কেন্দ্রকে সমর্থন করছেন না, বনধও সমর্থন করেননি তৃণমূল নেত্রী। বনধ না করতে বামেদের অনুরোধও করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পরেও বামপন্থীরা বনধের রাস্তা থেকে না সরায় বেশ কয়েক জায়গায় তাঁদের সঙ্গে ঝামেলায় জড়িয়ে পড়ল তৃণমূল।
বৃহস্পতিবার বর্ধমান শহরে বন্ধকে কেন্দ্র করে সিপিএম এবং তৃণমূলের মধ্যে দফায়-দফায় গোলমাল বাধে। সিপিএম অফিসে হামলা ও নেতা-কর্মীদের নিগ্রহের অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। তৃণমূলের অবশ্য দাবি, সিপিএমের কর্মীরা জোর করে বনধ পালন করার চেষ্টা করছিলেন। তা রুখতেই রাস্তায় নেমেছিল তারা। সিপিএম অফিসে হামলা ও নিগ্রহের অভিযোগ অস্বীকার করেছে তারা। পুলিশ জানায়, ঘটনাস্থলে গিয়ে দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। জেলা পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জা জানান, এ দিন জেলার গ্রামীণ এলাকা থেকে মোট ৫০ জন বনধ সমর্থককে গ্রেফতার করা হয়েছে। |
বর্ধমান শহরে এ দিন গোলমালের সূত্রপাত পারবীরহাটা এলাকায়। সেখানে নতুনবাজারের কাছে সিপিএমের একটি অফিস রয়েছে। এ দিন সকালে অফিস খুলে বসেছিলেন শহর জোনাল কমিটির সদস্য তথা দলের প্রবীণ নেতা দিলীপ দুবে-সহ অন্য নেতা-কর্মীরা। সিপিএমের অভিযোগ, হঠাৎই নীলপুর থেকে আসা এক দল তৃণমূল নেতা-কর্মী এই অফিসে ঢুকে পড়ে। দিলীপবাবুকে হেনস্থা করা হয়। গালিগালাজ করা হয় অন্যদেরও। তৃণমূলের লোকেরা অফিস বন্ধ করে দেওয়ারও চেষ্টা করে বলে অভিযোগ। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান সিপিএম নেতা তথা বর্ধমানের পুরপিতা পরিষদের সদস্য তড়িৎ ঘোষ, বর্ধমান সদর জোনাল কমিটির সদস্য শৌভিক চট্টরাজেরা। অভিযোগ, সেই সময়ে স্থানীয় তৃণমূল নেতা উত্তম সেনগুপ্তের নেতৃত্বে কিছু কর্মী-সমর্থক শৌভিকবাবুকে তাড়া করে। তাঁকে চড়, ঘুষিও মারা হয়। কোনও মতে তিনি দলের এক সমর্থকের মোটরবাইকে চড়ে পালিয়ে যান। সিপিএমের অভিযোগ, এর পরেই তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকেরা সিপিএমের শহর ৩ নম্বর লোকাল কমিটি অফিসের সামনে হাজির হন। তাঁরা দাবি করতে থাকে, শৌভিকবাবুকে অফিসের বাইরে বেরিয়ে আসতে হবে। পুলিশ এই তৃণমূল সমর্থকদের নিরস্ত করে।
সিপিএম নেতা-কর্মীদের আরও অভিযোগ, উত্তমবাবুর নেতৃত্বে সশস্ত্র তৃণমূলের লোকজন এর পরে চড়াও হয় কাছারি রোডে সিপিএমের শহর ৪ নম্বর লোকাল কমিটি অফিসে। সেখানে ছিলেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের এক কর্মী। উত্তমবাবুরা তাঁকে মারধরের হুমকি দেন বলে অভিযোগ। কিছুক্ষণের মধ্যে সেখানে পৌঁছন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দেবাশিস সরকার, এসডিপিও (বর্ধমান দক্ষিণ) অম্লানকুসুম ঘোষ ও বর্ধমান থানার আইসি দিলীপ গঙ্গোপাধ্যায়। সেখান থেকে চলে না গেলে পুলিশ তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানালে উত্তমবাবু ও তৃণমূলের অন্য কর্মীরা সরে যান। এ দিন সন্ধ্যায় তৃণমূলের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগে ও ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারের দাবিতে বর্ধমান থানায় স্মারকলিপি দেন সিপিএম নেতারা। |
বর্ধমানে সিপিএম অফিসে তৃণমূলের হম্বিতম্বি। |
কিছু দিন আগে দলের অন্য এক গোষ্ঠীর লোকজনের সঙ্গে গোলমালের অভিযোগে উত্তমবাবুকে থেকে বহিষ্কার করেছিলেন তৃণমূল নেতারা। পরে অবশ্য তাঁকে দলে ফেরানো হয়। এ দিন উত্তমবাবুর দাবি, “সিপিএমের লোকজন শহরের নানা এলাকায় জোর করে দোকানপাট বন্ধ করছে, এই খবর পেয়ে আমরা প্রতিরোধ করতে রাস্তায় বেরোই। সিপিএমের অফিসে ঢুকে গোলমালের কোনও ঘটনা ঘটেনি। সিপিএম মিথ্যা অভিযোগ করছে।”
পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জা জানান, এ দিন বর্ধমান-হাওড়া কর্ড লাইন জৌগ্রাম স্টেশনে সকালে প্রায় ৪৫ মিনিট ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল। কাটোয়া স্টেশনে রেল অবরোধের চেষ্টা হয়। দু’জায়গা থেকে মোট ২৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়। ভাতারের নর্জা মোড়ে তিন জন বিজেপি ও দু’জন সিপিএম সমর্থককে গ্রেফতার করা হয়। অগ্রদ্বীপে পঞ্চায়েত অফিস বন্ধ করতে যাওয়ার অভিযোগে ১১ জন বিজেপি সমর্থককে গ্রেফতার করে পুলিশ।
জেলার গ্রামীণ এলাকায় সরকারি অফিসগুলিতে এ দিন সরকারি কর্মীরা হাজির হলেও সাধারণ মানুষের বিশেষ দেখা মেলেনি। ট্রেন চললেও তাতে যাত্রীর সংখ্যা ছিল বেশ কম। রাস্তায় দেখা মেলেনি বেসরকারি বাসের। অধিকাংশ জায়গাতেই দোকানপাট খোলেনি। স্কুলগুলিতে পড়ুয়াদের হাজিরা ছিল বেশ কম। খেয়াঘাটেও যাত্রীর দেখা মেলেনি। তবে বর্ধমান শহর ছাড়া অন্যত্র গোলমালের বিশেষ খবর মেলেনি বলেই প্রশাসন সূত্রের খবর।
|