টগবগ টগবগ ঘোড়া ছুটছে জঙ্গল পথে। এক বনবস্তি থেকে অন্য বনবস্তিতে। ছুটে গিয়ে থমকে দাঁড়াল উঁচু কাঠের তৈরি রাভা পরিবারের কোনও বাড়ির পাশে। রোমাঞ্চকর কেনও গল্পের শুরু নয়। এমনই দৃশ্য এ বার পর্যটন মরশুমে দেখা মিলবে ডুয়ার্সের চিলাপাতা জঙ্গলে। বাসন্তী ও ধান্নো নামে দুটি টাট্টু ঘোড়া টানা গাড়িতে চেপে গল্পের মতো ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ মিলবে পর্যটকদের। ঘোড়া ছুটিয়ে তাঁরা দেখবেন জনজাতিদের পাড়া। চা বাগান ছাড়িয়ে জানবেন কোনও গায়ের আজানা সংস্কৃতি। শুক্রবার চিলাপাতা এলাকার দু’জন ঘোড়া মালিকের হাতে দুটি গাড়ি তুলে দিয়ে ‘অ্যাসোসিয়েটেড কনর্জাভেশন ট্যুরিজম’ নামে একটি পযর্টন সংস্থা ওই সুযোগ করে দেয়। এত দিন ডুয়ার্সের জঙ্গলে গরুর গাড়ি ও হাতির পিঠে চেপে ভ্রমণের সুযোগ ছিল। এ বার দূষণহীন ভ্রমণের আরও একটি দিক খুলে গেল। ওই অভিনব ভ্রমণ অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের সুযোগ পেয়ে খুশি পর্যটকরা। কলকাতা থেকে বেড়াতে আসা অর্জুন বসুরায় বলেন, “কলকাতা থেকে ডুয়ার্স ভ্রমণে এসে স্থানীয় জনজাতিদের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ পাই না। অনেক পর্যটক আছেন যারা ধান থেকে কেমন করে চাল হয় সেটা দেখেনি। বই পড়ে জেনেছেন। ঘোড়ার গাড়িতে গ্রাম ঘুরে এ বার তা দেখার সুযোগ পাবে। এটা বড় পাওয়া। এ ছাড়াও বিভিন্ন জনজাতির ভাষা ও তাঁদের সংস্কৃতি সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারবে।” উদ্যোক্তারা জানান, পর্যটন শিল্পের মাধ্যমে বনবস্তি এলাকার বাসিন্দাদের স্বাবলম্বী করার জন্য টমটম গাড়ি চালানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শুক্রবার সকালে পরীক্ষামূলক ভাবে একটি গাড়ি চালানো হয়। পর্যটকদের ভাল সাড়া মিলেছে। |
অ্যাসোসিয়েটেড কনর্জাভেশন টুরিজমের সেন্ট্রাল ডুয়ার্সের সহ সভাপতি গণেশ কুমার শাহ বলেন, “সংস্থার তরফে পঞ্চাশ হাজার টাকা খরচ করে দুটি ঘোড়ার গাড়ি তৈরি করা হয়েছে। শুক্রবার একটি গাড়ি চালানো হয়েছে। দ্রুত আরও একটি গাড়ি চালানো হবে।” ঠিক হয়েছে দেড় থেকে দু’ঘন্টা ভ্রমণের জন্য ৩০০ টাকা ভাড়া দিতে হবে পর্যটকদের। এক একটি গাড়িতে ছয়জন ভ্রমণের সুযোগ পাবেন। রোজগার যা হবে সেটা ঘোড়ার মালিকরা পাবেন। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্য সরকার চিলাপাতার ৮টি বনবস্তি নিয়ে ‘ভিলেজ টু্যরিজম’ তৈরির জন্য ৬ কোটি টাকার প্রকল্প নিয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির জন্য প্রায় ২ কোটি টাকা খরচ করে রাস্তা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। পুজোর পরে বানিয়া, আন্দু, কুরমাই, উত্তর চকোয়াখেতি সহ আটটি গ্রামে ভিলেজ টু্যরিজমের জন্য পযর্টক আবাস তৈরির কাজ শুরু হয়ে যাবে। বনবস্তির বাসিন্দারা ওই পর্যটক আবাসগুলি পরিচালনা করবেন। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ণ দফতরের সহকারী বাস্তুকার নিশির দাস বলেন, “টমটম গাড়িতে বেড়ানোর সুযোগ থাকায় ভিলেজ টু্যরিজম উপকৃত হবে।” শুধু কী উদ্যোক্তারা! গাড়ি পেয়ে খুশি ঘোড়ার দুই মালিক পশ্চিম শিমলাবাড়ির সামাদ আলি এবং শিলবাড়ি হাটের কৃষ্ণ বর্মন। তাঁদের কথায়, “ঘোড়া থাকলেও এত দিন রোজগারের উপায় মেলেনি। গাড়ি পেয়ে ভাল হল।” |