ফের গুলি চালিয়ে হার ছিনতাই, এ বার যাদবপুরে
কালের জমজমাট বাজার। হঠাৎ মোটরবাইক থেকে হ্যাঁচকা টান মেরে এক জন ছিনিয়ে নিল ফুল কিনতে আসা এক বৃদ্ধার গলার হার। বাইকের দুই আরোহীকে ধরতে এগিয়েছিলেন এক ফুলবিক্রেতা। কোমর থেকে একটি রিভলভার বার করে তাঁকে লক্ষ করে গুলি চালাল এক দুষ্কৃতী। তার পরে মোটরবাইক ছুটিয়ে এলাকা ছেড়ে চম্পট দিল তারা।
সিনেমার দৃশ্য নয়, ঘোর বাস্তব। শুক্রবার সকাল আটটা নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে যাদবপুরের দেশবন্ধু বাজারে। ছিনতাইবাজদের গুলিতে অবশ্য কেউ হতাহত হননি। তবে, সাতসকালে জনবহুল এলাকায় এমন ঘটনা দক্ষিণ শহরতলির আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে ফের বেআব্রু করে দিল বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি। তাঁরা বলছেন, গত কয়েক মাসে মোটরবাইক চেপে এসে ছিনতাইয়ের ঘটনা নিত্যনৈমিত্তিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। একই অবস্থা সল্টলেকেরও। সেখানেও প্রতিনিয়ত চুরি-ছিনতাই বাড়ছে।
কী হয়েছিল এ দিন?
পুলিশ জানিয়েছে, যাদবপুর সেন্ট্রাল পার্কের বাসিন্দা, ৬৩ বছরের নন্দা কুণ্ডু দেশবন্ধু বাজার এলাকায় ফুল কিনতে গিয়েছিলেন। তখনই তাঁর হার ছিনিয়ে, গুলি চালিয়ে মোটরবাইক নিয়ে যাদবপুর স্টেশনের দিকে পালিয়ে যায় দুষ্কৃতীরা। ঘটনার পর থেকেই আতঙ্কিত নন্দাদেবী। প্রত্যক্ষদর্শীরা পুলিশকে জানিয়েছেন, মোটরবাইক-চালকের মুখ হেলমেটে ঢাকা ছিল। তবে যে ছিনতাইকারী গুলি চালিয়েছে, তার মুখ ঢাকা ছিল না। এলাকার বাসিন্দা দেবেশ চক্রবর্তী বলেন, “চিৎকার ও গুলির শব্দ শুনে বেরিয়ে এসে দেখি, হুশ করে একটা মোটরবাইক চলে গেল। ভয়ে বৃদ্ধা তখন থরথর করে কাঁপছেন।”
ছিনিয়ে নেওয়ার কায়দা
এ দিনের ঘটনার পরে স্থানীয় বাসিন্দারাও এলাকার নিরাপত্তাহীনতার কথাই বলেছেন। ‘সেন্ট্রাল পার্ক ইউথ অ্যাসোসিয়েশন’-এর সম্পাদক সঞ্জয় সেনগুপ্ত বলেন, “গত এক বছরে এই এলাকায় পাঁচ-পাঁচটি ছিনতাই হয়েছে। আমরা নিজেরাই এখন এলাকায় রাত-পাহারার ব্যবস্থা করেছি। মাসখানেক আগে, বাড়ির সামনে থেকেই আমার প্রতিবেশী এক মহিলার হার ছিনতাই হয়।” এ দিনের ঘটনার পরে পুলিশ দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে এলাকায় আতঙ্ক ছড়াবে বলেও এলাকাবাসীর বক্তব্য। সেন্ট্রাল পার্ক এলাকার গৃহবধূ সঙ্কলিতা গোস্বামীর বক্তব্য, “এর পর থেকে রাস্তায় সামান্য গয়না পরে বেরোতেও ভয় করবে।”
গত জানুয়ারি মাসে কসবা এলাকায় সন্ধেবেলা বিদ্যা দেশাই নামে এক মহিলার হার ছিনতাই করে মোটরবাইক-আরোহী দুষ্কৃতীরা। বাধা দিতে গিয়ে দুষ্কৃতীদের হাতে গুলিবিদ্ধ হন বিদ্যাদেবী। সেই ঘটনায় মূল অভিযুক্তকে এখনও গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। এ দিনের ঘটনা শুনে বিদ্যা বলেন, “আমি বাধা দিতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলাম। এ দিনও শুনলাম, গুলি চালিয়েছে দুষ্কৃতীরা। পুলিশের উচিত সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা।” জানুয়ারির ঘটনার পরে রাস্তায় একা বেরোন না বিদ্যা, গয়না পরা তো দূর অস্ৎ। যদিও ডি সি (সাউথ সাবার্বান) সুজয় চন্দ বলেন, “আজকের ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। খুব শীঘ্রই দুষ্কৃতীরা ধরা পড়বে বলে আশা করছি।”
