ছোট বেলা থেকেই একটা চোখে দেখতে পেতেন না। কলেজে পড়তে পড়তে সেই দৃষ্টিও হারান বাটানগরের প্রতীশ দত্ত। তবুও হার মানেননি তিনি। সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে অঙ্কে স্নাতক হওয়ার পরে আইআইটি-খড়্গপুরে ওই বিষয়ে স্নাতকোত্তরে ভর্তি হন প্রতীশ। স্নাতকোত্তরে সব বিষয়ের ছাত্রছাত্রীর মধ্যে সেরা হওয়ার জন্য শনিবার ওই প্রতিষ্ঠানের সমাবর্তনে সোনার পদক পেলেন প্রতীশ।
এ দিন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের হাত থেকে পদক নিতে প্রতীশ মঞ্চে ওঠেন তাঁর মা রঞ্জনাদেবীর হাত ধরে। পরে ওই ছাত্র বলেন, “ছেলেবেলা থেকেই মা পড়তেন, আর আমি শুনে শিখতাম। দু’চোখের দৃৃষ্টি চলে যাওয়ার পরেও সে ভাবেই পড়াশোনা করেছি।” |
প্রতীশ দত্ত।—নিজস্ব চিত্র |
এখন ‘ক্রিপ্টোলজি অ্যান্ড নেটওয়ার্ক সিকিউরিটি’ বিষয়ে আইআইটি-তেই গবেষণা করছেন তিনি। গবেষণা করে লেখাপড়ার জগতে থেকে যাওয়াটাই তাঁর ইচ্ছে। তাঁর কথায়, “দু’বছর ক্যাম্পাসে মা-ও থেকেছেন আমার সঙ্গে। এখনও থাকছেন।” কখনও ব্রেইল পদ্ধতির সাহায্য নেননি বলে জানান প্রতীশ। তাঁর কথায়, “কলেজে তো অনেক দিন পর্যন্ত কিছুটা দেখতে পেতাম। তা ছাড়া, ব্রেইল পদ্ধতিতে অঙ্কে কোনও সুবিধা হত না।”
সিনেমা প্রতীশের বিনোদনের প্রিয় মাধ্যম। অবশ্যই দেখে নয়, শুনে। শুনে শুনেই নায়ক-নায়িকার কণ্ঠস্বর আলাদা করে চিনতে পারেন তিনি। কখনও গান শোনায় মগ্ন হয়ে থাকেন। বিশেষ প্রযুক্তির সাহায্যেও কম্পিউটার ব্যবহারেও তৎপর খুব। মোবাইল ফোনেও যথেষ্ট স্বচ্ছন্দ।
প্রতীশের বাবা প্রবীরবাবু পেশায় সিভিল ইঞ্জিনিয়ার। এ দিন তিনি বলেন, “প্রতীশের সাফল্যের পিছনে ওর মায়ের অবদান অনেকখানি। ।”
আইআইটি-খড়্গপুরের রেজিস্ট্রার তপন ঘোষাল জানান, ক্লাসে সব সময় সকলের থেকে এগিয়ে থাকতেন প্রতীশ। তপনবাবু বলেন, “ক্লাসে যা পড়ানো হত, ও তা শুনে মনে রাখতে পারত।” |