাতা পুরসভার বাম কাউন্সিলরেরা আগেই সরব হয়েছিলেন। শুক্রবার জাতীয় রাজনীতির প্রেক্ষাপট বদলের পরে এই নিয়ে বামেদের সঙ্গে সুর মেলালেন কংগ্রেসি কাউন্সিলরেরাও। বাম ও কংগ্রেস, দু’পক্ষেরই দাবি, এই ‘অনিয়ম’-এর বিচার বিভাগীয় তদন্ত চাই। মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “বিরোধীরা যা বলছেন বলুন। ওঁদের কথায় কান দিই না।” ‘ট্রাইডেন্ট’ বা ত্রিফলা আলো নিয়ে তোলপাড় চলছে বেশ কিছু দিন ধরেই। কিন্তু এত দিন পুর কংগ্রেসকে এত প্রবল ভাবে সরব হতে দেখা যায়নি। এর আগেও পুরসভার একাধিক বিষয়ে তৃণমূল পরিচালিত বোর্ডের সঙ্গে মতান্তর হয়েছে কংগ্রেসের। কিন্তু জোট-রাজনীতির বাধ্যবাধকতায় কংগ্রেস কাউন্সিলরেরা প্রায় কোনও ক্ষেত্রেই সুর চড়াতে পারেননি। কিন্তু কেন্দ্র আর রাজ্য দুই ক্ষেত্রেই জোটবন্ধন আলগা হতেই উত্তাপ বাড়ছে। তৃণমূল শুক্রবার কেন্দ্রীয় সরকারের উপর থেকে পাকাপাকি ভাবে সমর্থন তুলে নিয়ে মন্ত্রীদের ফিরিয়ে নিয়েছে। আজ, শনিবার রাজ্য মন্ত্রিসভা থেকে তারা নিজেদের প্রতিনিধিদের সরিয়ে নেবে বলে জানিয়ে দিয়েছে কংগ্রেসও।
এই পুরো পরিস্থিতিরই আঁচ পড়েছে কলকাতা পুরসভায়। তাই ত্রিফলা আলো নিয়ে ‘অনিয়ম’-এর টাটকা বিষয়টি আর হাতছাড়া করতে চাইছে না কংগ্রেস। সিপিএমের সঙ্গে সেই জন্যই এ দিন গলা মেলায় তারা। কাউন্সিলর তথা পুরসভার কংগ্রেস নেত্রী মালা রায় বলেন, “দরপত্র ছাড়া ৩০ কোটি টাকার কাজ করার সাহস কোনও অফিসারেরই হতে পারে না। এর পিছনে কার হাত আছে, তা খুঁজে বার করা হোক।” ওই আলো লাগানোর কাজটিকে বেশ কয়েকটি ভাগে ভাগ করে নেওয়া হয়েছিল। দরপত্র এড়াতেই এই পথ নেওয়া হয় বলে অভিযোগ। ত্রিফলা আলোর কাজ বিলিবণ্টনে অনিয়মের অভিযোগ ওঠার পরেই সব বিল আটকে দেন পুর-কমিশনার খলিল আহমেদ। মেয়র শোভনবাবু অবশ্য প্রথম থেকেই দাবি করে আসছেন, ওই আলোর ক্ষেত্রে কোনও রকম অনিয়ম হয়নি। এ দিনও বাম-কংগ্রেসের দাবিকে কার্যত উড়িয়েই দিতে চেয়েছেন তিনি।
তবে দরপত্র ছাড়া ওই কাজের বরাত দেওয়ার অভিযোগে ইতিমধ্যেই বিভাগীয় প্রধান গৌতম পট্টনায়ককে ডিজি (আলো)-র পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছেন পুর-কমিশনার। ওই ‘অনিয়ম’-এর বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবিতে এ দিন পুর-কমিশনারের কাছেই স্মারকলিপি দেন বাম প্রতিনিধিরা। পুরসভার বিরোধী নেত্রী, সিপিএম কাউন্সিলর রূপা বাগচি বলেন, “এক জন অফিসারকে সরিয়ে দিয়ে তৃণমূল বোর্ড সব কিছু ধামাচাপা দিতে চাইছে। দরপত্র না-ডেকে কোটি কোটি টাকা নয়ছয় করা হয়েছে। আমরা পুরো ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানিয়েছি।” |