পুলিশ সূত্রের খবর, মোটরবাইকে এসে ছিনতাই করার ঘটনা গত কয়েক মাসে কলকাতা এবং সংলগ্ন এলাকায় বেড়ে চলেছে। সম্প্রতি কয়েকটি ঘটনায় গোয়েন্দারা দুষ্কৃতীদের গ্রেফতার করলেও অনেক ক্ষেত্রেই চাঁইয়েরা পালিয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি তদন্তকারীরা বলছেন, শহরতলি এলাকায় নিত্যনতুন দল তৈরি হচ্ছে ছিনতাইবাজদের। তাই এই নতুন অপরাধীদের সম্পর্কে অনেকে ক্ষেত্রে আগে থেকে কোনও তথ্যই থাকছে না গোয়েন্দাদের হাতে। কিছু ঘটলে তদন্তকারীরা প্রায় অন্ধকারেই হাতড়ে বেড়াচ্ছেন বলেও পুলিশের একাংশ মনে করছে। এ দিনের ঘটনার পরে গোয়েন্দাদের অনুমান, কসবার ঘটনার সঙ্গে এই দলটির যোগ থাকতে পারে। কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দাপ্রধান পল্লবকান্তি ঘোষ বলেন, “দলটি কোনও পুরনো ছিনতাইয়ের ঘটনায় যুক্ত কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
তদন্তকারীদের একাংশের দাবি, সম্প্রতি কিছু ঘটনায় দেখা গিয়েছে, মধ্যবিত্ত বা নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের মাদকাসক্ত যুবকেরা নেশার খরচ জোগাড়ের জন্য ছিনতাইয়ের রাস্তায় হাঁটছে। কিন্তু তারা আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে এ ভাবে ছিনতাই করছে, এমনটা খুব বেশি দেখা যায়নি।
পুলিশের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ এনেছেন সল্টলেকের বাসিন্দারাও। পুলিশ জানিয়েছে, গত এক মাসে সল্টলেকে অন্তত ১৪টি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। সেখানেও ফাঁকা এলাকায় মোটরবাইকে চেপে এসে ছিনতাই করছে দুষ্কৃতীরা। সল্টলেকের এক বাসিন্দা বলেন, “ব্লকের মধ্যে গ্রিন পুলিশ থাকলে, তাঁদের সব গতিবিধি দুষ্কৃতীরা জানতে পারছে। তাই পাহারা দিয়েও কোনও লাভ হচ্ছে না।”
অনেক সময়ে স্থানীয় বাসিন্দারাই দুষ্কৃতীদের পাকড়াও করে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছেন বলেও তাঁদের দাবি। যদিও পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার কথা অস্বীকার করেছেন বিধাননগর কমিশনারেটের কর্তারা। সেখানকার গোয়েন্দাপ্রধান নীলু শেরপা চক্রবর্তী এ বিষয়ে বলেন, “পুলিশি নজরদারি আগের চেয়ে বেড়েছে। এই ছিনতাই-চক্রের অন্যতম পাণ্ডা সন্দেহে এক জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর পিছনে আরও কোনও চক্র কাজ করছে বলে আমাদের অনুমান।”
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.