সম্পাদকীয় ১...
অচলের আবাহন
ন্ধ-এর সংস্কৃতি হইতে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি কিছুতেই মুক্ত হইতে চাহে না। জনজীবনকে স্তব্ধ করিয়া, যানবাহন পথে বাহির হইতে না-দিয়া, কর্মীদের কর্মস্থলে যাইতে বাধা দিয়া, গোটা রাজ্যকে অচল করিয়াই কেবল পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী রাজনীতিকরা প্রতিবাদ জানাইতে পারেন। ইহা ছাড়া আর কোনও প্রতিবাদের পন্থা তাঁহাদের জানা নাই। তাই ডিজেল, এলপিজি-র ভর্তুকি-হ্রাস জনিত মূল্যবৃদ্ধি এবং খুচরা বিপণনে বিদেশি লগ্নি মঞ্জুরের প্রতিবাদ জানাইতে রাজ্যের বিরোধীরা ১২ ঘণ্টার বন্ধ-এর পথই বাছিয়া লইলেন। পশ্চিমবঙ্গে বিরোধী বলিতে অবশ্য প্রধানত বামদেরই বুঝায়, যদিও এ বারের বন্ধ-এ তাঁহারা কার্যত বিজেপি তথা এনডিএ-র সহিত একই দিনে অচলাবস্থার আবাহনের সিদ্ধান্তে কুশলী সমন্বয় ঘটাইয়াছেন। বন্ধ-হরতাল-ধর্মঘট একান্ত ভাবে বামপন্থীদেরই রাজনৈতিক সংস্কৃতি। তাঁহারা প্রতিবাদের অন্য ভাষা শেখেন নাই, জনসাধারণকেও শিখাইতে চাহেন না। কেননা প্রায় কোনও সংগঠিত প্রয়াস ছাড়াই এই ভাষা আয়ত্ত করা যায়।
জনসাধারণের উপর একতরফা ভাবে এই প্রতিবাদ-পদ্ধতি চাপাইয়া দেওয়া বামেদের দীর্ঘ দিনের ঐতিহ্য। এই ঐতিহ্যে একদা রাজ্যের বর্তমান শাসক দলও আচ্ছন্ন হইয়া পড়িয়াছিল। কিন্তু বিগত বেশ কিছু কাল যাবৎ তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই ঐতিহ্যের বিপরীত অভিমুখে দলকে চালিত করিতেছেন। রাজ্যে নির্বাচনের মধ্য দিয়া ক্ষমতাসীন হওয়ার পর হইতে তিনি বন্ধ-এর আয়োজন বানচাল করিতে সচেষ্ট। বন্ধ যে একটি নিষ্ফল অনুশীলন, ইহাতে যে রাজ্যের কোনও উপকারই হয় না, উপরন্তু অর্থনীতির প্রভূত ক্ষতি হয়, বিশেষত দরিদ্র দিনমজুরদের এক দিনের রুজি নষ্ট হয়, ইহা সকলেরই জানা থাকিলেও দরিদ্র, শ্রমজীবী মানুষের স্বার্থরক্ষার অজুহাতেই সমগ্র জনগোষ্ঠীর উপর ইহা চাপাইয়া দেওয়া হয়। তৃণমূল নেত্রী মুখ্যমন্ত্রী হইয়াই সরকারি কর্মীদের কাজে আসার নিশ্চয়তা দিতে এক দিকে যেমন বন্ধ-এর দিনে পরিবহণ-পরিকাঠামো অক্ষত রাখিয়াছেন, অন্য দিকে তেমনই অনুপস্থিত কর্মীদের বেতন কাটার নির্দেশ দিয়া বন্ধ-বিলাসী ফাঁকিবাজদের মধ্যেও কর্ম-সংস্কৃতি চালু করিয়াছেন। তাঁহার দৃঢ়তা প্রশাসনের সর্ব স্তরে সঞ্চারিত হওয়ার ফলও হাতে-নাতে ফলিয়াছে। ইদানীং বন্ধ-এর ডাক উপেক্ষা করিয়া মানুষ পথে বাহির হইবার এবং কাজে যোগ দিবার সাহস ও প্রেরণা সঞ্চয় করিয়াছেন। কেবল সল্ট লেক-এর সেক্টর-৫ নয়, রাজ্যের অন্যত্রও সম্পূর্ণ কর্মনাশা ও নেতিবাচক ‘আন্দোলনের’ প্রতিরোধে সাধারণ মানুষকে পথে নামিতে দেখা যাইতেছে। কিছু কাল আগে বামপন্থীরা এ কারণেই পরিবহণ কর্মীদের একটি ধর্মঘট ডাকিয়াও প্রত্যাহার করিতে বাধ্য হন।
আগামী বৃহস্পতিবারের বন্ধ ব্যর্থ করিতেও সরকারকে একই রকম দৃঢ়তা দেখাইতে হইবে। বিশেষত পরিবহণ ব্যবস্থা সচল রাখার উপর জোর দেওয়া বিশেষ প্রয়োজন। পরিবহণ-কর্মী ও বাস-ট্যাক্সির মালিকরা যে-প্রতিবাদে শরিক হইতেছেন, তাহা ভাড়া বাড়াইতে না-দিবার প্রতিবাদে। জ্বালানির দর বাড়িতে থাকিবে, অথচ ভাড়া একই থাকিয়া যাইবে, ইহা হয় না। সরকারকে তাই জনসাধারণের উপর ‘বাড়তি বোঝা’ চাপাইবার ঝুঁকি লইয়াও বাস-ট্যাক্সির ভাড়ার পুনর্বিন্যাস করিতেই হইবে। পরিবহণ মালিক ও কর্মীদের ক্ষোভ প্রশমিত হইলে বন্ধ-এর সমগ্র আয়োজনটাই বানচাল হইবার কথা। অচলাবস্থার পূজারিরা তখন বাধ্য হইবেন প্রতিবাদের অন্য কোনও পন্থা উদ্ভাবন করিতে। জনসাধারণেরও দায়িত্ব আছে, প্রতিবাদের নামে কথায়-কথায় রাজ্যের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা স্তব্ধ করার অপপ্রয়াসে শামিল না হইয়া তাহার প্রতিরোধ করার। আজ অবধি কোনও বন্ধ মূল্যবৃদ্ধি রদে সফল হয় নাই, উপরন্তু বন্ধ-জনিত আর্থিক ক্ষতি জনসাধারণের উপর অতিরিক্ত বোঝা-ই চাপাইয়াছে। বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী বন্ধ-এর বিরোধিতায় উদ্যোগী। রাজ্যবাসী তাঁহার উদ্যোগে সহযোগিতা করুন।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.