|
|
|
|
সম্পাদক সমীপেষু... |
শ্মশানে যাওয়ার ধরনধারণ |
দক্ষিণ কলকাতার শহরতলিতে সদর রাস্তার উপরে আমার বাসস্থান। নিকটেই সিরিটি শ্মশান। শবযাত্রীদের দর্শন আমার কাছে প্রায় নিয়মিত ঘটনা। দিনের বেলাতে কিছু বলার নেই, কিন্তু নিশুতি রাতে শবযাত্রীদের বিরাট বিকৃত আর্তনাদে চমকে উঠতে হয়। উন্মুক্ত লরি এবং এক-একটি লরিতে কম করেও ৩০/৩৫ জন আরোহণ করে থাকেন। কোনও সময় দুই বা ততোধিক লরিও দেখা যায়। আতঙ্কিত হই যখন দেখি, বিভিন্ন বয়সি মেয়ে বা মহিলারা দুই হাত দিয়ে একে অপরের কাঁধ ধরে মালার আকারে লরির ডালার উপর বিপজ্জনক অবস্থাতে বসে থাকেন। লরির আংটা যদি কোনও কারণে খুলে যায়, তা হলে সকলেই ভূপতিত হবেন। বৃষ্টি পড়ছে, কোনও ব্যাপারই নয়। লরির ডালার মাপের বিরাট সাইজের মোটা কালো প্লাস্টিক ঢাকা দিয়ে বৃষ্টির সঙ্গে প্রতিযোগিতা করা হয়। কিন্তু হঠাৎ যদি দুর্ঘটনা ঘটে, তা হলে তালগোল পাকিয়ে শ্বাস বন্ধ হওয়ার রীতিমত সম্ভাবনা আছে।
ট্রাফিক আইনে এ ধরনের যাত্রা দণ্ডনীয় অপরাধ। কিন্তু শুনছে কে? দেখছে কে? ট্রাফিক পুলিশরা শুধু মুখ ঘুরিয়েই থাকেন না, তাড়াতাড়ি যাওয়ার জন্য তাঁদের সহযোগিতাও করেন। কারণ, মৃত্যু সব সময় দুঃখজনক করুণ আবহাওয়ার সৃষ্টি করে থাকে। কিন্তু বিকট আর্তনাদ করে যাঁরা যাচ্ছেন, তাঁরা কি দুঃখজনক আবহাওয়া সৃষ্টি করছেন?
অনেক সময় মনে হয়, তাঁরা পিকনিক করার মানসিকতা নিয়ে যাচ্ছেন, যা বোঝার কোনও উপায় নেই। বলতে হয়, ছেলেছোকরারা এমন তো করবেই। শ্মশানে পৌঁছতে পারলেই চার দিকে দোকান। পান-বিড়ি, কচুরি, সিঙাড়া, মিষ্টির দোকানগুলি প্রায় সারা রাত খোলা থাকে। খুঁজলে প্যাকেট ভর্তি তরল নেশার দ্রব্যটিও পাওয়া যায়। ভারী মজার জায়গা! |
|
শব লাইনে আছে। দাহের দেরি আছে। কাজেই ক্লান্ত, অবসন্ন শবযাত্রীদের পরিষেবা শুরু হয়ে যায়। কচুরি, সিঙাড়া, চা, মিষ্টি, বিড়ি, সিগারেট ইত্যাদি। এর পর মৃতের পরিবারের লোকেরা প্রতিটি শবযাত্রীর নাম ঠিকানা মোবাইল নং লিখে নেন। শ্মশানযাত্রীরা সব সময় সম্মানিত। নিয়মভঙ্গের (যে দিন মাছ খাওয়ানো হবে) আগের দিন তাঁদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে নিমন্ত্রণ করা হবে। শ্মশানযাত্রীরা নিমন্ত্রণ না-খেলে মৃতের আত্মা শান্তি পাবে না। যতই তাঁরা মৃতদেহ নিয়ে যাওয়ার সময় আর্তনাদ করে থাকুন।
এ বার দেখা যাক, কলকাতা শহরে মৃতদেহ দাহ করার জন্য কত লোকের প্রয়োজন হয়। বৈদ্যুতিক চুল্লি ও আধুনিক ব্যবস্থা থাকার জন্য বিশেষ লোকজনের প্রয়োজন হয় না। শববাহী যানে শবদেহ শ্মশানে পৌঁছে যায়। মৃত্যুর ডাক্তারি প্রমাণপত্র দাখিল করে বৈদ্যুতিক চুল্লির খরচ, মুখাগ্নির দ্রব্যগুলির খরচ জমা দিলে, দাহের প্রমাণপত্র-সহ রসিদগুলি কম্পিউটার থেকে বেরিয়ে আসে। লাইনের নম্বর অনুসারে শব দাহ করা হয়। চুল্লিতে প্রতিটি শব দাহ করার জন্য সময় লাগে ৪০/৪৫ মিনিট। শ্মশানের কর্মীরা সহযোগিতা করে থাকেন।
