উত্তরবঙ্গে টানা বৃষ্টির জেরে ডুয়ার্সের পরে এ বার বিপদসীমার উপর দিয়ে বইতে শুরু করছে মালদহের ফুলহার নদী। সোমবার ফুলহারে জলস্তর বিপদ সীমা ছাড়িয়ে যায়। পুজোর মুখে নদী ফুঁসে ওঠায় মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুর ও রতুয়ার বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে বন্যার আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। নদীর জল উপচে হরিশ্চন্দ্রপুর ও রতুয়ার অসংরক্ষিত এলাকার মাঠের ফসল ডুবে গিয়েছে। ডুবে গিয়েছে যাতায়াতের পথঘাটও। ঘরে জল না ঢুকলেও কার্যত জলবন্দি হয়ে পড়েছেন হরিশ্চন্দ্রপুর-২ ব্লকের আটটি এলাকার বাসিন্দারা। বেশ কয়েকটি এলাকায় শুরু হয়েছে নদী ভাঙনও। সেচ দফতর সূত্রের খবর, নদীর অসংরক্ষিত এলাকায় বিপদসীমার ২৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে বইছে। ফুলহার নদীতে অসংরক্ষিত এলাকায় লাল ও সংরক্ষিত এলাকায় হলুদ সঙ্কেত জারি করা হয়েছে। মালদহের সেচ দফতরের মহানন্দা ‘এমব্যাঙ্কমেন্ট’-এর নির্বাহী বাস্তুকার জয়প্রকাশ পান্ডে বলেন, “আপার ক্যাচমেন্ট তথা উত্তরবঙ্গে প্রবল বৃষ্টির পরে সেখানকার নদীগুলির জল নামছে। ফুলহারে জল বাড়তে শুরু করেছে। অসংরক্ষিত এলাকায় নদী বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে। আমরা পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছি।” |
গত মাসেই ফুলহারের উপচে পড়া জলে জলবন্দি হয়ে পড়েছিলেন হরিশ্চন্দ্রপুর ও রতুয়ার ১০টি এলাকার বাসিন্দারা। ওই সময় মাঠের ভুট্টা, করলা, পটল, বেগুনের মতো সব্জি তলিয়ে নষ্ট হয়ে যায়। জল কমার পর সেখানে কলাই চাষ করেছিলেন চাষিরা। কিন্তু এ বার ফুলহারের জল উপচে সেই কলাই খেতও প্লাবিত হয়ে গিয়েছে। জল বাড়তে থাকায় রতুয়ার দেবীপুরে কয়েকটি এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে বলে সেচ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে। হরিশ্চন্দ্রপুরের মিহাহাটে বাঁধ বিপন্ন হয়ে পড়ার আশঙ্কায় আতঙ্কিত মানুষ। হরিশ্চন্দ্রপুরের ফব-র বিধায়ক তজমূল হোসেনের ক্ষোভ, “মিহাহাটে বাঁধ বিপন্ন হয়ে পড়ার কথা জেনেও বাঁধ বাঁচাতে উদ্যোগী হয়নি প্রশাসন। অথচ, বাঁধ ভাঙলে সংরক্ষিত এলাকা প্লাবিত হয়ে যাবে।” তবে জেলা প্রশাসনের এক কর্তার দাবি, সংশ্লিষ্ট দু’টি ব্লকের বিডিও-দের পরিস্থিতির উপরে নজর রাখতে বলা হয়েছে।
জলপাইগুড়িতে করলার জল কিছুটা নামলেও শহরের নেতাজি পাড়া, ইন্দিরা কলোনি, সারদা পল্লি, সুকান্ত নগর কলোনি সমাজপাড়ার মতো কিছু এলাকা এখনও জলমগ্ন। তিস্তার চরের অসংরক্ষিত এলাকায় হলুদ সঙ্কেত রয়েছে। ডুয়ার্সের ওদলাবাড়ির বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। এ দিন আন্দাঝোরা দিয়ে ঘিস নদীর জল আসা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় নয়া বস্তি, চুইয়া বস্তি, মজুমদার কলোনির জল নেমে যায়। উত্তরবঙ্গ বন্যা নিয়ন্ত্রণ কমিশনের নির্বাহী সদস্য গৌতম দত্ত বলেন, “ঘিস নদীর মুখ ওদলাবাড়ি বাজারের দিকে ঘুরে গিয়েছিল। তা ঘুরিয়ে ফের মূল খাতে ফেরানো গিয়েছে। ঘিসের ভাঙা বাঁধ তৈরির কাজ শুরু করেছি।” মহকুমাশাসক (মালবাজার) নারায়ণ বিশ্বাস এ দিন বলেন, “ওদলাবাড়ির পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে। তবে ত্রাণশিবিরগুলি থাকবে।” ঘিস নদীর ভেঙে যাওয়া বাঁধের অংশ দিয়ে জল ঢুকে রেল লাইনের নীচের মাটি আলগা হয়ে ডামডিম ও বাগরাকোটের মধ্যে ধস নামায় রবিবার সকাল থেকে শিলিগুড়ি-মালবাজার ট্রেন বন্ধ ছিল। মেরামতির পরে বেলা ১২টা থেকে ওই লাইনে ট্রেন স্বাভাবিক হয়। |