মহলা কক্ষেই অভিনয়। প্রশস্ত মহলা কক্ষে জনা পঞ্চাশেক দর্শক। দর্শকাসনে থেকে সামান্য কয়েক হাত দূরে অভিনয় মঞ্চ। সেখানেই চলছে অভিনয়। অভিনেতা এবং দর্শক প্রত্যেকেই একে অন্যের অভিব্যক্তি স্পর্ষ্ট বুঝতে পারবেনএই ‘ইন্টিমেট থিয়েটার’ বা অন্তরঙ্গ অভিনয় ধারাকে নিয়ে নতুন ধরনের নাট্য প্রযোজনায় মজেছেন মফস্সলের কিছু নাট্য দল। আগামী শীতের মরসুমে শান্তিপুরের রঙ্গপীঠ বা শান্তিপুর সাংস্কৃতিক’ এর তরফে ইন্টিমেট থিয়েটার উপস্থাপনার প্রস্তুতি চলছে।
পুজোর ঢাকে কাঠি পড়তেই জোরদার তোড়জোড় চলছে মফস্সলের নাট্যদলগুলির মহলা কক্ষে। পুজোর পর থেকে ফেব্রুয়ারি-মার্চ পর্যন্ত রাজ্যের পাশাপাশি ভিন রাজ্যেও চলে নাটকের নানা উৎসব-প্রতিযোগিতা। তারই প্রস্তুতিতে ব্যস্ত এখন জেলার নাট্যদলগুলি। নতুন নাটক নিয়ে বাইরে যাওয়ার আগে নিজেদের উদ্যোগে স্থানীয় স্তরে উৎসব বা নাট্যসন্ধ্যার আয়োজন করে নাটকের ভুলত্রুটি শুধরে নেওয়ার পালাও চলছে। সেই সঙ্গে চলছে প্রচারের কাজ। বিভিন্ন নাট্যদল যেমন নতুন নাটক তৈরি করছেনতেমনি নতুন ধরনের নাট্য প্রযোজনায় কথা ভাবছেন কেউ কেউ। সেই ভাবনারই ফসল ‘ইন্টিমেট থিয়েটার’। অভিনেতা-পরিচালক শান্তিপুরের কৌশিক চট্টোপাধ্যায় বলেন, “সম্প্রতি যুবমঞ্চে একটা কাজ করেছি। মিনার্ভা থিয়েটারে, রেপার্টারি গড়ে দ্বিজেন্দ্রলালের চন্দ্রগুপ্ত করেছি। এখন তার নিয়মিত অভিনয় চলছে। অনেক লোকজন, অনেক বড় মঞ্চে কাজ করার পর এবার একেবারে খুব অল্পলোকের খুব নিকটে নাট্য অভিনয়ের কাজ করতে চাইছি। ‘ইন্টিমেন্ট থিয়েটার’ তো একটা বিকল্প ধরন। এবারে সেই প্রযোজনার স্বাদ কেমনসেটা বুঝতে চাই।”
আগামী শীতে শান্তিপুর সাংস্কৃতিক নতুন ধরনের এই প্রযোজনা উপহার দেবেন দর্শকদের। এই নতুন আঙ্গিকের প্রয়োগ করে ফেলেছেন শান্তিপুরেরই নাট্যদল রঙ্গপীঠ। তাদের পরিচালক বিশ্বজিৎ বিশ্বাস বলেন, “আমরা এবারে শূদ্রকের মৃচ্ছকটিকম্ মঞ্চস্থ করছি। সুকুমারী ভট্টাচার্যের বাংলা আর মোহন রাজেশের হিন্দি অনুবাদ থেকে নিয়ে আমরা এই নাটকের নাট্যরূপ নির্মাণ করেছি। ইতিমধ্যে ৫টি শো আমরা ইন্টিমেট থিয়েটারের আঙ্গিকে মঞ্চস্থ করেছি। দর্শকদের কাছ থেকে অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছি।” গত ৯ এবং ১০ সেপ্টেম্বর রঙ্গপীঠ শান্তিপুরে এক নাট্য-উৎসবে তাদের নতুন এই নাটকটি মঞ্চস্থ করেছেন। বিশ্বজিৎবাবু বলেন, “সামনের মরসুমে আমরা বিভিন্ন মঞ্চে মৃচ্ছকটিকম্ এবং মহাশ্বেতা দেবীর গল্প অবলম্বনে ‘বায়েন’ মঞ্চস্থ করার প্রস্তুতি নিয়েছি।”
পুজোর আগে নতুন নাটক নিয়ে তৈরি হচ্ছে কৃষ্ণনগরের ‘অরণি’ ও সিঞ্চন, বগুলার সূচনা, নবদ্বীপের ছন্দনীড় বা সায়ম সাংস্কৃতিক সংস্থা। দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের সার্ধ শতবর্ষে এবার দ্বিজেন্দ্র নাটকের কদর বেশি। কৃষ্ণনগর সিঞ্চনের সুশান্ত হালদার বলেন, “এ বার আমরা দ্বিজেন্দ্রলালের পূনর্জন্ম তৈরি করছি। পাশাপাশি আমাদের পুরনো দুটি নাটকসমুদ্র মন্থন এবং ইনকুইজিশন-এর ঘষামাজা চলছে।” কৃষ্ণনগর অরণির সুজিত সাহা বলেন, “এবার আমরা মনোজ মিত্রের মহাবিদ্যা নতুন করে করছি।” সুজিতবাবুদের মত কৃষ্ণনগরের আরও কয়েক জনের উদ্যোগে গড়ে উঠেছে নতুন নাট্যবন্ধু নামে একটি সংস্থা। যেখানে প্রতি মাসের শেষ শনিবার জেলার ও বাইরের জেলার দলগুলির নাটক মঞ্চস্থ করার ব্যবস্থা হয়েছে। বহুলার সূচনা লালন ফকিরের জীবন আধারিত সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কাহিনি অবলম্বনে তৈরি করছেন ‘লালন ছুটছে’। নবদ্বীপের ছন্দনীড় তীর্থঙ্কর চন্দের নাটক ‘অন্তর্গত আগুন’ -এর মহলা শুরু করেছে। শান্তিপুর সাংস্কৃতিকও নতুন নাটক মঞ্চস্থ করছে। আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর এক সন্ধ্যায় দুটি নাটক মঞ্চস্থ করবে তারা। পরিচালক উজান চট্টোপাধ্যায়ের নির্দেশনায় ২৫ জন ক্ষুদ্র অভিনেতারা মঞ্চস্থ করবে ঠাকুরদা ও নাতি। পরের নাটক কৌশিক চট্টোপাধ্যায় নির্দেশিত তমসো মা। সব মিলিয়ে দম ফেলবার ফুরসৎ নেই নাটকের দলগুলির। |