আমি দু’বার এমনই দুটি শব দাহ করেছি। যাতে প্রথমটির শবযাত্রীর সংখ্যা ছিল আমাকে নিয়ে সাত জন। মৃতের দুই মেয়ে, দুই প্রতিবেশী, বাড়ির কাজের লোক, গাড়ির চালক। দ্বিতীয় বার যে শব দাহ করেছিলাম, তার শবযাত্রীর সংখ্যা একটু বেশি ছিল। আমায় নিয়ে বারো জন। কোনও বারেই কোনও সমস্যা হয়নি। এটা শুধু হিসেব। বলছি না, মারা গেলে কেউ যেয়ো না।
গ্রামেগঞ্জে যেখানে বৈদ্যুতিক চুল্লি নেই, মৃতদেহ কাঁধে করে শ্মশানে বা নদীর ঘাটে নিয়ে যেতে হয় সেখানে কিন্তু লোকজনের প্রয়োজন আছে। কাঁধ বদল করে নিয়ে যেতে হয় এবং অন্যান্য অনেক সমস্যাও থাকে।
ইন্দ্রকুমার সিংহ। কলকাতা-৮
|
পেনশন সেই তিমিরে |
পেনশন নিয়ে শিক্ষকরা চরম দুরবস্থার শিকার। বিগত সরকারের আমলে যে চিত্র ছিল, বর্তমান আমলেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। বরং সঙ্কট ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় বসার পরে মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা ছিল, ‘অবসরের পরের মাসে শিক্ষকরা পেনশন পাবেন!’ পরের মাস দূরের কথা, বছর ঘুরে গেলেও শিক্ষকের ভাগ্যে পেনশন জোটে না।
বর্তমানে চলতি ও সংশোধিত মিলিয়ে বকেয়া পেনশন কেসের সংখ্যা প্রায় ৩১ হাজার (সঠিক সংখ্যা ৩০, ৯৭৩, ১১-৭-২০১২ তারিখের হিসাব)। কিন্তু এই হিসাব শুধুমাত্র সল্টলেকের পেনশন দফতরের হিসাব। এর বাইরে জেলায় ডি আই অফিসে ও সার্কেল এস আই অফিসে যত কেস পড়ে আছে তা যোগ করলে সংখ্যাটা ৫০ হাজার ছাড়িয়ে যাবে। কেন এত কেস বকেয়া, কবে সমাধান হবে কোনও সদুত্তর নেই।
এত দিন বলা হচ্ছিল লোকাভাব। তার জন্য ৩৮টি পদ অনুমোদিত হয়েছিল। এর মধ্যে ২৬টি পদ পূরণ হয়েছে। বাকি ১২টি পদে কেন লোক নেওয়া হচ্ছে না খোঁজ করে জানা গেল, বসার জায়গা নেই। আশ্চর্যের বিষয়, অত বড় পূর্ত ভবনে ১২ জন লোকের বসার জায়গা হচ্ছে না? অথচ এই লোক নিয়োগ হলে আরও কাজের অগ্রগতি ঘটত। লোক কম হলেও কাজের চাপ বেড়েছে। এত দিন মূলত শিক্ষকদের কাজ এই দফতর সামাল দিত। এখন আরও নতুন নতুন বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে।
কিন্তু আগে তো এর থেকেও কম লোক নিয়ে পেনশন আরও তাড়াতাড়ি হত। বিগত সরকারের আমলে শেষ ৫-৭ বছরে ক্রমাগত সমস্যা বাড়তে থাকে, যা বর্তমানে আরও বাড়ছে। আগে পূর্ত ভবনে কেস গেলে ৩-৪ মাসের মধ্যে শিক্ষক পেনশন পেতেন। এখন বছর ঘুরে যাচ্ছে, তাও হচ্ছে না। তার মূল কারণ তো অর্থাভাব। প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ হলে অতি দ্রুত কাজ সমাধা হতে পারে।
আগে কোনও কেসে অবজেকশন দেওয়া হলে তা নিষ্পত্তি করে জেলা থেকে কেস ফেরত এনে ১৫ দিন থেকে এক মাসের মধ্যে সম্পন্ন হয়ে যেত। এখন সেখানে ৭-৮ মাস বা তার চেয়েও বেশি সময় লাগছে। কেন? অতীব আশ্চর্যের বিষয়, শিক্ষামন্ত্রীর ভূমিকা। এত বড় সঙ্কটময় পরিস্থিতিতেও তিনি নির্বিকার। কোনও বিবৃতি নেই, কোনও আলোচনা নেই, কোনও পদক্ষেপ নেই। সরকার কি পেনশন প্রদানে সত্যিই আগ্রহী? শিক্ষকরা পেনশন পেয়ে বাঁচার স্বাদ পাবেন, না কি মৃত্যুর দিন গুনবেন?
কার্তিক সাহা। সাধারণ সম্পাদক, বঙ্গীয় প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি, কলকাতা-১২ |
|
|
|
|
|