দু’আঙুলে নয়, মুঠো করে ধরতে হয় চায়ের কাপ। অভাব রয়েছে শারীরিক ভারসাম্যেরও। এই অবস্থায় মনের জোরে মা হলেন জটিল স্নায়ুরোগে আক্রান্ত এক বধূ।
বর্ধমানের বাদামতলা এলাকার বাসিন্দা সুস্মিতা রায় নামে ওই বধূকে সন্তানের জন্ম দিতে নিষেধ করেছিলেন চিকিৎসকেরা। কারণ হৃদযন্ত্র-ফুসফুসের অবস্থা বিশেষ ভাল না হওয়ায় তাঁকে অজ্ঞান করার পরে আদৌ জ্ঞান ফিরবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ ছিল সকলেরই। কিন্তু বর্ধমানের উপকন্ঠে বামচাঁদাইপুরের এক বেসরকারি হাসপাতালে শুক্রবার অস্ত্রোপচারের মাধ্যমেই কন্যা সন্তানের জন্ম দিলেন তিনি। |
সুস্মিতা রায়। নিজস্ব চিত্র। |
হাসপাতালের অন্যতম ডিরেক্টর সৌমেন্দ্র সাহা শিকদারের দাবি, “ওঁকে অ্যানেস্থেসিয়া করে অস্ত্রোপচারের জন্য
তৈরি করতে আমরা কলকাতার এক বিশেষজ্ঞ ত্রিনাঞ্জন সরঙ্গির সাহায্য নিয়েছিলাম। কিন্তু মহিলার মনের জোর এত বেশি যে প্রায় সজ্ঞানেই অপারেশন করেছি আমরা। তিনি সমস্ত বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে আমাদের সঙ্গে সম্পূর্ণ সহযোগিতা করেছেন।” হাসপাতাল সূত্রে খবর, মা ও শিশু সুস্থ রয়েছে।
সৌমেন্দ্রমোহনবাবু বলেন, “সুস্মিতাদেবী ফ্রেডারিক অ্যাটেকশিয়া নামে একটি রোগে আক্রান্ত। এই রোগে আক্রান্তরা পেশির স্বাভাবিক প্রসারণ ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন। ওঁর শিরদাঁড়া বেঁকে থাকার কারণে ফুসফুসও স্বাভাবিক প্রসারণ করতে পারে না। হৃদযন্ত্রও যথেষ্ট দুর্বল। তাই অন্য প্রসূতিদের মত ওঁকে শিরদাঁড়ায় ইনজেক্শন করে অজ্ঞান করা সম্ভব ছিল না। ফলে তাঁকে সিজার করে প্রসব করানো ছিল যথেষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ। কিন্তু ওঁর মা হওয়ার অদম্য ইচ্ছাকে মর্যাদা দিতেই আমরা ঝুঁকি নিয়েছিলাম।”
হুগলির চন্দননগর সারদাসাধন বালিকা বিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষিকা সুস্মিতাদেবীর কথায়, “শারীরিক অসুস্থতা নিয়েই তো প্রতিদিন বর্ধমান থেকে চন্দনগনরে যাচ্ছি ক্লাস করাতে। কিন্তু জীবনে কখনও মা হতে পারব না? এটা ভাবতেই কোথা থেকে যেন মনের জোর পেয়ে গেলাম।”
সুস্মিতাদেবীর স্বামী, একটি বিএড কলেজের শিক্ষক অভিক মুখোপাধ্যায় বলেন, “আমার স্ত্রী ছেলেবেলা থেকেই জটিল স্নায়ুরোগে ভুগছেন। শিরদাঁড়ার তৃতীয় কশেরুকা বেঁকে যাওয়ায় সারাক্ষণ ওকে ডান দিকে ঝুঁকে থাকতে হয়।” তাঁর কথায়, “স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য দরকার হলে বিদেশেও যাব। ওকে সুস্থ করে তুলবই।” |