চিপ ডিজাইনিং-এর সঙ্গে যুক্ত রাজ্যের একমাত্র সংস্থা কলকাতা ছেড়ে বেঙ্গালুরু পাড়ি দিয়েছে। কারণ, ব্যবসা করার খরচ এতটাই বেড়েছে, যে লাভের মুখ দেখা কঠিন।
ইনটেরা সিস্টেমস-ই একমাত্র উদাহরণ নয়। সেক্টর ফাইভের আকাশছোঁয়া ভাড়া ও সংশ্লিষ্ট করের চাপে ছোট ও মাঝারি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার পছন্দের গন্তব্য হিসেবে ক্রমশ পিছিয়ে পড়ছে কলকাতা।
এক দিকে, জমির দাম উসুল করতে চড়চড় করে ভাড়া বাড়াচ্ছে নির্মাণ সংস্থাগুলি। অন্য দিকে, ১৫% হারে সম্পত্তি কর নিচ্ছে সরকার। তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পমহলের অভিযোগ, রাজায় রাজায় এই যুদ্ধে উলুখাগড়া হয়ে মার খাচ্ছে ছোট ও মাঝারি সংস্থাগুলি। কারণ সম্পত্তি করের বোঝা ভাড়াটেদের উপরেই চাপিয়ে দিচ্ছে ডেভেলপাররা।
সম্প্রতি তথ্যপ্রযুক্তি নীতি নিয়ে সরকার ও শিল্পমহলের বৈঠকেও এই প্রসঙ্গ উঠেছে। ডেটাবাজারের কর্তা এস পি মুখোপাধ্যায়ের দাবি, সেক্টর ফাইভে প্রতি বর্গ ফুট জায়গার দাম ৫৫-৬০ টাকা। অথচ সেই একই মানের জায়গা হায়দরাবাদের মতো শহরে পাওয়া যাচ্ছে ৩০ টাকার আশেপাশে। ফারাকের মূলে রয়েছে বর্দ্ধিত ভাড়া ও তার উপর চাপানো সম্পত্তি কর।
সেক্টর ফাইভে সব মিলিয়ে রয়েছে ২৭৫টি সংস্থা। তার মধ্যে প্রায় ৯০% ছোট ও মাঝারি। অন্যান্য শহরে মন্দার ধাক্কায় মার খেয়েছে ভাড়ার পরিমাণ। বিশেষজ্ঞদের দাবি, কলকাতায় তা হয়নি। রিয়েল এস্টেট বিশেষজ্ঞ সংস্থা জোনস লাং লাসেল-এর মতে এখানে দাম কমাতে নারাজ নির্মাণ সংস্থাগুলি। এমনকী ক্রেতার অভাবে তৈরি পরিকাঠামো ফাঁকা পড়ে থাকলেও ভাড়া কমাচ্ছে না তারা।
দক্ষ মানবসম্পদের যোগান। সঙ্গে তুলনায় কম খরচে ব্যবসা করে লাভের অঙ্ক বাড়িয়ে নেওয়ার সুযোগ। এই জোড়া সুবিধার দৌলতে তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার পছন্দের গন্তব্য হয়ে উঠেছিল কলকাতা। কিন্তু পরিকাঠামোর আকাশছোঁয়া খরচ সেই আকর্ষণ ফিকে করে দিচ্ছে। ইনফিনিটি নলেজ ভেঞ্চার্স-এর কর্তা কল্যাণ কর জানান, পরিস্থিতি সামলাতে রাজ্যের হস্তক্ষেপ জরুরি।
রাজ্য সরকারের নতুন তথ্যপ্রযুক্তি নীতিতে অবশ্য ছোট ও মাঝারি সংস্থাগুলিকে কিছুটা রেহাই দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে সরকার। ৫০০ থেকে ৫০০০ বর্গ ফুট জায়গার ভাড়ার উপরে ২৫% ভর্তুকি দেবে তথ্যপ্রযুক্তি দফতর। এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালেও শিল্পমহলের মতে এস ডি এফ বা এস টি পি টু-এর মতো সরকারি পরিকাঠামো আরও বেশি সংখ্যক তৈরি হলে লাভবান হবে তারা।
বর্তমানে এস ডি এফ ও এস টি পি-টু, এই দু’টি বাড়িতে ভাড়া বর্গ ফুট প্রতি ২১-৩৮ টাকা। ওয়েবেল সূত্রে খবর, ছ’বছর পরে ভাড়া বেড়েছে। আগে ভাড়া ছিল ১৭-৩৩ টাকা। তবে এই ৩০% বৃদ্ধির পরেও বেসরকারি সংস্থাগুলির হাঁকা ভাড়ার তুলনায় কম ভাড়া নেয় ওয়েবেল।
সমাধান সূত্র হিসেবে শিল্পমহলের দাবি, কর কাঠামো আরও সরল করা হোক। এবং সম্পত্তি করের হিসেবে ধরা হোক ফেলে রাখা ফাঁকা জায়গা। তাদের মতে, মোট জায়গা ও নবদিগন্ত চালানোর জন্য মোট প্রয়োজনীয় টাকার হিসাব করে ধার্য হোক সম্পত্তি কর। |