হয়তো চূড়ান্ত রেগে রয়েছেন বন্ধুর উপর। হঠাৎ বেজে উঠল মোবাইলের ‘মেসেজ টোন’। দেখলেন আর সঙ্গে সঙ্গে আপনার ঠোঁটে একটুকরো হাসি। মুহূর্তে সব রাগ গলে জল। কারণ, মোবাইলে মেসেজ করে বন্ধু আপনাকে ওই একটুকরো হাসিই পাঠিয়েছেন যে। জেন-এক্সের কাছে যার নাম ইমোটিকন স্মাইলি, মোবাইলের সেই বহুল ব্যবহৃত হাসি-চিহ্নটি বুধবার পা দিল ৩০ বছরে। স্বভাবতই মানস-সন্তানের তিন দশকের কৃতিত্বে খুশিতে ডগমগ স্রষ্টা স্কট ফালহ্যাম।
কোনও পেশাদার শিল্পী নন স্কট। বরং নেশা থেকে বিজ্ঞানকেই পেশা হিসেবেই বেছে নিয়েছিলেন কার্নেগি মেলন বিশ্ববিদ্যালয়ের এই কম্পিউটার বিজ্ঞানী। ভাগ্যিস নিয়েছিলেন। না হলে হয়তো কোনও দিনই ইমোটিকনের হদিস পেত না জেন-এক্স। কেন? স্কট বলছেন, “অনেক সময়ই দেখতাম ইন্টারনেটে কেউ কোনও শ্লেষাত্মক মন্তব্য করলে অনেকেই তার ভিতরের মজাটা বুঝতেন না।” এমনকী, কেউ কেউ তো আবার রেগেমেগে লম্বা সমালোচনাও লিখে ফিলতেন সেই সাইটে। ইমোটিকনের ভাবনাটা সেখান থেকেই এসেছিল বলে জানাচ্ছেন স্কট।
কী রকম? “আমরা ভাবতাম যে লেখাগুলোকে গুরুত্ব দেওয়ার দরকার নেই, যদি সেগুলোকে কোনও ভাবে চিহ্নিত করা যেতে পারে, তাহলে হয়তো এই ধরনের সমস্যা কম হবে” বলছেন স্কট। এই নিয়েই এক দিন ‘গভীর’ আলোচনায় মগ্ন ছিলেন তিনি। হঠাৎ মনে এল, যদি ‘ডট’, ‘ড্যাশ’, ‘ব্র্যাকেটের’ মতো পরিচিত চিহ্নগুলোকে ব্যবহার করেই একটা নতুন কিছু তৈরি করা যেতে পারে যা ‘হালকা ভাবে নাও’- এই বার্তাটি খুব সহজেই পৌঁছে দিতে পারবে পাঠককে। সঙ্গে সঙ্গেই নিজের পরামর্শটি বলে দিলেন আলোচনার টেবিলে। সালটা ১৯৮২। ঘড়িতে তখন কাঁটা কাঁটায় সকাল ১১টা ৪৪।
বলা বাহুল্য পরামর্শটিকে লুফে নিয়েছিলেন স্কটের সহকর্মীরা। তৈরি হল ইমোটিকন স্মাইলি। একটা সুন্দর নরম হাসিমুখ। পরে সেই ইমোটিকনের মাধ্যমেই “আনন্দে আছি” এটা বোঝাতে শুরু করেন আবালবৃদ্ধবনিতা। এমনকী, দুঃখ বোঝাতেও সেই উল্টো ইমোটিকনই সহায়। কিন্তু হাসিমুখের জাদু সর্বত্র।
আর তাই নিজেও বোধহয় হাসতে হাসতেই তিরিশটা বছর কাটিয়ে দিল ইমোটিকন স্মাইলি। |