সংস্কারে অটল থাকলেও রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডারে সাধারণ মানুষকে কিছুটা স্বস্তি দিল মনমোহন-সরকার। শুক্রবারই কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমের ঘোষণা, বাড়িতে রান্নার জন্য যে সিলিন্ডার বাজার দরে কিনতে হবে, তার উপর আমদানি ও উৎপাদন শুল্ক বসাবে না কেন্দ্র। অর্থাৎ, বছরে সপ্তম বা তার বেশি সংখ্যক সিলিন্ডার কেনার ক্ষেত্রে ওই সুবিধাটুকু পাবে সব পরিবার। তবে বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহৃত সিলিন্ডার থাকবে এই সুবিধার বাইরেই।
এক সপ্তাহ আগেই কেন্দ্র সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, বছরে পরিবার-পিছু মাত্র ছ’টি সিলিন্ডার ভর্তুকি মূল্যে দেওয়া হবে। অর্থাৎ কলকাতায় বছরে মাত্র ছ’টি সিলিন্ডার বর্তমান দামে অর্থাৎ ৪০১ টাকায় মিলবে। তার পরে রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডার কিনতে হবে বাজার দরেই।
আন্তর্জাতিক বাজারে অশোধিত তেলের দাম ও তার সঙ্গে কর যোগ করলে এখন কলকাতায় একটি রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডারের দাম দাঁড়াবে প্রায় ৮৭৫ টাকা। যার মধ্যে আমদানি ও উৎপাদন শুল্ক বাবদ করের পরিমাণ প্রায় ১০৫ টাকা। আজ চিদম্বরম ওই দুই করের হার যথাক্রমে ৫ ও ৮ শতাংশ থেকে শূন্যে নামিয়ে আনায় সাধারণ মানুষের ঘাড়ে ওই ১০৫ টাকার বোঝা চাপছে না। ফলে ছ’টির পরে সপ্তম সিলিন্ডার কিনতে গেলে এখন ৭৭০ টাকা দাম চোকাতে হবে।
আমজনতাকে কিছুটা সুরাহা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও মনমোহন সরকার যে অর্থনীতির হাল শোধরাতে বদ্ধপরিকর, আজ ফের সেই বার্তা পাঠিয়েছেন পি চিদম্বরম। বিনিয়োগকারীদের উৎসাহ দিতে এবং শেয়ার বাজারকে চাঙ্গা করতে আজ বৈদেশিক ঋণের উপর কর কমানো হয়েছে। ফলে এ দেশের কর্পোরেট সংস্থাগুলি বিদেশ থেকে সস্তায় ঋণ নিতে পারবে।
অন্য দিকে, সাধারণ মানুষকে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগে উৎসাহ দিতে ‘রাজীব গাঁধী ইক্যুইটি সেভিংস স্কিম’-এও আনুষ্ঠানিক অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। মুলায়ম সিংহ যাদব ইউপিএ-সরকারকে সমর্থন দিয়ে যাবেন বলে ঘোষণা করায় সরকারের স্থায়িত্ব নিয়েও শিল্পমহল তথা বিনিয়োগকারীদের আশঙ্কা অনেকটাই কেটে গিয়েছে।
তার পাশাপাশি চিদম্বরমের ঘোষণায় শেয়ার সূচক উপরের দিকে উঠতে শুরু করেছে। একই সঙ্গে ডলারের তুলনায় টাকার দামও বেড়েছে। অর্থ মন্ত্রকের কর্তারা বলছেন, ডিজেলের দাম বাড়ানো বা খুচরো ব্যবসায় বিদেশি বিনিয়োগের অনুমতি দেওয়াটা যে আলটপকা সিদ্ধান্ত নয়, কেন্দ্র সংস্কারের দিশাতেই চলছে, শিল্পমহল ও বিনিয়োগকারীদের তা বোঝাতে হবে। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক এখনও সুদের হার কমায়নি। কিন্তু এ দেশের কর্পোরেট সংস্থাগুলি যাতে বিদেশ থেকে সস্তায় ঋণ পেতে পারে, তার জন্য বৈদেশিক ঋণের উপর করের হার আজ এক ধাক্কায় ২০% থেকে কমিয়ে ৫%-এ নিয়ে এনেছে অর্থ মন্ত্রক। অনাবাসী বিনিয়োগকারীদের সুদ বাবদ আয়ের উপর করের হার ২০% থেকে কমিয়ে ৫%-এ নিয়ে আসার জন্য আয়কর আইনে প্রয়োজনীয় সংশোধন হবে।
চলতি বছরের বাজেট পেশ করার সময়ই প্রণব মুখোপাধ্যায় ‘রাজীব গাঁধী ইক্যুইটি সেভিংস স্কিম’-এর কথা ঘোষণা করেছিলেন। এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য হল, সাধারণ মানুষকে তাঁদের সঞ্চয়ের অর্থ শেয়ার বাজারে খাটাতে উৎসাহ দেওয়া। যাঁরা নিজেদের সঞ্চয় জমিয়ে সোনা কেনেন, তাঁদেরও শেয়ার বাজারে টেনে আনা। এতে বাজার চাঙ্গা হবে। বাজারে অনেক বেশি বিনিয়োগকারী থাকায় রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বিলগ্নিকরণেও সুবিধা হবে।
চিদম্বরম বলেন, “১০ লক্ষ টাকার কম আয়ের যে সব মানুষ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করবেন, তাঁরা ৫০ শতাংশ কর ছাড়-ও পাবেন।” সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার শেয়ার ছাড়াও ‘রাজীব গাঁধী ইক্যুইটি সেভিংস স্কিম’-এ লগ্নিকারীরা মিউচুয়াল ফান্ডের মাধ্যমেও লগ্নি করতে পারবেন। আগামী দু’সপ্তাহের মধ্যে এ বিষয়ে সরকারি বিজ্ঞপ্তি জারি হবে।
বছরে মাত্র ৬টি সিলিন্ডারেই ভর্তুকি বেঁধে দেওয়ার পিছনে কেন্দ্রের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল রাজকোষ ঘাটতিতে রাশ টানা। রাজনৈতিক বিরোধিতার মুখে এখন আবার কংগ্রেস শাসিত রাজ্যগুলিকে বছরে ন’টি করে সিলিন্ডারে ভর্তুকি দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অন্যান্য রাজ্যগুলিও যাতে কিছুটা ভর্তুকির ভার বহন করে, সেই চেষ্টা করছে কেন্দ্র। রাজ্যগুলির উপর এই চাপ তৈরি করতেই, রাজস্ব আয় বাবদ ক্ষতি মেনে নিয়েই আমদানি ও উৎপাদন শুল্ক শূন্যে নামিয়ে এনেছেন চিদম্বরম। রেস্তোরাঁ বা অন্য কোথাও বাণিজ্যিক ব্যবহারের জন্য এলপিজি-র ক্ষেত্রে অবশ্য শুল্ক প্রত্যাহার করা হচ্ছে না। |