বিশ্বকর্মাও এ বার ধর্মঘটে সওয়ার
বিশ্বকর্মার ঢাকে ধর্মঘটের কাঠি।
বাস-ধর্মঘটের ডাক তো ছিলই, তার উপরে একই দিনে পড়ল বিশ্বকর্মা পুজো। যাদের যুগলবন্দিতে সোমবার কলকাতা ও লাগোয়া এলাকার রাস্তা ছিল প্রায় গাড়িশূন্য। দিনভর নাকাল হলেন সাধারণ মানুষ। তবে এ দিন কিছুটা হলেও রেহাই দিয়েছে মেট্রো। তার চলাচলে কোনও ব্যাঘাত ঘটেনি।
ডিজেলের দাম বাড়ানোর বিরুদ্ধে এবং ভাড়া বাড়ানোর দাবিতে সোমবার থেকে লাগাতার ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে বেসরকারি বাস-মালিকদের সংগঠনগুলি। তাই এ দিন বেসরকারি বাস রাস্তায় নামেনি বললেই চলে। কিছু মিনিবাসের অবশ্য দেখা মিলেছে। মিনিবাস মালিকদের সংগঠনগুলি জানিয়েছে, অন্যান্য দিন ২৩০০ মিনিবাস রাস্তায় নামে। এ দিন তার থেকে তিনশো বাস কম চলেছে বিশ্বকর্মা পুজোর জন্য। সরকারি বাস চললেও তা যাত্রীর চাপ সামলানোর তুলনায় ছিল বেশ কম। বেসরকারি বাস বন্ধ থাকলেও দু’এক জন বাসমালিক অবশ্য এ দিন রাস্তায় বাস নামিয়েছিলেন। বিশ্বকর্মা পুজোর জন্য ট্যাক্সিও অনেক কম চলেছে।
বাস-ধর্মঘটের শহরে বাদুড়ঝোলা ভিড়। সোমবার।
সকালে সব চেয়ে দুর্ভোগে পড়ে স্কুলপড়ুয়ারা। সরকারি স্কুল বন্ধ থাকলেও অনেক বেসরকারি স্কুল খোলা ছিল। অনেক স্কুলে পরীক্ষাও ছিল এ দিন। যে সব পড়ুয়া স্কুলের গাড়িতে যাতায়াত করে না, স্কুলে পৌঁছতে বেগ পেতে হয় তাদের।
যদিও পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্রের দাবি, “সোমবার সকালের দিকে সরকারি বাস কিছু কম চললেও বেলা যত বেড়েছে, রাস্তায় সরকারি বাসের সংখ্যাও বেড়েছে।” তিনি আরও জানান, অন্য দিনের থেকে তিন-চারশোটি বেশি বাস চালিয়ে পরিস্থিতির মোকাবিলা করা হয়েছে। পড়ুয়াদের অনেকেই এ দিন স্কুলবাসে বা অভিভাবকদের মোটরবাইকে চেপে স্কুলে যায় বলে তিনি দাবি করেছেন।
নিত্যযাত্রীদের অভিজ্ঞতা অন্য রকম। তাঁদের অভিযোগ, সরকারি বাসও কম ছিল। তাঁদের আশঙ্কা, এ দিনের বাস-ধর্মঘট দুর্ভোগের শুরু। এ দিন স্কুল-কলেজ এবং অধিকাংশ কলকারখানা, অফিস বন্ধ থাকায় কাজের ব্যস্ততা তেমন ছিল না। বাস-মালিকেরা লাগাতার ধর্মঘটে নেমেছেন। আজ, মঙ্গলবার থেকে স্বাভাবিক কাজকর্ম শুরু হলে ভোগান্তি বাড়বে বলে আশঙ্কা।
সকাল ন’টা নাগাদ বি-বা-দী বাগ স্টেশনের কাছে দাঁড়িয়ে ছিলেন বিশ্বজিৎ রায় নামে এক প্রৌঢ়। বিশেষ কাজে ভবানীপুর যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু প্রায় আধ ঘণ্টা দাঁড়িয়েও বাস পাননি। কোনও মতে ট্যাক্সি ধরে গন্তব্যে রওনা দেন তিনি। দুপুর বারোটা নাগাদ বিরাটি থেকে বেলঘরিয়া যাওয়ার অটো পেতে লাইনে প্রায় ৪০ মিনিট দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে।
শুধু বিশ্বজিৎবাবুই নন, একই অভিজ্ঞতা বারাসতের সুদীপ পাল বা বিরাটির দেবাশিস ঘোষের। বেসরকারি অফিসের কর্মী এই যুবকেরা রোজ বাসে চেপেই মধ্য কলকাতার অফিসে যান। এ দিন তাঁদের মেট্রোয় পৌঁছতে হয়। বাস না মেলায় এ দিন বিভিন্ন মেট্রো স্টেশনের কাউন্টারে লম্বা লাইন পড়ে। বাস নেই এবং অটো অস্বাভাবিক ভাড়া চাইছে এই অভিযোগে এ দিন সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ উল্টোডাঙা মেন রোডে আধ ঘণ্টা পথ অবরোধ করেন ক্ষুব্ধ যাত্রীরা। সন্ধ্যায় এর সঙ্গে যোগ হয় বৃষ্টি। কার্জন পার্ক, রানি রাসমণি অ্যাভিনিউ, বি-বা-দী বাগ-সহ গোটা অফিসপাড়াতেই বাসের অভাবে অসংখ্য মানুষ আটকে পড়েন।
কোনও মতে...
