শিল্পশহর হলদিয়ায় দেব কারিগরের আরাধনা বরাবরই জমজমাট। কয়েক বছর ধরে চলছে ‘থিমে’র বাড়বাড়ন্ত। আলোর রোশনাইয়ে ধুয়ে যাচ্ছে অলি-গলি। ঢাকের বোলে চেনা ছন্দ। বিশ্বকর্মা পুজো ঘিরে উৎসাহের ছবিটাও চেনা।
তবে পরিবর্তন তো হয়েছে। রাজ্যে পালাবদলের সূত্রেই হলদিয়ার কারখানাগুলিতে এখন তৃণমূলের শ্রমিক ইউনিয়নের ‘দাপট’। শ্রমিক-কর্মীদের অনেকেই ‘লাল’ থেকে ‘সবুজ’ হয়েছেন। সেই সূত্রেই খুচরো কিছু পরিবর্তন ধরা দিল বিশ্বকর্মা পুজোতেও। ইওসি ১ নম্বর গেটের কাছে মার্কসবাদ-লেনিনবাদের তাত্ত্বিক বইয়ের স্টল দেখা গেল না। বাম আমলের মতো শাসক দলের মাথারা এখন পুজোর আচার থেকে দূরে নন, বরং পুজোর আসর জুড়েই তাঁদের প্রাধান্য। আগে যেমন এই দিনটিতে কোনও পুজোর উদ্বোধনে দেখা যেত না (কমিউনিস্ট পার্টি নিয়ম মেনেই) তমলুকের প্রাক্তন সাংসদ লক্ষ্মন শেঠকে। এ বার অবশ্য রবিবার সন্ধে থেকেই অধিকাংশ মণ্ডপে ঘুরে বেড়ালেন তমলুকের বর্তমান সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী। সোমবার সকালেও বেশকিছু পুজোর উদ্বোধন করেন তিনি। |
তব সব ছাপিয়ে ধরা দিল উৎসবের রং। আর তাতেই বাড়ল জৌলুস। সোমবার বিশ্বকর্মা পুজোর দিন ভিড় ঠেলে মানুষ ঘুরে বেড়ালেন এক্সাইড, হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যাল, হলদিয়া রিফাইনারির মতো বড় বড় পুজোগুলোতে। নজর কাড়ল ঝিনুকের মণ্ডপে কতবেলের মূর্তি, সোনালি চটে অক্ষরধাম মন্দির,তালপাতা-বাঁশপাতা-খেজুরপাতার মণ্ডপ। আইওসির অবসরপ্রাপ্ত জনসংযোগ আধিকারিক শম্ভুনাথ সাঁতরা এ বছর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন। তাঁর কথায়, “কর্মজীবনে আগাগোড়াই পুজোর সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। আচারে মিল থাকলেও এ বছর জৌলুস একটু বেশি উৎসাহিত করছে। সাংসদ নিজে পুজো উদ্বোধন করছেন। মানুষও এটাই চান।” |
সোমবার রাজ্য জুড়েই ছিল বাস ধর্মঘট। কিছু সরকারি বাস ছাড়া অন্য বাস চলেনি। এর জেরে হলদিয়ার ঠাকুর দেখতে আসা লোকজন কিছুটা সমস্যায় পড়েন। তাতে অবশ্য উৎসাহে ভাটা পড়েনি। লরি, পিক-আপ ভ্যানে চেপেও মানুষ এসেছেন। বিপজ্জনক ভাবে ছোট লরিতে ঝুলতে ঝুলতেই সুতাহাটার অলোক ঘাটি বলেন, “জানতাম না বাস ধর্মঘট। পরিবারের সবাইকে নিয়ে বেরিয়ে ফের বাড়ি ফিরে যেতে পারিনি। এই গাড়িটা পেয়ে চলে এলাম।” এ দিন আইওসির ঠিকাশ্রমিকদের পুজো উদ্বোধনের পর শুভেন্দু বলেন, “বাস বন্ধ থাকলে মানুষ ঠাকুর দেখবে না এমন তো নয়। পুজো উপলক্ষে রেল তিনটি অতিরিক্ত ট্রেন খড়গপুর পর্যন্ত চালাবে। আগামী বৃহস্পতিবারের ধর্মঘট প্রসঙ্গে শুভেন্দু বলেন, “গত এক বছরে হলদিয়া কোনও কর্মনাশা দিন দেখেনি। ২০ তারিখও হলদিয়া সচল থাকবে।” |
ঝিরঝিরে বৃষ্টির মধ্যেই রবিবারই উদ্বোধন হয় এক্সাইড ইন্ডিয়া, টাটা স্টিল (হুগলি মেটকোক), হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যাল, ধানসেরি পেট্রোকেমিক্যাল (সাউথ এশিয়ান), রুচি সয়া অয়েল-সহ একাধিক কারখানার পুজোর। সোমবার সন্ধের পর থেকেই শহর জুড়ে জনস্রোত। মিৎসুবিশি, বন্দর, আইওসি-সহ বিভিন্ন স্থানে ভিড় সামলাতে হিমসিম খেতে হয় পুলিশ ও পুজো কমিটির কর্মকর্তাদের। আইওসি পুজো কমিটির কর্মকর্তা দেবজ্যোতি ঘোষ বলেন, “আমাদের পুজোয় প্রতি বারই জাঁকজমক হয়। এ বছরের ভিড় তা আরও একবার প্রমাণ করল।” বাঁকুড়া থেকে পুজো দেখতে আসা বরুণ পালের কথায়, “এ বছর প্রথম হলদিয়ায় পুজো দেখছি। সবটাই নতুন লাগছে। বিশ্বকর্মা পুজোও যে এ রকম হতে পারে ধারনাই ছিল না।”
ধর্মঘট, বৃষ্টি সব বাধা পেরিয়েই মানুষ ভাসলেন উৎসবের স্রোতে।
|