সোমবার ভগ্নহৃদয়ে পাকিস্তান ম্যাচ হেরে ড্রেসিংরুমে ফেরার পর ধোনিরা দেখতে পান, তাঁদের জন্য অপেক্ষা করছে একটা বিজ্ঞপ্তি। লক্ষ্য, গড়াপেটা আটকানো। যেখানে ক্রিকেটারদের সতর্ক করে জারি হয়েছে চার দফা নির্দেশ। যার ফলে অপরিচিত লোককে এড়িয়ে যাওয়া তো বটেই, এ বার থেকে ড্রেসিংরুমে মোবাইল নিয়েই ঢুকতে পারবেন না ক্রিকেটাররা। ম্যানেজার সঞ্জয় পটেলের মাধ্যমে এই নির্দেশ দিয়েছে আইসিসি। শুধু ভারত নয়, টুর্নামেন্টের অন্য সব দলকেও একই সঙ্গে সতর্ক করা হল।
আইসিসি গোয়েন্দারা মাত্র ক’দিন আগে সব প্লেয়ারকে ডেকে ব্রিফিং করেন। বলেন, খুব সতর্ক থাকবে বিশ্ব পর্যায়ের টুর্নামেন্টে। যে কেউ প্রভাবিত করার চেষ্টা করতে পারে। এমনকী, সিনিয়র প্লেয়ারও। মহম্মদ আমেরের ভিডিও ইন্টারভিউ দেখানো হয়, যেখানে আমের বলছেন, সিনিয়র প্লেয়ারকে বিশ্বাস করে ডুবলাম। মাত্র দু’টো নো-বলের জন্য কলঙ্কিত হয়ে গেলাম। ঘরোয়া ক্রিকেট থেকে বোর্ড যে পাঁচ ক্রিকেটারকে নির্বাসিত করেছে, তাঁদের ছবিও গোয়েন্দারা দেখান। বলেন, আপনারা নিশ্চয়ই এঁদের রাস্তাতেও হাঁটতে চান না।
এত দিন ভিডিও দেখানো হয়েছে। মুখে বলা হয়েছে। এ বার ড্রেসিংরুমে সরকারি বিবৃতির দেওয়ার মতো হুঁশিয়ার করা হল। দেওয়া হল চারটে নতুন নির্দেশ।
এক) কলম্বোতে দেড়শো থেকে দু’শো বুকি ঢুকেছে। তারা যে কোনও ভাবে প্রভাবিত করতে চাইবে। অতএব আগামী ক’দিন খুব সতর্ক থাকো।
দুই) অপরিচিত কারও সঙ্গে আদানপ্রদান যথাসম্ভব এড়িয়ে চলবে। হোটেলের বাইরে অপরিচিত জায়গা এড়িয়ে চলা ভাল। কোনও অতিথির সঙ্গে বাইরে বেরোতে হলে তাঁর নাম, পেশা ও ঠিকানা টিমের লজিস্টিকস ম্যানেজারের কাছে দিয়ে যাবে।
তিন) মিডিয়ার কোনও লোককে ঘরে ডাকবে না। সে বন্ধু হলেও তার ঘরে ঢোকাটা এড়িয়ে যেতে যথাসম্ভব চেষ্টা করবে।
চার) ড্রেসিংরুমে ঢোকার আগে এত দিন একটা মোবাইল জমা দিতে, একটা থাকত কিট ব্যাগে। বাকি টুর্নামেন্টে টিম বাস থেকে নেমে দু’টো মোবাইলই জমা করে দিতে হবে। অর্থাৎ, তোমাদের কোন মোবাইলই ড্রেসিংরুমে ঢুকবে না।
কলম্বো আসার পর মোটামুটি সব দেশের ক্রিকেটারই স্ব-আরোপিত কড়াকড়িতে নিজেদের রেখেছিলেন। একে আইসিসি-র বিশ্বমাপের যে কোনও টুর্নামেন্টে প্রচণ্ড রকমের কড়াকড়ি থাকে। তার ওপর কলম্বো ঐতিহাসিক ভাবে বুকিদের প্রিয় মৃগয়াক্ষেত্র। ম্যাচ গড়াপেটা সংক্রান্ত বেশ কিছু ঘটনার উৎসভূমি এই শ্রীলঙ্কা। যেমন, ম্যাচ সংক্রান্ত তথ্য দিয়ে মার্ক ওয় ও শেন ওয়ার্নের টাকা নেওয়া। মনোজ প্রভাকরের অভিযোগ অনুযায়ী কপিল দেবের তাঁকে ম্যাচ ছাড়তে অফার করা। ব্রায়ান লারার সঙ্গে কলম্বো-নিবাসী এক বুকির সম্পর্ক নিয়ে জল্পনা। ২০০২ সালে এখানে মিনি বিশ্বকাপের সময় প্লেয়ারদের হোটেলে কিছু সন্দেহজনক পার্টির আয়োজন। সব মিলিয়ে, করাচির মতো কলম্বো নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। হয়তো কলম্বোকে পটভূমি করে এত সব ঘটনা আছে বলেই ক্রিকেটাররা পারতপক্ষে হোটেলের বাইরে যাচ্ছিলেন না। ধোনির ঘরে নিয়মিত ক্রিকেটারদের আড্ডা বসে। কেউ প্লে স্টেশনও খেলেন। কেউ থাকেন কম্পিউটারে। কেউ বসেন তিন পাত্তিতে, যা ভারতীয় ক্রিকেটসংসার থেকে বিলীনই হয়ে গিয়েছিল।
সবাই জানেন, দ্বি বা ত্রিদেশীয় সিরিজ শুরু হলে এত কড়াকড়ি থাকবে না। প্লেয়ারদের মনোভাব ছিল, আর তো মাত্র ক’টা দিন। অক্টোবরের ৮ তারিখ পর্যন্ত। সোমবারের নতুন নিষেধাজ্ঞার পর মনে হচ্ছে, প্লে স্টেশন আর তিন পাত্তি ধোনির সংসারে আরও জাঁকিয়ে বসবে। |