পথে বাস নেই বললেই চলে। অগত্যা দুর্ভোগের যাত্রা।
কলকাতা ট্রাফিক পুলিশ জানায়, এ দিন বিশ্বকর্মা পুজো থাকায় রাস্তায় মানুষের ভিড় কম ছিল। তাই সপ্তাহের প্রথম দিনেও শহরের ব্যস্ত চেহারা ধরা পড়েনি। কিন্তু বেসরকারি বাস ধর্মঘট চলতে থাকলে আজ, মঙ্গলবার বা কাল, বুধবার থেকে নিত্যযাত্রীদের দুর্ভোগ বাড়তে পারে। বুধবার থেকে মিনিবাস-মালিকেরা ধর্মঘটে নামবেন কি না, তা আজ ঠিক করবেন তাঁরা।
‘মিনিবাস অপারেটর্স কো-অর্ডিনেশন কমিটি’র সম্পাদক অবশেষ দাঁ জানান, ভাড়া না বাড়ালে তাঁরাও ধর্মঘটে সামিল হতে পারেন। প্রশাসনিক কর্তারা বলছেন, মিনিবাস এবং ট্যাক্সি রাস্তায় না থাকলে মেট্রোর পক্ষে শহরের ভিড় সামাল দেওয়া সম্ভব নয়। মেট্রো সূত্রের খবর, এক দিনে সর্বাধিক ১৩৫ জোড়া মেট্রো চলতে পারে। যা এ দিনও চলেছে। ফলে অতিরিক্ত ভিড় হলেও ট্রেনের সংখ্যা আর বাড়ানো সম্ভব নয়। মেট্রোর ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (সাধারণ) প্রত্যুষ ঘোষ জানান, এ দিন সারা দিনে মেট্রোয় প্রায় চার লক্ষ যাত্রী যাতায়াত করেছেন।
ভাড়া বৃদ্ধির দাবি নিয়ে বাস-ট্যাক্সির মালিকেরা অনড় হলেও এ দিন তাঁদের পাল্টা হুমকি দিয়েছে সরকার। পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র বলেন, “যাঁরা বাস না চালিয়ে সাধারণ মানুষকে হয়রান করেছেন, তাঁদের পারমিট বাতিল করার চিন্তাভাবনা চলছে।” এ নিয়ে ‘জয়েন্ট কাউন্সিল অফ বাস সিন্ডিকেটস’-এর যুগ্ম সম্পাদক তপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “সরকার আইনবিরুদ্ধ কথা বলছে।” এ দিন সিপিএমের শ্রমিক সংগঠন সিটু-র পক্ষ থেকে পরিবহণ মন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। সিটু নেতাদের বক্তব্য, বাসমালিকেরা ধর্মঘট ডেকেছেন। কিন্তু তাতে চালক-খালাসিরা তাঁদের মজুরি পাবেন না কেন। মদনবাবু বিষয়টি নিয়ে পরোক্ষে সহমত পোষণ করেছেন বলেও মহাকরণ সূত্রের খবর।

—নিজস্ব চিত্র
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.